ইংল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করতে বাংলাদেশের পুঁজি ১৫৮
২০১০ সালে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ৪-০ ব্যবধানে জিতেছিল। এই জয় হোয়াইটওয়াশ না বলে বিশ্বে ‘বাংলাওয়াশ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বড় কোনো দলের বিপক্ষে এ রকম সাফল্য সেটিই ছিল প্রথম। তাই ধারাভাষ্যকার আতাহার আলীর কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছিল ‘বাংলাওয়াশ‘ শব্দটি। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে একই রকম সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার জন্য পুঁজি দাঁড় করিয়েছে ২ উইকেটে ১৫৮। এখন বোলাররা যদি এই রানের ভেতর ইংরেজদের আটকে রাখতে পারেন, তাহলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ‘বাংলাওয়াশের’ দেখা পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের যে পুঁজি, তা কিন্তু শুরুর তুলনায় কমই। যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে করে রান দুইশ অতিক্রম না করলেও ১৮০/১৯০ রানের মতো হওয়ার কথা ছিল। কারণ প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে ৭৭। হাতে ৯ উইকেট। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান সেট হওয়া লিটন ও এবং নতুন আসা নাজমুল। লিটনের রান তখন ৪০, নাজমুলের ৫। ১৫ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশ সেই পথেই ছিল। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ তাল হারিয়ে ফেলে। এ সময় রান যোগ হয় মাত্র ২৭। বাউন্ডারি ছিল মাত্র ১টি। উইকেট হারায় ১টি লিটনের। আর এখানেই বাংলাদেশের লক্ষ্যচ্যুত হয়! ম্যাচ হারলে হয়ত এই ৫ ওভারই তখন কাঠগড়ায় দাঁড়াবে।
চলতি সিরিজে টানা পাঁচটি (তিনটি ওয়ানডে ও দুইটি টি-টোয়েন্টি) ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হবার পর শেষ ম্যাচে এসে সফল হয়। প্রতিবারই সফল হতে পারেনি লিটন আউট হয়ে যাওয়াতে। এবার আর লিটন আগে আউট হননি। তাই জুটিও আগে ভাঙেনি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে খেলে রান আসে বিনা উইকেটে ৪৫। এরপর ৭.৩ ওভারে ৫৫ রান আসার পর জুটি ভাঙে রনি তালুকদার আউট হলে। আদিল রশিদের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রনি ২২ বলে ৩ চারে ২৪ রান করে। এর আগে জোফরা আর্চারের বলে শর্ট থার্ডম্যাচে সহজ ক্যাচ দিয়েও রেহান আহমেদের বদন্যতায় সহজ ক্যাচ হাতছাড়া হলে জীবন পেয়েছিলেন রনি। তখন রান ছিল ১৭। কিন্তু এমন জীবনকে কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি। যে রিভার্স সুইপ তিনি খেলেছেন, তা না খেললেও পারতেন।
সিরিজে আগের ৫ ম্যাচে দুইটি ০ রানসহ লিটন ছিলেন পুরোটাই ব্যর্থ। তার বাকি ইনিংসগুলো ছিল ৯, ১২ ও ৭। গত বছর ব্যাটে হাতে দারুণ সময় পার করা লিটন তার সেই ব্যর্থতাকে চুইংগামের মতো আর লম্বা হতে দেননি। দাড়ি টেনে রানের খাতায় নাম লেখান। লিটনের রান স্রোতে যোগ দেন সিরিজে আবার দুর্দান্ত সময় পার করতে থাকা বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী নাজমুল হোসেন শান্ত।
দুই জনে খরস্রোতা নদীর মতো রান সংগ্রহ করতে থাকেন। ১০ ওভার শেষে রান ছিল ১ উইকেটে ৭৭। শতরান আসে ১২.২ ওভারে। দলীয় শতক পূরণ করা রানটি ছিল আবার লিটনের চলতি বছরের প্রথম আর ক্যারিয়ারের নবম হাফ সেঞ্চুরিও। বল খেলেন ৪১টি। বাউন্ডারি ছিল ৮টি।
লিটন-শান্ত জুটি বাঁধার সময় দলের রান ছিল ওভার প্রতি ৭.৫৩ করে। পরে সেটি আটের উপরে গিয়ে দাঁড়ায়। এক সময় তা গিয়ে ঠেকেছিল ৮.৭৩-এ। তখন দলের রান ছিল ১৫ ওভারে ১ উইকেটে ১৩১। জুটিতে ১০.৩ ওভারে ৮৪ রান যোগ হওয়ার বিচ্ছেদ আসে লিটন আউট হলে। আউট হওয়ার আগে লিটন খেলে যান তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। ৫৭ বলে ১ ছক্কা ও ১০ চারে ৭৩ রান করে ক্রিস জর্ডানের বলে ফিল সল্টের হাতে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন। তার আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ক্রাইস্টচার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯। তবে লিটন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস নাও খেলতে পারতেন যদি ৫১ রানে জোফরা আর্চারের বলে বেন ডাকেট সহজ ক্যাচ ফেলে না দিতেন।
১৫ ওভার শেষে যখন দলের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, তখন দলের রান দুইশ অতিক্রম না করলেও কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তা হতে পারেননি শেষ ৫ ওভারকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে। ১৬ থেকে ১৮ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি কেউ। এ সময় রান আসে ৫, ৩ ও ৫ করে মাত্র ১৩ রান। লিটন আউট হন ১৬ নম্বর ওভারের শেষ বলে। ১৮ নম্বর ওভারের প্রথম বলে জর্ডারকে নাজমুল বাউন্ডারি মেরে শেষ ২ ওভারকে কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর তারা পারেননি। এই ২ ওভারে রান আসে ১০ ও ৪।
এ সময় ইংল্যান্ডের বোলাররাও দারুণ বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের রান করতে দেননি। স্যাম কুরান ১৬ ও ২০ নম্বর ওভার বোলিং করে ৫ ও ৪ করে ৯ রান দেন। ক্রিস জর্ডান ১৭ ও ১৯ নম্বর ওভার বোলিং করেন। ১৭ নম্বর ওভারে ৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। ১৯ নম্বর ওভারে রান দেন ১০। ১৮ নম্বর ওভার জোফরা আর্চার বোলিং করে রান দেন ৫।
বোলারদের এ রকম নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নাজমুল ও সাকিবও সুবিধা করতে পারননি। নাজমুল হেসেন ৩৬ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ৪৭ ও সাকিব ৬ বলে ৪ রান করে অপরাজিত থাকেন।
জোফরা ২৩ রানে ও আদিল রশিদ ২১ রানে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/আরএ/