আসলেই কি সম্ভব ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা!
এটা কি কল্পনাকে হার মানানো ‘রূপকথা’র গল্প। স্বপ্নের ডানা মেলে ইচ্ছা মতো উড়ে বেড়াবে। মনের মাধুরী মিশিয়ে রং-তুলি দিয়ে ছবি আকবে। না কি আলাদীনের চেরাগ হাতে। ঘষা দিলেই মন যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে। না, এখানে নেই আলাদীনের চেরাগ। আর এটা কোনও রূপকথার গল্পও নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডেকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে দিবালোকের মতো সত্য। আকাশ থেকে নেমে আসা এই সুযোগকে পকেটে ঢুকাতে বাংলাদেশ দলকে যথাযথ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। তবেই ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামনে একটি বিরাট সুযোগ। যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলতেই পারে না। খায় হাবুডুবু। খেলা দেখে মনে হবে দুগ্ধ শিশু। যদিও এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল দারুণ। ২০০৫ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রচলন হওয়ার পর ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিল প্রথম ম্যাচ। শুরু করেছিল জয় দিয়ে। কেনিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও এসেছিল জয়। কিন্তু এরপর হারিয়ে ফেলে খেই। সেই হারিয়ে ফেলা খেই ফিরে পেতে বাংলাদেশ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছে । কিন্তু সন্ধান আর পাচ্ছে না। কিন্তু এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতার মাধ্যমে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবার ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে ফিরে পাওয়া পথে নতুন করে চলা শুরু করবে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে বাংলাদেশ নিজেদের হারিয়ে ফেলে সেখানে সাফল্যতো ভাবাই যায় না। তাই বড় দলগুলোকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ বাংলাদেশ আগে পায়নি বলা যায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পথ চলায় বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ করার কিছু সাফল্যও আছে। তবে একাধিক ম্যাচের সিরিজে সেগুলো বড় কোনো দলের বিপক্ষে ছিল না। আয়ারল্যান্ডকে ৩-০, জিম্বাবুয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে তিনটি সিরিজ বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করে জিতেছিল। অবশ্য ১ ম্যচের সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, পাকিস্তানের বিপক্ষে।
একাধিক ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা তিন প্রতিপক্ষের তুলনায় ইংল্যান্ড অনেক শক্তিশালী। তাদের নামের সঙ্গে আবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ ট্যাগ আছে। তাই এমন দলকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারা অনেক বড় অর্জন।
ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ বাংলাদেশের পাওয়া দুই জয় সর্বত্রে প্রশংসিত হচ্ছে। এই দুইটি জয়কে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আকাশে নতুন ভোরের সূচনা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন করে লেখা হবে। সেই নতুন ইতিহাস লেখার পথে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ নিজেদের ‘প্রসেস’ অনুসরণ করে ভালো ক্রিকেটে খেলার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ অবশ্যই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। আপনি দেখেন আমরা কিন্তু অবশ্যই জেতার জন্য নামি। কিন্তু জেতার আগে কিছু প্রসেস আছে, সেটা অনুসরণ করতে হয় আমাদের। আমরা যদি প্রসেস থেকে বেরিয়ে যাই তাহলে কখনও জিততে পারব না। আমরা যেভাবে চলছি, রুটিন আছে; আমরা ওইভাবেই চেষ্টা করব। আমরা কখনো আগে থেকে ফল নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি কীভাবে আমরা খেলব, কীভাবে প্ল্যানিং করব, কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলা যায়। রেজাল্ট আসবে দিনশেষে।’
ইংল্যান্ডেকে হোয়াইটওয়াশ করার যে অবরিত সুযোগ, সেটি হাতছাড়াও হতে পারে বাংলাদেশের পরীক্ষা- নিরীক্ষার কারণে। আগেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেতে চাইবে। যে কারণে আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা একাদশে একাধিক পরিবর্তনও হতে পারে।
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ১২ জন খেলোয়াড়কে খেলিয়েছে। না খেলার তালিকায় আছেন রেজাউর রহমান রাজা, তানভীর ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহান। প্রথম দুইজনের এখনও অভিষেক হয়নি। পূর্বাভাসে আছে নাসুমের পরিবর্তে তানভীর-রেজাকে সুযোগ দেওয়া হতে পারে তিন পেসারের যেকোনো একজনকে বসিয়ে। গোটা সিরিজে ভালা করতে না পারাতে লিটন দাসকে আজও খেলানো হবে। সেক্ষেত্রে নুরুল হাসান সোহানকে সুযোগ দিতে আফিফকে হয়তো একাদশের বাইরে চলে যেতে হতে পারে। আবার একাদশে তিন পরিবর্তন নাও হতে পারে। সর্বোচ্চ এক থেকে দুইটি পরিবর্তনও হতে পারে।
এমপি/এসআইএইচ