বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
২০০৫ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরু হয়। অথচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম খেলার সুযোগ পায় ২০২১ সালের বিশ্বকাপে। বিষয়টি অবাক করার মতোই। ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮ উইকেটে। সে সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশও দুঃসময় পার করছিল। এবার ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ঘায়েল করে জিতে নিয়েছে সিরিজ।
রবিবার (১২ মার্চ) মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজ জেতার ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৪ উইকেটে।
প্রথমে বোলারদের ক্ষুরধার বোলিংয়ে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ১১৭ রানে অলআউট করে। সিরিজ জেতার নেশায় মত্ত বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেই রান ১৮.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে অতিক্রম করে উল্লাসে মেতে উঠে। প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ চট্টগ্রামে জিতেছিল ৬ উইকেটে। সিরিজের শেষ ম্যাচ একই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ১৪ মার্চ মঙ্গলবার।
টার্গেট কম। যে কারণে তাড়াহুড়োর কিছু ছিল না বাংলাদেশের। উইকেট বাঁচিয়ে রেখে খেলতে পারলে জয় অনায়েসেই আসবে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেই সূত্র ধরেই এগোতে থাকে। তাই রানও এসেছে ধীরলয়ে। আবার উইকেট পড়লেও কখনো মড়ক লাগেনি। তাই গোটা ইনিংসে ৬ এসেছে ২টি, বাউন্ডারি ছিল ৯টি।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে মাত্র ৩২। উইকেট পড়ে ২টি। ফিরে যান ২ ওপেনার। লিটন সিরিজে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ম্যাচেও রান করতে পারেননি। ফিরে যান আগে ৯ বলে ৯ রান করে স্যাম কারানের বলে উইকেটের পেছনে ফিল সল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আগের ম্যাচে ভালো করা রনি তালুকদারও লিটনকে অনুসরণ করেন ১৪ বলে ৯ রান করে আর্চারের বলে মঈন আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে।
প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও বিপিএল মাতানো তৌহিদ হৃদয় জুটি বাঁধার পর আবার দুই ওপেনারের মতো অত ধীরে ব্যাটিং করেননি। জুটিতে ২৯ রান আসে ৫.১ ওভারে। জুটি ভাঙে তৌহিদ হৃদয় ১৮ বলে ২ চারে ১৭ রান করে আউট হলে। অভিষিক্ত রেহানের দ্বিতীয় বলেই তিনি তুলে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ক্রিস ওকসের হাতে।
তৌহিদ আউট হওয়ার পর নাজমুল ও মিরাজ জুটি বাঁধার পর রান আসে আরও দ্রুতলয়ে। জুটিতে ৪১ রান আসে ৫.২ ওভারে। এখানে ভূমিকা বেশি ছিল বল হাতে মাত্র ১২ রানে ৪ উইকটে নেওয়া মিরাজের। ১৬ বলে ২ ছক্কায় ২০ রান করে জোফরা আর্চারকে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মেলাতে না পারায় মিড উইকেটে আদিল রশিদের হতে ক্যাচ দেন মিরাজ। দলের রান তখন ১৫.৪ ওভারে ৪ উইকটে ৯৭। বাংলাদেশের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ২৮ বলে ৩১। কিন্তু সাকিব এসেই কোনো রান না করে মঈন আলীর বলে বড় শট মারতে গিয়ে সীমানার কাছাকাছি ক্যাচ দেন ক্রিস জর্ডানের হাতে। এটি ছিল তার অষ্টমবার শূন্য রানে আউট হওয়া। বাংলাদেশের যে টার্গেট ছিল তাতে সাকিব এরকম ঝুঁকি না নিলেও পারতেন। এরপর আফিফ এসেও একই ভুল করেন। জোফরা আর্চারের ১৪৮ কিলোমিটারের গতির বল স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ৩ বলে ২ রান করে।
৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বেশ বিপাকে। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩ বলে ১৩ রানের। উইকটে তখনো নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৯ রানে অপরাজিত থাকলেও অপরপ্রান্তে আর কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার নেই। ম্যাচ তাই যতটা স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ জিতবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা আর থাকেনি। কিন্তু তাসকিন এসে আর কোনো উত্তেজনা তৈরি হতে দেননি। তিনি ও নাজমুল মিলে আর্চারের করা ১৯তম ওভারের ৫ বলে ৩ চারে ১৫ রান করে সব টেনশন দূর করে দেন। প্রথম ম্যাচে ৫১ রান করে ম্যাচসেরা হওয়া নাজমুল তিনে নেমে ৪৭ বলে ৩ চারে ৪৬ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে বীরের বেশে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে তখন ৩ বলে ২ চারে ৮ রান করে অপরাজিত তাসকিন। বল হাতে ১২ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২০ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
জোফরা আর্চার ১২ রানে নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন স্যাম কারান, মঈন আলী ও রেহান আহমেদ।
এমপি/এসজি