১৭ বছরে মাত্র একবার!
বিষয়টি অবাক করার মতোই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে। অকল্যান্ডে সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয়ী হয়েছিল ৪৪ রানে। অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে ২১৪ রানের জবাব দিতে নেমে নিউ জিল্যান্ড ২০ ওভার খেলে ১৭০ রানে অলআউট হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় গত ১৭ বছরে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩টি । এর মাঝে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ১৪৪টি। অথচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে মাত্র একটি! তাও ১৬ বছল পর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল খুবই বাজেভাবে ৮ উইকেটে।
বাংলাদেশের জন্য খুবই বাজে বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করে তারা ১২৪ রান করেছিল। ইংল্যান্ড সেই রান তাড়া করেছিল ৩৫ বলে ও ৮ উইকেট হাতে রেখে।
যেহেতু ম্যাচ খেলেছে একটি। তাই কোনো সিরিজ খেলা হয়নি। সেই খরা কাটিয়ে এবার তারা প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছে প্রথম সিরিজ। তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু হবে আগামীকাল ৯ মার্চ চট্টগ্রামে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ না খেলার কারণ তাদের নাক উঁচু মনোভাব। দু্ই হাজার সালে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ইংল্যান্ডে বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে মাত্র পাঁচটি। এর মাঝে ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড যখন প্রথম বাংলাদেশে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে আসে, তখনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রচলন শুরু হয়নি। পরের চারটির দুইটি বাংলাদেশে ও দুইটি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সব সিরিজে ছিল না কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
ইংল্যান্ডের মতো নাক উঁচু মনোভাব অস্ট্রেলিয়ারও। এই দুইটি দেশই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমবার বিরোধিতা করেছিল। পরের বছর তাদের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পায়। কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ আতিথিয়েতা দিয়ে শুধুমাত্র একবার ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। সেখানে আবার ইংল্যান্ড উদার ছিল না।
টেস্ট ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে আবার অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ইংল্যান্ড অনেক বেশি উদার। ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে আতিথিয়েতা দিয়েছে দুইবার। খেলতে এসেছে তিনবার। সেখানে অস্ট্রেলিয়া একবার আতিথিয়েতা দিয়ে খেলতে এসেছে দুইবার। যেবারা তারা বাংলাদেশকে আতিথিয়েতা দিয়েছিল, সে বার তারা বাংলাদেশের খেলার ভেন্যু ঠিক করেছিল ডারউইন ও কেয়ার্নসের মতো অপিরিচিত ভেন্যুতে!
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মাঝে একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশ এভাবে একটি ম্যাচ খেলেনি। সবচেয়ে বেশি ২০টি ম্যাচ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৩টিতে জিতে হেরেছে ৭টিতে। এরপর বেশি ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮টি। জয় মাত্র ২টিতে। হারের সংখ্যা ১৬টিতে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে ১৭টি ম্যাচ। ৩টিতে জিতে ১৪টিতে হেরেছে। উইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ ম্যাচ
খেলে জয় এসেছে ৫টিতে। পরাজয় ৯টিতে। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে ১৩টি। জয় এসেছে ৪টিতে। হার ৯টিতে। ১২টি ম্যাচ খেলেছে ভারতের বিপক্ষে। জয় পেয়েছে একটিতে। বাকি ১১টিতে হার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলে ৪টিতে জিতে ৬টিতে হেরেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে ৯টিতে। জয় ৩টিতে। হার ৬টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ ম্যাচ খেলে সব কটিতে এসেছে হার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে ৩টিতে জিতে ১টিতে হেরেছে। অপর ম্যাচে পরিত্যক্ত হয়েছে।
আইসিসির সহযোগি দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি ৪টি ম্যাচ খেলেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। একটি ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছি। বাকি সব কটিতে আছে জয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ খেলে সব কটিতেই জয় পেয়েছে। ২টি করে ম্যাচ খেলেছে স্কটল্যান্ড ও ওমানের বিপক্ষে। ওমানের বিপক্ষে ২টি ম্যাচ জিতলেও স্কটল্যান্ডের কাছে ২টি ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ছাড়া একটি করে ম্যাচ খেলেছে কেনিয়া, নেপাল, হংকং, পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। এরমাঝে হংকংয়ের কাছে হেরে যায়। বাকি সবগুলোতে পেয়েছে জয়।
ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হলেও শেষ ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে বাংলাদেশ আছে ফুরফুরে মেজাজে। এবার পালা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। যদিও এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ভিত্তি মোটেই মজবুত নয়, নড়বড়ে। তারপরও ঘরের মাঠে খেলা বলে কথা। হোম গ্রাউন্ডের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে কাবু করেছিল ৪-১ ব্যবধানে। নিউ জিল্যান্ডও বধ হয়েছিল ৩-২ ব্যবধানে। এবার যদি ইংল্যান্ডকে সেই সত্রে ফেলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করার একটা জবাবও দেওয়া হয়ে যাবে!
এমপি/এসএন