ওসমান খানের সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রামের জয়
খুলনা টাইগার্সের হয়ে আজম খান সেঞ্চুরি করলেন। অপরাজিত থাকলেন ১০৯ রান করে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে সেই সেঞ্চুরির জবাব দেন ওপেনার ওসমান খান অপরাজিত ১০৩ রান করে। আবার তার ও ম্যাক্সওয়েল প্যাটট্রিকের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে সেঞ্চুরি, রান ১৪১।
রান ফোয়ারার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত আজম খানের সেঞ্চুরি বৃথা গেছে। জয় হয়েছে ওসমান খানের। ওসমান খান ও ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে খুলনার ৫ উইকেটে করা ১৭৮ রান মামুলি হয়ে উঠে। ফলে লম্বা রাস্তা পাড়ি দিতে তেমন কোনো প্রতিকূলতার মাঝে পড়তে হয়নি চট্টলার দলটিকে। যদিও রান পাড়ি দিয়েছে ৪ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে। দুই ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি ছিল প্রথম জয়। খুলনার দুই ম্যাচে দ্বিতীয় হার।
শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে টস জয় একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠে। রাতে সময় গড়ানোর সঙ্গে কুয়াশার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বল সঠিকভাবে গ্রিপে নেওয়া কিংবা ভালোভাবে ফিল্ডিং করা কিংবা ক্যাচ ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। তাইতো চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে প্রতিপক্ষকে অল্প রান আটকে রাখতে পারেননি। কিন্তু রান বেশি হলেও কন্ডিশনের কারণে পাহাড় মনে হয়নি। দুই ওপেনার ম্যাক্সওয়েল ও ওসমান খানের কারণে সেই রান হয়ে উঠে হাতের মুঠোয় বন্দী। দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে ১৫ ওভারে ১৪১ রান দলের বড় জয়ে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই হাতে ৯ উইকেট নিয়ে শেষ ৫ ওভারে ৩৭ রান করতে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। ৪ বল হাতে রেখেই জয় পেয়ে যায় তারা।
বড় রান তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার ম্যাক্সওয়েল প্যাটট্রিক ও ওসমান খান শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। তবে তুলনামূলক কিছুটা মন্থর ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। যে কারণে এক সময়ে রান সংগ্রহে পিছিয়ে পড়া ওসমান খান তাকে ছুঁয়ে ফেলেন। তারপর দুইজনেই এগুতে থাকেন সমান তালে। পরপর দুই বলে তারা দুইজনেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তবে ম্যাক্সওয়েলকে পেছনে ফেলে আগে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওসমান খান। পরের বলেই হাফ সেঞ্চুরি করেন ম্যাক্সওয়েল। ওসমান খান হাফ সেঞ্চুরি করেন যেখানে ৩৪ বলে, সেখানে ম্যাক্সওয়েল হাফ সেঞ্চুরি করেন ৪৬ বলে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলও হাত খুলে খেলতে থাকেন। যে কারণে একপর্যায়ে তার রান ও বলের ব্যবধান কম থাকলেও পরে তা বেড়ে যায়।
দুইজনে পাওয়ার প্লেতে সংগ্রহ করেন ৫০ রান। শতরান আসে ৭৫ বলে। এসময় ওসমান খানের রান ছিল ৪৬, ম্যাক্সওয়েলের ৪৫। হাবিবুরের করা ইনিংসের ১৩তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে ওসমান খান হাফ সেঞ্চুরি করার পর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ম্যাক্সওয়েলও বাউন্ডারি মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। দুইজনেই হাফ সেঞ্চুরি করার পর জয়ের জন্য দলীয় রানের সঙ্গে বলের ব্যবধান আরও কমিয়ে আনার দিকে মনযোগী হন বেশি। দুইজন যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে ১০ উইকেটে জয় পাওয়া ময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। সাইফউদ্দিনের সেই ওভারে দুইজন মিলে ১৮ রান নেওয়ার পর নাহিদুলের করা ১৫তম ওভারে ২ ছক্কায় ১৫ রান নিয়ে শেষে বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েল আউট হয়ে যান নাসুমের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৫০ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে তিনি ৫৬ রান করেন। জুটি ভাঙে ১৪১ রানে। এটি বিপিএলে উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল যথাক্রমে খুলনার হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে ২০১৭ সালে টিম ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফিসের অবিচ্ছিন্ন ১৯৭ রান, ২০২২ সালে খুলনার হয়ে কুমিল্লার বিপক্ষে আন্দ্রে ফ্লেচার ও মেহেদি হাসানের অবিচ্ছিন্ন ১৮৪, একই বছর ঢাকার হয়ে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শেহজাদের ১৭৩ রান ও ২০১২ সালে বরিশালের হয়ে খুলনার বিপক্ষে ক্রিস গেইল ও আহমেদ শেহজাদের অবিচ্ছিন্ন ১৬৭ রান।
ম্যাক্সওয়েল হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরে গেলেও ওসমান খান সেঞ্চুরি করেই ফিরেন। ১৫ ওভার শেষে তার রান ছিল ৭৪। দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৮ রানের। সেঞ্চুরি করতে হলে এই ৩৮ রানের ২৬ রানই তাকে করতে হবে। পরে তিনি তাই করে দেখান। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা ওসমান খান ১৫ ওভার শেষে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। ২টি করে আরও চার ও ছক্কা মেরে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সেঞ্চুরি আসে ছক্কায়। ৩৪ বলে প্রথম ফিফটি করলেও পরের ফিফটি করতে বল খেলেন ২১টি। শেষ পর্যন্ত তিনি ৫৮ বলে ৫ ছক্কা ও ১০ চারে ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে ১০ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন আফিফ।
এমপি/এসজি