জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দর্পচুর্ণ
একের পর ক্রিকেট বিশ্বের দুর্বল থেকে শুরু করে পরাক্রমশালী দলগুলোকে হারিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের নিয়ে গিয়েছিল অনেক চূড়ায়। কিন্তু তাদের সেই চূড়া থেকে মাটিতে নামিয়ে আনল অপেক্ষাকৃত দুর্বল জিম্বাবুয়ে। ভেঙ্গে গেলো ওয়ানডে ক্রিকেটেরও দম্ভ। হয়নি জেতা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ২০ জয়।
সিকান্দার রাজা (অপরাজিত ১৩৫) ও ইনোসেন্ট কাইয়ার (১১০) জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের করা দুই উইকেটে ৩০৩ রান তারা টপকে যায় ৪৮.২ ওভারে পাঁচ উইকেটে ৩০৭ রান করে। সিরিজে তারা এগিয়ে গেল তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৭ আগস্ট হারারেতেই।
তিনশোর্ধ্ব রানের বেশি করে বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার নজির এটি তৃতীয়। এর আগে ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে মিরপুরে বাংলাদেশ তিন উইকেটে ৩২৬ রান করেও পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল তিন উইকেটে। ম্যাচে এনামুল হক বিজয় সেঞ্চুরি (১০০) করেছিলেন। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওভালে বাংলাদেশ ছয় উইকেটে ৩০৫ রান করে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল আট উইকেটে। এই ম্যাচে তামিম ইকবাল করেছিলেন ১২৮ রান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে তিনশোর্ধ্ব রান তাড়া করে জয়ের প্রথম নজির গড়লেও এটিই তাদের প্রথম নয়। এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের দৃষ্টান্ত আছে তাদের। ২০১১ সালে বুলাওয়েতে রস টেলর (১১৯), কেন উইলিয়ামসনের (১০০*) জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউ জিল্যান্ডের করা ৩২৮ রান তারা অতিক্রম করেছিল এক বল বাকি থাকতে ৯ উইকেট হারিয়ে। ম্যালকম ওয়েলার ৯৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ২০১৭ সালে গলেতে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেটে করা ৩১৬ রান জিম্বাবুয়ে পাড়ি দিয়েছিল সোলেমান মিরের ১০২ রানের ইনিংসের সুবাদে ছয় উইকেটে। ২০১৫ সালে হারারেতে তারা আবার নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ৩০৩ রান টপকে। রস টেলরের ১১২ রানের সুবাদে নিউ জিল্যান্ড চার উইকেটে করেছিল ৩০৩ রান। জিম্বাবুয়ে সেই রান পাড়ি দিয়েছিল ক্রেইগ আরভিনের অপরাজিত ১৩০ রানে ভর করে। এবার বাংলাদেশকে নিয়ে আসল সেই কাতারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে জয় পেল ৯ বছর ও ১৯ ম্যাচ পর জয়।
লিটন দাস (৮১ রিটায়ার্ড), এনামুল হক বিজয় (৭৩), তামিম ইকবাল (৬২) ও মুশফিকুর রহিম (৫২*) চারটি হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের করা দুই উইকেটে ৩০৩ রান জিম্বাবুয়ের মতো দল যে এভাবে পাড়ি দিবে তা ছিল বিস্ময়কর। একে তো তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সেখানে আবার নেই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তারপরও আবার তারা দুই ওভারে ছয় রানে হারিয়েছিল দুই ওপেনার অধিনায়ক রেজিস চাকাভা ও থ্রিসাই মুসাকন্দাকে। মোস্তাফিজ ও শরিফুল এনেছিলেন এই আঘাত। বাংলাদেশের আরেকটি রাজত্ব তৈরি হওয়ার পথে। জিম্বাবুয়ের সামনে আরেকটি বড় হারের শঙ্কা। ৬২ রানে ওয়েসলি মোধেভেরে ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের অংক আরও মেলাতে শুরু করে। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সেই অংক মেলাতে দিতে রাজি ছিল না। কারণ তাদের যে আছে একজন সিকান্দার রাজা। তিনি দাঁড়িয়ে যান। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান ইনোসেন্ট কাইয়াকে। ৬২ রানে দুজন জুটি বেঁধে ধীরে ধীরে দলের ভীত মজবুত করে দলকে জয়ের পথ দেখান। দুজনে যখন বিচ্ছিন্ন হন তখন জিম্বাবুয়ের আকাশ থেকে কেটে গেল হারের কালো মেঘ। উঁকি দিচ্ছে জয়। জুটিতে রেকর্ড ১৯২ রান যোগ করেন তারা। দুজন সেঞ্চুরিও করেন একই ওভারে। ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয়। ইনোসেন্ট কাইয়া ১১৫ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক তুলে নেওয়ার পর আউট হন ১১০ রানে। কিন্তু সিকান্দার রাজা দলকে জয়ী করেই মাঠ ছাড়েন। মোসাদ্দেকের বল ছক্কা মেরে গর্জন করে উঠেন জয়ের আনন্দে। জয়ের পথ দেখার আগে তাদের হারাতে হয়েছিল লুক জংওয়ের উইকেটও। তিনি ১৯ বলে করেন ২০ রান। সিকান্দার রাজার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি আসে ৮১ বলে। তিনি শেষ পর্যন্ত ১০৯ বলে আটটি করে চার ও ছক্কা মেরে ১৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৩ রানে তিনি একবার জীবন পেয়েছিলেন তাসকিনের বলে তাইজুলের হাতে। ম্যাচ সেরা হন তিনি।
এদিন বাংলাদেশের পেসার ও স্পিনার কেউই ভালো বল করতে পারেননি। সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া। দুই সেঞ্চুরিয়ান একাধিকবার জীবন পেয়েছেন। যার খেসারত দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে। মোস্তাফিজ ৫৭, শরিফুল ৫৭, মিরাজ ৫৯ ও মোসাদ্দেক ৬৭ রানে একটি করে উইকেট নেন।
এমপি/এসজি/