ফুটবল থেকে সাময়িক অবসরে সাইফ স্পোর্টিং
প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। বুধবারই সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব মহাখালি তাদের মহাখালি করপোরেট অফিসে সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতেই আবার সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়। কী কারণে সংবাদ সম্মেলন আর কেনই বা স্থগিত করা হলো তার কারণ অবশ্য ক্লাব থেকে জানানো হয়নি। কিন্তু বুধবার বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাতাসে ভাসতে থাকে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ফুটবলের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে নিজেদের সাময়িকভাবে গুটিয়ে নিচ্ছে। এটা জানিয়ে তারা বাফুফেকে চিঠিও দিয়েছে সভাপতি বরাবরে। প্রিমিয়ার লিগ ছাড়াও দ্বিতীয় বিভাগ লিগেও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের একটি দল খেলে থাকে।
সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব সাইফ পাওয়ারটেকের ক্লাব। হঠাৎ করে তাদের এভাবে সরে যাওয়াটা ফুটবলের জন্য অশনি সংকেত। কারণ প্রিমিয়ার লিগে তারা বিগ বাজেটের দল গড়ে থাকে। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুইয়াসহ পাঁচ/ছয় জন ক্রিকেটার খেলে থাকেন ক্লাবটিতে। চলতি মৌসুমে তারা লিগে তৃতীয়ে হয়েছে। এভাবে সরে যাওয়া নিয়ে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কর্ণধার এবং ক্লাবটির পরিচালনাকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রহুল আমিন বলেন, ‘বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমাদের পক্ষে ফুটবলের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সাময়িকভাবে ফুটবলের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে যাচ্ছি।’ তাদের এ সরে যাওয়া সাইফ পাওয়ারটেকের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সভায় নেওয়া সিন্ধান্তের কথা জানিয়ে তরফদান রুহুল আমিন বলেন, ‘ আমাদের বোর্ড অব ডিরেক্টর্স জরুরি সভা করে আমরা এ সিন্ধান্ত নিয়েছি। ফুটবল চালাতে হলে অনেক সময় দিতে হয। যা আমরা সেভাবে দিতে পারছি না। তাই এভাবে সরে যাওয়া।
ঘরোয়া ফুটবলে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে। দেশের প্রথম কোনো করপোরেট হাইজের ক্লাবও ছিল তারা। তাদের সরে দাঁড়ানোতে ঘরোয়া ফুটবলে বিরাট এক শূন্যতা দেখা দিবে। ফুটবল থেকে সরে গেলেও দাবাসহ ক্রীড়ঙ্গণের অন্যান্য জায়গায় তারা থাকবে বলে জানান তরফদার রুহুল আমিন। তিনি চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে নিজের যে সম্পৃক্ততা আছে তা থাকবে বলেও জানান।
সাইফ স্পোর্টিংয়ের সরে যাওয়া নিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব থেকে চিঠি পেয়েছি। বাফুফে সভাপতি বরাবর একটা চিঠি তারা দিয়েছে। সেখানে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড বলেছে, ফুটবলীয় কার্যক্রমে সাময়িকভাবে অংশগ্রহণ করছে না। তাদের যুব দলটাও দ্বিতীয় বিভাগ লিগে খেলে থাকে। তারা আসলে ফুটবলের সব কার্যক্রম থেকেই বিরতি নিচ্ছে।’ সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছে করোনা পরবর্তি বৈশ্বিক ব্যবসা-বানিজ্যের পরিস্থিতিকে। চিঠিতে বাফুফের ফুটবল কার্যক্রমেরও প্রশংসা করা হয়েছে বলে জানান আবু নাঈম সোহাগ।
সাইফ স্পোর্টিং না খেলাতে প্রিমিয়ার বিভাগ ফুটবল লিগে দলের সংখ্যাও কমে যাবে। নিয়ম অনুযায়ী দুইটি ক্লাব স্বাধীনতা সংঘ ও উত্তরা বারিধারা ক্লাবের অবনমন হয়েছে। উঠে আসবে আবার দুইটি। কিন্তু সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের শূন্যস্থান পূর্ণ হবে কী ভাবে? জানতে চাওয়া হলে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো মৌসুমেই আমাদের কোনো দলই কিন্তু নিশ্চিত নয়। প্রতি বছরই দলগুলোকে ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের জন্য আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাবগুলোকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তার আলোকে ক্লাবগুলো লিগ খেলে থাকে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রফেশনাল লিগের আদল, কাঠামো এবং যে বৈশ্বিক নিয়ম কানুন, আমরা যেমন বাফুফে ক্লাব লাইন্সেসিংটা ফলো করি। ক্লাব লাইন্সেসিংটাই বলে দেবে ক্লাব কতটা সামনে এগুতে পারে। সেই আলোকে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং পরের মৌসুমকে সামনে রেখে আমাদের ক্লাব লাইসেন্সিং উইনডো ওপেন হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দলকে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে আগামী মৌসুমে কারা কারা খেলছে।’
ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বাফু্ফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ বছর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে যারা উঠবে তারা স্পোর্টিং মেরিট অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য যোগ্য। তবে তারা যদি ক্লাব লাইসেন্সিং না করে এবং শর্তপূরণ না করে তাহলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হলেও প্রিমিয়ার লিগ খেলতে পারবে না। কারণ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হওয়া প্রিমিয়ার লিগে খেলার একটা শর্ত। তাই বলবো ক্লাব লাইসেন্সিং শেষ হওয়ার পর আমরা বুঝতে পারবো কারা থাকছে প্রিমিয়ার লিগে।’
এমপি/