অধিনায়ক হয়েই মোসাদ্দেকের সামনে সিরিজ জেতার চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে এক সময় একটি বিজ্ঞাপন ছিল ‘এক কলমে মাইল পার’। এই বিজ্ঞাপনটি যেন মোসাদ্দেকের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার কথাকেই মনে করিয়ে দেয়। জাতীয় দলে অনিয়মতি। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অবসর, বিশ্রাম আর ছুটির কারণে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় মোসাদ্দেকের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই তিনি চার ওভারে ২০ রান দিয়ে বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট নিয়ে নিজের উপর ফোকাস নিয়ে আসেন। হন ম্যাচ সেরা। তার এমন পারফরম্যান্সের পরও সিনিয়র তিন ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক আর সাকিব দলে ফিরলে তার সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়াটা অনিশ্চিত? কিন্তু এই এক ম্যাচের পারফরম্যান্সেই তার সৌভাগ্যের দরজা আরও খুলে যায়। যাকে বলে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। ইনজুরি নুরুল হাসান সোহানের সর্বনাশ ডেকে আনলেও মোাসদ্দেকের জন্য পৌষ মাস হয়ে যায়। সোহানের নেতৃত্বের ভার দেওয়া হয় তার উপর। যদিও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। তারপরও এক ম্যাচের জন্য দায়িত্ব পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনালেই তাকে নিতে হবে নেতৃত্বের এই কঠিন চ্যালেঞ্জ। সিরিজ জিততে মরিয়া বিসিবির কর্তারা। যে কারণে সোহানের নেতৃত্বের ঘাটতি মোসাদ্দেককে দিয়ে পূরণ করা হলেও ব্যাটসম্যান সোহানের ঘাটতি পূরণ করতে দলের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে। যাকে এই সফরে পাঠানো হয়েছিল বিশ্রামে! মাত্র দুই ম্যাচেই শেষ হয়েছে তার বিশ্রাম!
গত বছর জিম্বাবুয়ে সফরেও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল শেষ ম্যাচ জিতে। গতবার প্রথম ম্যাচ জেতার পর হেরেছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। এবার প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৭ রানে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ হেসে-খেলে সাত উইকেটে জিতে সমতা এনেছে।
প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে টস জিতে ব্যাট করে তিন উইকেটে ২০৫ রানের পাহাড় গড়ে ম্যাচ জিতেছিল। তবে বাংলাদেশও ছেড়ে কথা বলেনি। ছয় উইকেটে ১৮৮ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেকের স্পিন ভেল্কিতে (৪-০-২০-৫) জিম্বাবুয়েকে আট উইকেটে ১৩৫ রানে আটকে রেখে ম্যাচ জিতেছিল সাত উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভিন্ন উইকেটে। যতোটুকু জানা গেছে আজকের ম্যাচ হবে আবার প্রথম ম্যাচের উইকেটে। তার মানে আজকের ম্যাচেও টস গুরুত্বপূর্ণ। জিতলেই আগে ব্যাটিং। প্রথম দুই ম্যাচেই টস জিতেছিল জিম্বাবুয়ে।
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে ছিল দুটি পরিবর্তন। আজকের ম্যাচেও একাধিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশের অনেক পরিকল্পনা রদ-বদল করতে হবে। এক নুরুল হাসান সোহানের শূন্যতা পূরণ করতে হবে তিনজনকে দিয়ে। অধিনায়কত্ব পূরণ করা হবে মোসাদ্দেককে দিয়ে। কিপিং পূরণ করার সম্ভাবনা বেশি লিটন দাসের। এখানে এনামুল হক বিজয়ের নামও বিবেচনায় আছে। আর ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের অভাব দূর করা হবে মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে।
এই তিনটি জায়গা পূরণ করতে একাদশের বাইরে থেকে ঢুকবেন শুধু মাহমুদউল্লাহ। মোসাদ্দেক আর লিটনতো একাদশেই আছেন। এদিকে তিন পেসারের কেউই ভালো করতে না পারাতে এবং স্পিনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা মোটা দাগে ধরা পড়ার পর আজ আর তিন পেসার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা কম। তাই পেসার একজন কম খেলিয়ে স্পিনার বাড়ানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরিফুলের বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার মোস্তাফিজকে বিশ্রামও দেওয়া হতে পারে। একাদশে আবার ফিরতে পারেন নাসুম আহমেদ। আবার কে জানে ব্যাটিং লাইন আরও লম্বা করতে মেহেদি হাসান মিরাজও তিন বছর আট মাস পর ফিরতে পারেন একাদশে। পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে ব্যাটিং অর্ডারেও। ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও মিডল অর্ডারে খেলা এনামুল হক বিজয় প্রথম দুই ম্যাচে মোটেই ভালো করতে পারেননি। দুই জনের যে কোনো একজন বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি। মুনিম শাহরিয়ার বাদ পড়লে অভিষেক হবে পারভেজ হোসেন ইমনের। তিনি জুটি বাধতে পারেন লিটন দাসের সঙ্গে। আর এনামুল হক বিজয় বাদ পড়লে তখন ব্যাটিং অর্ডারে অনেক রদ-বদল করতে হবে। আবার এমন্রও হতে পারে এই দুইজনই বাদ পড়তে পারেন। তখন পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে মেহেদি হাসান মিরাজও একাদশে ফিরতে পারেন। মিরজের ব্যাটিং আর অফ স্পিনও কাজে লাগতে পারে। যদি উইকেটে বেশি করে স্পিন ধরে তা’হলে মোসাদ্দেক-শেখ মেহেদি-মিরাজ-নাসুমকে দিয়ে গড়ে উঠবে স্পিন আক্রমণ।
সবচেয়ে বড় কথা এক নুরুল হাসান সোহানের ইনজুরিতে আজকের সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে দেখা যাবে! পরিকল্পনায় যাই হোক সিরিজ জেতাটা মূখ্য। দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার জেতার পর সাংবাদিকদের মোসাদ্দেক জানিয়েছিলেন, ‘শেষ ম্যাচে আমরা যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারি এবং এই ম্যাচে (দ্বিতীয় ম্যাচ) যা করেছি, তা যদি আবার করতে পারি, এখান থেকে সিরিজ জেতা সম্ভব।’ পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও বলেছেন সিরিজ জেতার কথা। তিনি জানান, আজকের ম্যাচটি অলিখিত ফাইনাল। প্রথম ম্যাচ যে পিচে হয়েছে, সেই পিচেই খেলা হবে। আমরা আবারো আমাদের সেরাটা দিয়ে জিততে চাই। আমরা সে অপেক্ষায়ই আছি।
এমপি/আরএ/