দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আজ
ভুল শোধরানোর সময় কোথায় বাংলাদেশের
কাটেনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্দশা। মুক্তি পেতে অধিনায়ক বদল। সিনিয়রদের বিশ্রামে। তরুণদের নিয়ে প্যাকেজ। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল জিম্বাবুয়ে হওয়াতে একটু পরখ করে নেওয়া। কিন্তু তার কোনো কিছুই হয়নি। কাটেনি দুদর্শা। মেলেনি মুক্তি।
নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলেন নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলবেন। এটি বাংলাদেশের পুরানো থিউরি। ম্যাচ শেষে তার মুখ দিয়ে যে কথাগুলো বের হয়েছে সেগুলোও বাংলাদেশের পুরানো সংস্কৃতিই!। কথা শুনে মনে হবে শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। অতীতে এই দায়িত্ব পালন করা অধিনায়কদের কথা নতুন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের কণ্ঠে ‘এডিট’ করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তা কী বলেছেন নুরুল হাসান সোহান। প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে পরের ম্যাচে কাজে লাগানো। আবার প্রথম ম্যাচের পজেটিভ বিষয়গুলোও কাজে লাগানো হবে পরের ম্যাচে।
তারুণ্যে ভরসা রাখতে গিয়ে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে ফেলে (২০৫/৩)। কিন্তু জিম্বাবুয়ে যে এতো রান করে ফেলবে ১৫ ওভার পর্যন্ত তার কোনো আলামত ছিল না। এ সময় তাদের রান ছিল তিন উইকেটে ১২৮। সেখান থেকে ২০৫। তার মানে শেষ পাঁচ ওভারে ৭৭ রান।
এই পাঁচ ওভারে রান আসে ১২, ১৩, ১৪, ১৯ ও ১৯। বোলার ছিলেন যথাক্রমে শরিফুল, তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল ও মোস্তাফিজ। বলা যায় এই পাঁচ ওভারেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। কারণ এই পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ ৬, ১৪, ১৪, ৪ ও ১০ সংগ্রহ করে ৪২ রান। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও ম্যাচ শেষে বলেছেন শেষ পাঁচ ওভারের কথা, ‘ডেথ ওভারে শেষ পাঁচ/ছয় ওভারে খুব ভালো জায়গায় বল করতে পারেনি।’
শেষ পাঁচ ওভারের হিসেব বাদ দিলে তার আগ পর্যন্ত সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। পাওয়ার প্লেতে জিম্বাবুয়ের রান ছিল এক উইকেটে ৪৩, সেখানে বাংলাদেশের রান এক উইকেটে ৬০। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল তিন উইকেটে ৮৬, জিম্বাবুয়ের দুই উইকেটে ৭৪। ১৫ ওভার শেষেও বাংলাদেশ রান সংগ্রহে জিম্বাবুয়ের চেয়ে এগিয়েছিল। জিম্বাবুয়ের রান ছিল তিন উইকেটে ১২৮, বাংলাদেশের চার উইকেটে ১৪০। সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায় শেষ পাঁচ ওভারে গিয়েই। আর এই পাঁচ ওভারই করেছিলেন তিন পেসার মোস্তাফিজ-শরিফুল-তাসকিন।
জিম্বাবুয়ে যেমন দুইশোর্ধ রান করার আলামত ছিল না ১৫ ওভার শেষে, তেমনি বাংলদেশও যে মাত্র ১৭ রানে হারবে তারও কোনো সম্ভাবনা ছিল না। ছিল বড় হারের শঙ্কা। কিন্তু নতুন কাপ্তান নুরুল হাসান সোহান আসার পর মারমুখি ব্যাটিং করে দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন। জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। ১৯ নম্বর ওভারে মাত্র চার রান আসলে শেষ ওভারে ২৮ রানের টার্গেট আর ঘুচানো সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক বলেন, ‘দুইশ রান চেজ করা বড় ব্যাপার। ড্রেসিং রুমে যখন আসলাম বিশ্বাস ছিল চেজ করতে পারবো। উইকেট ভালো ছিল।’
ওভার বাই ওভারের এ রকম তুলনামূলক বিশ্লেষণ ছাড়াও সেরা একাদশ গঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। মুনিম শাহরিয়ার অভিষেকের পর টানা তিন ম্যাচ খেলে ভালো করতে না পারার কারণে উইন্ডিজ সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে বাদ পড়ে যান। এরপর তিনি মাঝে আর কোনো ম্যাচ না খেলেই আবার সেরা একাদশে ফেরেন জিম্বাবুরে বিপক্ষে। আবারও তিনি ব্যর্থ হন। প্রশ্ন আসতে পারে, ব্যর্থতার কারণে বাদ দিলে কোন যাদুমন্ত্রের বলে মুনিম শাহরিয়ার আবার সেরা একাদশে। প্রশ্ন আসবে এনামুল হক বিজয়কে নিয়েও। ঘরোয়া ওয়ানডে ক্রিকেটে হাজার রান করে জাতীয় দলে ফিরলেও তাকে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলানো হয়নি। খেলানো হচ্ছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি। যেখানে উইন্ডিজের পর জিম্বাবুয়েতে প্রথম ম্যাচেও তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে তার ২৭ বলে ২৬ রান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার সামর্থ্য নিয়ে বিশাল এক প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দেয়? নুরুল হাসান সোহান বলেছেন কিছু জায়গায় উন্নতি করে পরের ম্যাচ নামবেন। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে এখানে কোনো পরিবর্তন আসে কি না সেটাই দেখার বিষয়?
প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংও ভালো হয়নি। নুরুল হাসান সোহান আলাদাভাবে এ সব দেখতে চান না। তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো কিছু কারণ দেখতে চাচ্ছি না। ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন, ফিল্ডিং, সব আমরাই। যেটাই করি আমাদেরই ভালো করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উইকেট ভালো ছিল। ১৫ রান কম হলে ম্যাচ অন্য রকম হতে পারত। কিছু জায়গা আছে যেখানে উন্নতি করে পরের ম্যাচে আমরা খুব ভালোভাবে ফিরে আসব।’
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে। প্রথম ম্যাচ শেষে নুরুল হাসান সোহান যে বাণী শুনিয়েছেন, তা কিভাবে তিনি বাস্তবায়ন করবেন তাই দেখার বিষয়।
এমপি/আরএ/