মাশরাফিকে ধরে রেখে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সেরা সংগ্রহ তানভীর ইসলাম
প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেটে যে কয়টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দল আছে তাদের মাঝে অন্যতম লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তাদের আবির্ভাবটা ছিল বেশ জাকজমকপূর্ণ। ২০১৩ সালে প্রিমিয়ার বিভাগের ক্লাব চ্যাম্পিয়ন গাজী ট্যাঙ্ক ক্রিকেটার্সকে কিনে নাম পরিবর্তন করে লিজন্ডস অব রূপগঞ্জ নামে ২০১৪ সাল থেকে সরাসরি খেলছে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। এই নাম পরিবর্তনের আয়োজন ছিল চোখ ধাঁধানো। ভারতের লিটল মাস্টার শচিন টেন্ডুলকারকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল ক্লাবের যাত্রা লগ্নের আনুষ্ঠানিকতায়। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর হোটেল সোনারগাওয়ে করা হয়েছিল সেই আয়োজন। তার আগে শচিন টেন্ডুলকারকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রূপগঞ্জে। সেখানেও ছিল আনুষ্ঠানিকতা। রূপগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার কারণ ছিল ক্লাবটির কর্ণধার লুৎফুর রহমান বাদলের নিজ এলাকা।
লিজন্ডস অব রূপগঞ্জ আবির্ভাবের পর থেকেই দেশ সেরা তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে শিরোপার জন্য অবতীর্ণ হয়। আবির্ভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
বর্তমানে রানারসার্প তারা। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগের উত্তেজনা, গুরুত্ব ঘরোয়া অন্য যেকোনও আসরের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এক মৌসুম শেষ হতে না হতেই পরের মৌসুমের জন্য দল গড়ার কাজ সম্পন্ন করে এক একটি ক্লাব। এবারের লিগ শেষ হয়েছে ২৮ এপ্রিল। পরের মৌসুমের লিগ শুরু কিংবা দল-বদলের তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি সিসিডিএম (ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্টোপলিশ)। কিন্তু শিরোপা প্রত্যাশি দলগুলো তাদের দল গড়ার কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছে। পছন্দের ক্রিকেটারদের দলে নিয়ে নিজেদের মাঝে চুক্তি সম্পন্ন করে রেখেছে।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে গতবার খেলেছিলেন জাতীয় দলের দুই তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি ও সাকিব। সাকিব অবশ্য শুরুতে দলে ছিলেন না। সাকিব স্বাক্ষর করেছিলেন মোহামেডানে খেলার জন্য। কিন্তু জাতীয় দলে ব্যস্ততার কারণে তিনি লিগের প্রথম পর্বে মোহামেডানের হয়ে কোন ম্যাচই খেলার সুযোগ পাননি। পরে মোহামেডান আবার সুপার লিগে উঠতে পারেনি। তাই তার আর কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি মোহামেডানের পক্ষে। তার মতো করে একই অবস্থা হয়েছিল মোহামেডানের আরও দুই ক্রিকেটার মুশফিক ও মিরাজের। মুশফিক ও মিরাজ পরে খেলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। আর সাকিব খেলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে। এই দুই ক্লাবই পরে চ্যাম্পিয়ন ও রার্নাসআপ হয়েছিল।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ আগামী মৌসুমের জন্যও শিরোপা জেতার মতো দল গড়ার কাজ সম্পন্ন করে রেখেছে। গতবারের ক্রিকেটারদের মাঝে মাশরাফি, সাব্বির রহমান, তানভীর হায়দার, মোক্তার আলী, ইরফান শুক্কুর, আল আমিন হোসেনকে ধরে রেখেছে পুরানো ক্রিকেটারদের মাঝে এখন চেষ্টা করছে সাকিব আল হাসানকে ধরে রাখার। সাকিবের প্রতি আগ্রহ আছে দুই জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান ও আবাহনীরও। কিন্তু সাকিবের ঠিকানা শেষ পর্যন্ত কোথায় হয় তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে?
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ছেড়ে দিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিম, ডানহাতি অলরাউন্ডার সাব্বির হোসেন, বাঁহাতি স্পিনার আসিফ হাসান, ও সানজিৎ সাহা, জাতীয় দলের সাবেক দুই ক্রিকেটার ব্যাটসম্যান রকিবুল ইসলাম ও পেসার শফিউল ইসলাম এবং আব্বাস মুসাকে। দলে ভিড়িয়েছে আবাহনীর বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলনামকে। তিনি গত মৌসুমে আবাহনীর হয়ে উইকেট নিয়েছিলেন সর্বোচ্চ ২২টি। ২২টি উইকেট ছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনেরও। তাকে নিতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। রূপগঞ্জের সংগ্রহের মাঝে তানভীরই সেরা। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ দল গড়তে গিয়ে সিটি ক্লাবের উপর বেশ ভালোই নজর ফেলে। এই ক্লাব থেকে তারা অধিনায়ক জাওয়াদ রুয়েনসহ চারজন ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়েছে। অপর তিনজন হলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আশিক-উল-ইসলাম নাঈম, বাঁহাতি স্পিনার রাজিবুল ইসলাম ও পেসার আব্দুল হালিম। গত মৌসুমে নামের পাশে ছিল রুয়েনের ১১ ম্যাচে ৩৩১ রান, নাঈমের ১১ ম্যাচে ৪২৩ রান, রাজিবুলের ১০ ম্যাচে ১০ উইকেট ও আব্দুল হালিমের ৯ ম্যাচে ৩ উইকেট। এ ছাড়া তারা দলে ভিড়িয়েছে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের ওপেনার মিজানুর রহমান, ব্রাদার্স ই্উনিয়নের জাতীয় দলের সাবেক অফ স্পিনার সোহাগ গাজী এবং প্রথম বিভাগের ক্লাব ফায়ার ফাইটার্সের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ফারদিন হোসেন অমিকে।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ইচ্ছে ছিল পুরানো ক্রিকেটারদের মাঝে নাঈম ইসলাম ও নাবিল সামাদকে ধরে রাখার। নাঈম ইসলাম ছিলেন গত আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। ১৫ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি আর পাঁচ হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ছিল ৮৫৯। লিগের প্রথম পর্বে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। কিন্তু সুপার লিগে গিয়ে তার ব্যাট আর সেভাবে হাসেনি। পরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন এনামুল হক বিজয়। তার রান ছিল ১১৩৮। নাঈম ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ১১ উইকেটও। বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদ ১৪ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছিলেন ১৭টি। এই দুই ক্রিকেটার ক্লাবর সঙ্গে কোনো কথা না বলেই চলে গেছেন। নাঈম ইসলাম গেছেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সে, নাবিল সামাদ শাইন পুকুর ক্রিকেট ক্লাবে।
এমপি/