ইমরুল-এনামুল-খালেদকে দলে ভিড়িয়েছে মোহামেডান
সময় যেন বহতা নদী। চলে আপন গতিতে। সময়কে যারা কাজে লাগাতে পারে তারা সফল হয়, যারা পারে না, তারা হয় ব্যর্থ। এ সময়কে কাজে লাগিয়েই এক সময় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব নিজেদের ইতিহাসে একের পর এক সাফল্য রচনা করেছে। পেয়েছে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। ঠাঁই করে নিয়েছিল দর্শক হৃদয়ের মনি কোঠায়। মোহামেডানের সাফল্যে যেমন বাঁধভাঙা জোয়ার তৈরি হতো, তেমনি ব্যর্থতায় তৈরি হতো হতাশার সাগর। ক্লাবের পরাজয়ে মারামারি করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এক মৌসুম চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে, তা হোক ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকি (এ তিনটি খেলায় মোহামেডানের ছিল দাপুটে বিচরণ), পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হতেই হতো। কদাচিৎ ঘটত এর ব্যতীক্রম। এখন সবই ইতিহাস। বর্তমান মোহামেডান যেন সেই ইতিহাসের কঙ্কাল! নেই কোনো সাফল্য। ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়া কাকে বলে তা যেন ভুলতে বসেছে। ইদানিং আবার বেশ নড়চড়ে বসেছে ক্লাবটি। সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটে শক্তিশালী দল গড়ে ধীরে ধীরে আবার আগের ইতিহাসে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ক্রিকেটে।
মোহামেডান গত মৌসুমে জাতীয় দলের এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছিল। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন, মিরাজ, সৌম্যর মতো ক্রিকেটাররা নাম লেখান মোহামেডান। তারায় তারায় ঝিলিক করতে থাকে মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটিতে। এ রকম তারকা নির্ভর দল মোহামেডান আগে গড়ত। সাম্প্রতিক সময়ে তা ছিল বিরল। আগের মতো সমর্থকদের সে রকম বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা না গেলেও এখনও যারা ক্লাবঅন্তঃপ্রাণ সমর্থক, তাদের চোখে-মুখে আনন্দের বাঁধভাঙা জোয়ার তৈরি হয়। দীর্ঘদিন পর আবার তারা শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বুনন করতে শুরু করেন। কিন্তু এ সবই ছিল রাজ্যের কল্পনা। কারণ মোহামেডান শিরোপা জেতা দূরে থাকে। আশে-পাশেও থাকতে পারেনি। এমন কী সুপার লিগেও উঠতে পারেনি। লিগে হয়েছিল সপ্তম।
মোহামেডান এক ঝাঁক তারকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানো ছিল অনেকটা বিদ্যুৎ চমকানোর মতো ঝিলিক। কারণ জাতীয় দলে ব্যস্ততার কারণে সাকিব-শফিক-মিরাজ মোহামেডানের হয়ে কোনো ম্যাচই খেলতে পারেননি। ইনজুরির কারণে তাসকিন ছিটকে যান। মাহমুদউল্লাহ খেলেন সাতটি ম্যাচ। গতবারের ব্যর্থতা ভুলে শিরোপা জেতার জন্য মোহামেডান এবারও তারকা নির্ভর দল গড়েছে। যদিও পরবর্তী মৌসুমের লিগ শুরুর তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু মোহামেডান দল-বদলের কাজটি সেরে রেখেছে। মোহামেডানের মতো অনেক ক্লাবই নিজেদের কাজটি করে রেখেছে।
মোহামেডানের কর্মকর্তাদের ইচ্ছে ছিল গতবারের দল ধরে রাখার পাশাপাশি কিছু নতুন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে গতবারের দুর্বলতা ঢাকার। কিন্তু সে সুযোগ তারা পাননি। গতবার মুশফিক ও মিরাজ মোহামেডানের হয়ে কোনো ম্যাচ না খেলাতে পরে তারা ছাড়পত্র নিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে খেলেন। লিগে শেখ জামাল চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। এবার এই দুই ক্রিকেটারকেই শেখ জামাল আর ছাড়েনি। যদিও মিরাজের ব্যাপারে মোহামেডানের আপত্তি আছে বলে ক্লাব সূত্রে জানা গেছে। গতবার শেখ জামালে খেলার জন্য ছাড়পত্র নেওয়ার সময় মোহামেডান থেকে নেওয়া অগ্রিম টাকা মুশফিক সম্পূর্ণ ফেরত দিলেও মিরাজ আংশিক দিতে পেরেছিলেন। বাকি টাকা পরের মৌসুমে মোহামেডানে খেলে সমন্বয় করে দেবেন বলে মিরাজ লিখিত দিয়েছিলেন। মোহামেডানের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস মিরাজ তার কথা রাখবেন।
মোহামেডান গতবারের ক্রিকেটারদের মাঝে ধরে রেখেছে মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন, সৌম, নাজমুল ইসলাম অপু, আব্দুল মজিদ, শুভাগত হোম, আরিফুল ইসলাম, মুশফিক হাসানকে। ছেড়ে দিয়েছে পারভেজ ইমন, জাহিদুজ্জামান, ইয়াসির আরাফাত, সোহরাওয়ার্দী শুভ, রুবেল মিয়া, হাসান মাহমুদ, সালাহউদ্দিন শাকিলকে।
মোহামেডান নতুন খেলোয়াড় সংগ্রহে চমক দেখিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে দলে ভিড়িয়ে। গতবার তার নেতৃত্বেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এ ছাড়া বিপিএলে তার নেতৃত্বই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। গতবার লিগে ইমরুল কায়েস নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৫ ম্যাচে রান করেছিলেন ৫১৩। একটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। লিগে তিনি ছিলেন দশম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। এবার তার নেতৃত্ব আর ব্যাটিং দুইটিই পাবে মোহামেডান। ইমরুল কায়েসের মতো মোহামেডান দলে ভিড়িয়েছে আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়রকে। গতবার লিগে তিনি রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন।
মোহামেডান অভিজ্ঞদের পাশাপাশি নিয়েছে তরুণদেরও। যেখানে সর্বাগ্রে নাম আসবে জাতীয় দলে সাদা পোশাকের পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের। এ ছাড়াও তারা নিয়েছে আরেক তরুণ পেসার রুহেল মিয়াকে। গতবার তিনি লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে না লেখালেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। মোহামেডানের আগ্রহ ছিল গতবার লিগে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে হাজার রান করা প্রাইম ব্যাংকের ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে। কিন্তু বিজয়কে দলে টেনে নিয়েছে আবাহনী।
মোহামেডানের খেলোয়াড় ধরে রাখা-ছেড়ে দেওয়া আর নিয়ে আসার পর বাকি থাকল সাকিবের বিষয়টি। মোহামেডান সুপার লিগে উঠতে না পারার কারণে গতবার তিনিও মুশফিক-মিরাজের মতো ক্লাবের হয়ে কোন ম্যাচ খেলতে পারেননি। পরে ছাড়পত্র নিয়ে খেলেছিলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে। এবারও তাকে ধরে রাখতে চায় মোহামেডান। কিন্তু সাকিবের ব্যাপরে আগ্রহ আছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে। আবার আবাহনীও তাকে চায়। তাই সাকিবের ঠিকানা কোথায় হবে তা নিশ্চিত নয়! সম্ভাবনা বেশি আবাহনীতে খেলার। একটি সূত্রে জানা গেছে সাকিবেরও ইচ্ছে সে রকমই।
এমপি/এসএন