বসুন্ধরা কিংসের হ্যাটট্রিক শিরোপা
বসুন্ধরা কিংসের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।
সোমবার (১৮ জুলাই) মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্টে মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মতিন মিয়া ও বিপুেলের দুই গোলে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। ঢাকার ফুটবলে ইতিহাসে বসুন্ধরা কিংস তৃতীয় ক্লাব যারা হাটট্রিক শিরোপা জিতল।
এর আগে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালে আবাহনী প্রথমে এই স্বাদ পেয়েছিল। পরের তিন বছর মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিয়েছিল একই স্বাদ।
গত ২০০৭ সালে লিগের নাম পরিবর্তন করে রাখা রাখা পেশাদার লিগ। প্রথম তিন আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবাহনী আবারও হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছিল। তবে আবাহনী ও মোহামেডানের হ্যাটিট্রক শিরোপা জেতার সঙ্গে বসুন্ধরা কিংসের হ্যাটট্রিক শিরোপার পাথর্ক্য আছে । বসুন্ধরা কিংস অভিষেকের পর টানা তিন মৌসুমে জিতেছে শিরোপা। মাঝে ২০১৯-২০২০ মৌসুমে খেলা হয়নি করোনার কারণে।
উৎসবের রংয়ে সাজতে বসুন্ধরা কিংস লাল জার্সি পড়ে খেলেতে নেমেছিল। জিতলেই শিরোপা নিশ্চিত। প্রতিপক্ষ হিসেবে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবও অনেক শক্তিশালী। তাই জয় পাওয়াটা নিশ্চিত ছিল না। পয়েন্ট হারালেই তা হোক ড্র করে কিংবা হেরে গিয়ে,অপেক্ষা বাড়ত তাদের। কিন্তু গোটা লিগে দারুণ খেলা বসুন্ধরা কিংসকে যেখানে রুখা সম্ভব হয়নি।
বসুন্ধরা কিংস প্রথম ম্যাচ নবাগত স্বাধীনতা সংঘেল কাছে ২-১ গোলে হেরে শুরু করেছিল, সেখান থেকে এই পর্যন্ত এসেছে, আশে-পাশে নেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি, তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। জয়ের ব্যাপারে ছিলেন শতভাগ আশাবাদী। তাইতো তারা আগে থেকেই তৈরি করে এনেছিল ইংরেজিতে সামনে ‘চিয়ার্স, পেছনে লেখা ত্রি ইয়ার্স ইন এ রো বসুন্ধরা কিংস’ লেখা জার্সি। খেলার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তাই জার্সি বদল করে এই জার্সি পরে উৎসবে মেতে উঠেন ফুটবলাররা।
বসুন্ধরার ফুটবলাররা এখন আফসোস করতেই পারে কেন তারা প্রথম ম্যাচে নবাগত স্বাধীনতা সংঘের কাছে হেরেছিল। এই হারের পর তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ম্যাচ জিতে উঠে আসে সবার উপরে। যেখানে থেকে তাদেরকে আর নিচে নামানো সম্ভব হয়নি। আবাহনী, শেখ জামাল ও মোহামেডানের সঙ্গে ড্র করে তারা শুধু ছয় পয়েন্ট হারিয়েছিল। কিন্তু ঐ এক হারের তারা অপরাজিত থাকার গৌরব হারায়।
বসুন্ধরার অপেক্ষা বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল সাইফ স্পোর্টিং। ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ১০ জনের বসুন্ধরাকে পেয়েও তারা কোনো গোল করতে পারেনি। উল্টো আরেকটি গোল হজম করে। ২৯ মিনিটে মিগুয়েলের পাসে সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডানদিকে কোনাকুনি শটে বল মতিন মিয়া গোলে এগিয়ে যায়। এর আগেই অবশ্য তারা এগিয়ে যেতে পারতে। কিন্তু ২৪ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল ফিগুয়েরোর চমৎকার শট ক্রসবার লেগে ফিরে আসে। এদিকে প্রথম গোল দেয়ার পর ৩৫ মিনিটে বসুন্ধরা কিংস ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছিল।
রহিম উদ্দিনকে দুইবার ফাউল করে দুইবার হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল তাকে। ম্যাচের বাকি ৫৫ মিনিট ১০ জনের দলকে পেয়েও তার ফায়দা নিতে পারেনি সাইফ স্পোর্টিং। এ সময় বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তারা বেশ চেপে ধরেছিল বসুন্ধরা কিংসকে। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না। উল্টো গোল আরেকটি হজম করে হার মানে ২-০ গোলে। ৮১ বক্সের ভেতর থেকে বাম পায়ের প্লেসিং শটে চমৎকারভাবে দ্বিতীয় গোলটি করেন বিপুল।
খেলায় সাইফ স্পোটিং ক্লাবও বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর দৃঢ়তায় তা আর সম্ভব হয়নি। আবার খেলায় দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে বেশ উত্তেজনাও বিরাজ করেছিল। ইয়াসিনের দুইটি হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড পাওয়া ছাড়াও রেফারিকে আরও কয়েকবার হলুদ কার্ড দেখাতে হয়েছে। দুই দলের খেলোয়াড়দের বেশ কয়েকবার মেজাজও হারাতে দেখা গেছে। সব কিছুর অবসান ঘটে রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই। এরপর মুন্সিগঞ্জের স্টেডিয়াম ছিল শুধু লাল বর্ণের আবহ।
এমপি/এমএমএ/