দিনটি শ্রীলঙ্কারই হয়ে থাকলো
লোহাকে সামনে পেলে চুম্বক টেনে নিয়ে যায় কাছে। লেগে থাকে অঙ্গা অঙ্গিভাবে। বিচ্ছিন করা কঠিন হয়ে পড়ে। দিনের প্রথম শেসনেই লঙ্কানদের দুই উইকেট তুলে নেয়ার পর বাংলাদেশ যে চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা বিলীন হতে চলেছিল ম্যাথিউস ও ধনাঞ্জায়ার প্রতিরোধে। পিচে দুই জনেই যেন লোহা আর চুম্বকের মতো জড়িয়ে গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বোলারদের প্রাণান্তকর চেষ্টাও কোনো কাজে আসছিল না। এমনকি মুষলধারে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৭৯ মিনিট পর খেলা শুরু হলেও দুই ব্যাটেনম্যানের মনযোগে কোনো চিড় ধরেনি। কন্ডিশন পরিবর্তনের কারণে বোলাররা যে ফায়দা পাবেন, সে সুযোগও তারা দিচ্ছিলেন না। রান সংগ্রহেও হয়ে উঠেন সাবধানী। শেষ পর্যন্ত তাদের জুটি ভাঙ্গা সম্ভব হয় সাকিবের কল্যানে রিভিউ নিয়ে ধনাঞ্জায়াকে আউট করে। ততোক্ষনে দুই জনে কাটিয়ে দিয়েছেন ৩১.৫ ওভার।
জুটিতে সংগ্রহ ১০২। এই আউট বাংলাদেশের শিবিরে স্বস্তি এনে দিলেও লঙ্কানরা কিন্তু বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে অবস্থান পোক্ত করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিন শেষে তাদের সংগ্রহ পাঁচ উইকেটে ২৮২। চট্টগ্রাম টেস্ট ১৯৯ রান করা ম্যাথিউস ৫৮ও সঙ্গি দিনেশ চান্দিমাল ১০ রানে অপরাজিত। শেষ শেসনে ১২১ মিনিট খেলা হয়। লঙ্কানরা ২৬.৫ ওভারে এক উইকেটে যোগ করে করে ৭২ রান। এ দিন তারা যোগ করে তিন উইকেটে ১৪১ রান। আলোর স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষন আগে দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হবে আধ ঘন্টা আগে সকাল সাড়ে নয়টায়।
লাঞ্চের পাঁচ বল আগে যেভাবে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তাতে করে দিনের খেলা আবার শুরু হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। বৃষ্টি থামার পর তিনবারের পর্যবেক্ষনে আম্পায়ারা দিনের খেলা ছয়টা পর্যন্ত বাড়িয়ে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে বিকেল চারটায় খেলা শুরু করেন। প্রচন্ড রোদে তপ্ত গরমে বৃষ্টির পর কন্ডিশনে অনেক পরিবর্তন আসে। এ রকম কন্ডিশনে বোলারদের ফায়দা তুলার সুযোগ থাকে বেশি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান ম্যাথিউস ও ধনাঞ্জায়ার সাবধানী পথচলার কারণে বাংলাদেশের বোলারদের চেষ্টা ক্রমেই ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হতে থাকে। দুই জনে জুটি বাঁধার পর থেকেই ছিলেন সাবধানী। যে কারণে লাঞ্চের আগে তারা যে ১৪.১ ওভার খেলেন সেখানে রান যোগ করেন মাত্র ৪৬। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে সেই রান সংগ্রহে আরো ভাটা পড়ে। এই জুটি ভাঙ্গে নতুন বল নেয়ার ৭.৩ ওভারে।
এ সময় আউট হওয়ার আগে তারা ১৭.৪ ওভার খেলে যোগ করেন ৫৬ রান। সাকিবের বল টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে ধনাঞ্জায়ার ব্যাট র্স্পশ করে উইকেটের পেছনে লিটনের গ্লাভসে জমা পড়লে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আউটের জন্য সমস্বরে আবেদন করেন। কিন্তু আম্পায়ারের নিরুত্তাপে রিভিউ নিতে দিধায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশ দল নিজেদের মাঝে আলোচনা করে রিভিউ নেন। এর ফলও পান। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটরে কানা র্স্পশ করেছে। ৫৮ রানে আউট হওয়া ধনাঞ্জায়া নিজের দশম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯০ বলে খালেদের বলে চার মেরে। ধনাঞ্জায়ার হাফ সেঞ্চুরির করার পরের ওভারেই ম্যাথিউস তার আটত্রিমতম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সাকিবকে ছক্কা মেরে ১২৫ বলে। ধনাঞ্জায় আউট হওয়ার পর দিনেশ চান্দিমালকে নিয়ে ৯.১ ওভার খেলে দিনের বাকি সময় পার কনে ম্যাথিউস।
বাংলাদেশ পাঁচজন বোলার নিয়ে খেললেও আসলে খেলছে চারজন নিয়ে। কারণ নাঈম হাসানের ইনজুরিতে সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মাত্র দুই ওভার বোলিং করেছেন। আজ তিনি কোনো বোলিংই করেননি। বাকি চার বোলার এবাদত-খালেদ এবং সাকিব-তাইজুল মিলে করেছেন ৯৫ ওভার। আজ তারা করেছেন ৫১ ওভার। সাকিব ২৬ ওভারে ৯ মেডেন নিয়ে ৫৯ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এবাদত ২ উইকেট নিতে ২৬ ওভারে ৩ মেডেন নিয়ে ৭৮ রান খরচ করেন।
চতুর্থ দিন শ্রীলঙ্কানদের লক্ষ্য নির্বিঘ্নে প্রথম ঘন্টা পার করে দেওয়া। বাংলাদেশের চাওয়া আজকের মতো প্রথম ঘন্টাই আঘাত হানা। মূলত আজকের প্রথম সেশনের পরই বোঝা যাবে ম্যাচের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে? কারণ টেস্টের তৃতীয় দিন চলে গেলেও এখনো পিচ ব্যাটসম্যানদের হয়েই কথা বলছে। অথচ টেস্ট শুরুর আগে দুই দলের অধিনায়ক এবং পিচ বিশেষজ্ঞও বলেছিলেন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পিচ থেকে বোলাররা সুবিধা পেতে সুযোগ পাবে। বিশেষ করে স্পিনাররা। আর ব্যাটসম্যানদের জন্য খেলা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
এমপি/এএজেড