বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের টুকিটাকি
মোসাদ্দেকের দূর্বিসহ ফেরা
প্রায় ৩২ মাস পরে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতেরে ফেরাটা ছিল দূর্বিষহ। মাত্র দুই বল খেলে তিনি আউট হয়ে যান কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে ডিকাভেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে। সাদা পোষাকের ক্রিকেট ফিরতে মোসাদ্দেককে যেমন দীর্ঘ ৩২ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে, তেমনি ব্যাট হাতে ক্রিজে নামতেও।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম দিনের প্রথম শেসনের আগেই লিটন দাস নামার সময় থেকেই মোসাদ্দেক প্যাড পরে নামার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। কারণ তখন বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে চলছে আসা-যাওয়ার খেলা। পাঁচ ব্যাটসম্যানের তিনজনই আউট হয়েছেন কোন রান না করেই। বাকি দুই জন যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে।
এ অবস্থায় ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস কতক্ষণ টিকবেন তা ছিল বিরাট এক প্রশ্ন। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যান এমনই প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলেন যে সেদিন আর নামতেই হয়নি। মোসাদ্দকের সেই নামা হয় আজ দিনের খেলা শুরু হওয়ার প্রথম ঘণ্টার মাঝেই। কিন্তু ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমেই তিনি গোল্লা মারেন। অবশ্য সাদা পোষাকের ক্রিকেটে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া প্রথম প্রথম শেণির ম্যাচেও মোসাদ্দেক খুব একটা ভালো করতে পারেননি। কিন্তু লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আবার চলতি মৌসুমে বেশ ভালো করেছিলেন ব্যাটে-বলে। তাকে সাদা পোষাকের দলে নেওয়া হয়েছিলও দল ঘোষণার পর ব্যাকআপ হিসেবে। চট্টগ্রাম টেস্টে সেরা একাদশে সুযোগ না পেলেও ঢাকা টেস্টে পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। তবে তার কপাল ভালো। ঢাকা টেস্টের আগেই উইন্ডিজ সফরে দল ঘোষণা করায় তাকে টেস্ট দলে রেখে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলেও।
লাঞ্চ বিরতি নাটক
টেস্ট ক্রিকেটে প্রতি শেসন দুই ঘণ্টা করে হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বাঙলাদেশ-শ্রীলঙ্কার টেস্ট সিরিজের ম্যাচ শুরুহয় ১০টা। প্রথম সেশন শেষ হয় ১২টায়। এ সময়ের মাঝে সর্বোচ্চ ৩০ ওভার হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম সেশনে খুব কমই ৩০ ওভার খেলা হয়ে থাকে। এই সময় পেস বোলাররা বোরিং করার কারণে সময় একটু বেশি লেগে থাকে। আজ ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় সেই লাঞ্চ বিরতি নিয়ে দুই দফা নাটক হয়েছে। প্রথমে ১২টায় লাঞ্চ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ লাঞ্চের এক মিনিট আগে বাংলাদেশের নয় উইকটে পড়ে যাওয়া আইসিসিরি নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়াররা আধঘণ্টা সময় বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এ সময় লাঞ্চের আগে শেষ ওভার মনে করে অনেকেই আসন ছেড়ে উঠে পড়েছিলেন। পরে দেখেন যে তারা খেলা চলছে। লাঞ্চ বিরতি হয়নি। আবার আধঘণ্টা পর ঠিকই লাঞ্চ বিরতি দেওয়া হয়। আম্পায়াররা বল ফেলে দেন। বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও এবাদত হোসেনসহ লঙ্কান ফিল্ডাররা যারযার ড্রেসিং রুমের দিকে রওয়ান হন। এ সময় আম্পায়াররা আবার সবাইকে যেকে আনেন খেলার জন্য। এ সময় অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেননি। পরে দেখা যায় ধনাঞ্জায়ার করা বলটি নো বল ছিল। যে কারণে সেই বলটি করতে আবার সবার ফেরা।
এক ইনিংসে ছয় শূন্যের পরও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড
যে দলের ইনিংসে ছয় ছয়জন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হতে পারেন, তাদের ইনিংস আর কতই লম্বা হতে পেরে। চুইংগামের মতো টেনে ১০০, ১৫০ কিংবা ২০০। অতীতে এমন ঘটনা বেশ কয়েকটি থাকলেও মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসে ছয় ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হওয়ার পরও দলের সংগ্রহ ছিল ৩৬৫। এটি এই হিসেবে নতুন রেকর্ডও। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ভারতের। তাদের ছয় ব্যাটসম্যান কোনো রান না করে আউট হওয়ার পর ম্যানচেস্টারে ভারতের বিপক্ষে করেছিল ১৫২ রান। এ ছাড়া ছয় ব্যাটসম্যানের এমন পরিণতির পাকিস্তান ১২৮, দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৫ ও নিউ জিল্যান্ড ৯০ রানে অলআউট হয়েছিল। এখানে বাংলাদেশ নতুন রানের রেকর্ড গড়লেও আবার সর্বনিম্ন রানের লজ্জ্বাও আছে তাদের। ২০০২ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ অলআউট হয়েচিল ৮৭ রানে। শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন মোাহম্মদ আশরাফল, অলোক কাপালি, খালেদ মাসুদ পাইলঠ, এনামুল হক ও তাপস বৈশ্য।
রাজিথার প্রথম পাঁচ
লঙ্কান পেসার কাসুম রাজিথা ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। এর আগে তিনি ১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করেছিলেন ৬০ রানে চার উইকেট নিয়ে। সেটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই চট্টগ্রাম টেস্টে। এই রাজিথা চলতি সিরিজে প্রথম নজরে এই চট্টগ্রাম টেস্টেই। প্রথমে তিনি সেরা একাদশে ছিলেন না। ইনজুরিতে পড়া বিশ্ব ফার্নান্ডোর কনকাশন সাব হিসেবে খেলতে নামেন। নেমেই পরিবর্তীতে বোলার হিসেব বোলিং করতে এসেই তিনি বাংলাদেশের ইনিংসের চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এবার সেটিকে নিয়ে গেছেন পাঁচে। টের্স্টে প্রথম দিন তিনি ২৪ রানে বাংলাদেশের পতন হওয়া পাঁচ উইকেটের তিনটি নিয়েছিলেন। এর মাঝে নাজমুল ও সাকিবকে পরপর দুই বলে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। এর আগে আউট করেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়কে। পাঁচ উইকেটের বাকি দুইাট নেন আজ প্রথম শেসনে। এই দুইটি ছিল আবার এক ওভারেই সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস ও মোসাদ্দেকের। তার পাঁচ উইকেটের তিনটিতেই ব্যাটসম্যানরা কোনো রান করতে পারেননি।
রিভিউতে রক্ষা আশিতা ফার্নান্ডোর
অনেক ঘাম ঝরিয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে অলআউট করতে পেরেছিল ৩৬৫ রানে। ওভার খেলেছিল ১১৬.২। এরপর লঙ্কানরা ব্যাট করতে নামার পর খালেদের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেচনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন ওপেনার আশিতা ফার্নান্ডো। তখন দলের ও আশিতা ফার্নান্ডোর রান চিল চার। কিন্তু ব্যাটে বল লাগেনি নিশ্চিত থাকাতে তিনি রিভিউ নেন। সেখানে দেখা যায় তার ধারনাই সত্য। ফলে বেঁচে যান আউট হওয়ার হাত থেকে। পরে তিনি আউট হন ৫৭ রানে।
এমপি/এমএমএ/