দ্বিতীয় সেশন পুরোটাই শ্রীলঙ্কার
দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশন পুরোটাই শ্রীলঙ্কা নিজেদের করে নিয়েছে। এই সেশনে তারা দ্রুতই বাংলাদেশের শেষ উইকেট তুলে নিয়ে পরে ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেটের পতন হতে না দিয়ে ২২ ওভার খেলে সংগ্রহ করেছে ৮৪ রান। ওশাত ফার্নান্ডো ৫২ ও অধিনায়ক দিমুথ করোণারত্ন ৩১ রান নিয়ে চা বিরতিতে গিয়েছেন।
মিরপুরের পিচের চরিত্র নিয়ে যে পূর্বাভাস ছিল তা যেন ক্রমেই বিপরীত হতে চলেছে। টস জেতার পর দুই দলের অধিনায়ক ও পিচ বিশেষজ্ঞ প্রথম ঘন্টা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে, এরপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোলারদের বিশেষ করে স্পিনারদের পক্ষে কথা বলতে শুরু করবে। কিন্তু তার কোন বাস্তবতা দেখা যায়নি। প্রথম দিনের প্রথম ঘন্টায় বাংলাদেশের ইনিংসের উপর দিয়ে ঝড় বহে গেছে। আঘ ঘন্টারও কম সমেয় মাত্র ৬.৫ ওভারে ২৪ রানে হারিয়েছিল পাঁচ উইকেট। এরপর মুশফিক-লিটন জুটির রেকর্ড গড়া রানে বাংলাদেশ পরিত্রান পেয়েছিল। পরবর্তিতে আর মড়ক লাগেনি। বোলাররাও আগুণ ঝরাতে পারেননি। বাংলাদেশের ইনিংসে স্পিনাররা নিতে পারেননি কোনো উইকেট। এদিকে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নামার পর না পেসার, না স্পিনার বাংলাদেশের কোনো ডিার্টমেন্টই ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেনি। খালেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে ওশাতা ফার্নান্ডোকে আম্পায়ার কট বিহাইন্ডের আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান। ত্রাস সৃষ্টি বলতে ছিল এই যা। পরে সাকিবের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রাজকয়ি ঢংয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি পূর্ন করেন ওশাদা। যদিও ৪৩ রানে এই সাকিবের বলেই তার হাতে একবার কঠিন ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলন তিনি।
চা বিরতি পর্যন্ত যে ২৩ ওভার খেলা হয়েছে তাতে দুই পেসার খালেদ ও এবাদত চার ওভার করে করার পর বাকি ১৪ ওভার করেন তিনি স্পিনার তাইজুল, সাকিব ও মোসাদ্দেক।
লাঞ্চ বিরতির এক মিনিট আগে বাংলাদেশের ইনিংসের নবম উইকেটের পতন হলে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়াররা আধ ঘন্টা সময় বাড়িয়ে দেন। এই সময়ের মাঝে যখনই শেষ উইকেটের পতন হবে, তখনই লাঞ্চ বিরতি হবে। যদি বর্ধিত আধ ঘন্টা সময়ের মাঝে শেষ উইকেটের পতন না হয়, তখন হবে লাঞ্চ বিরতি। কিন্তু এখানে আম্পায়ারদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। শেষ ব্যাটসম্যান এবাদতকে নিয়ে মুশফিক গেছেন লাঞ্চ বিরতিতে। জুটিতে যে ১২ রান আসে সেখানে এবাদতের নেই কোনো অবদান। তিনি শুধু ১৬ বল খেলে মুশফিককে সহায়তা করে যাচ্ছেন। মুশফিকের রান ১৭১। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৬১। এই সেশনে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ২৭ ওভারে চার উইকেটে ৮৪ রান। এখন দেখার বিষয় এবাদতের সঙ্গ পেয়ে মুশফিক নিজের রানকে কতোটা বাড়িয়ে নিতে পারেন।
প্রথম দিন মুশফিক-লিটনের বীরত্ব গাঁথার পর দিন শেষে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ঘন্টা তিনি নির্বিঘ্নে পার করে দিতে চান। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথম ঘন্টা নির্বিঘ্নে কাটাতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা লিটনের উইকেটসহ হারাতে হয় দুই উইকেট। আজকের পতন হওয়া চার উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন কাসুন রাজিথা ও আশিতা ফার্নান্ডো।
দিনের শুরুতে মুশফিক-লিটন ছিলেন সাবধানী। কিন্তু তারপরও তাদের সেই সাবধনতায় চিড় ধরান প্রথম দিন ঝড় তুলা দুই বোলারের একজন কাসুন রাজিথা। লিটনকে আর মাত্র ছয় রান যোগ করতে দিয়েই তিনি চতুর্থ শিকার তুলে নেন। লিটনের ব্যাটের কানায় লেগে নিচু হয়ে যাওয়া বলটি দ্বিতীয় স্লিপে দারণভাবে হাতে জমান কুশাল মেন্ডিস। আগের দিন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলা লিটন থামেন ১৪১ রানে। সঙ্গে সাঙ্গ হয় তার ও মুশফিকের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়া ২৭২ রানের ইনিংসের। ৩৮৪ মিনিট পিচে থেকে তারা বল খেলেন ৫১৩টি। লিটন খেলেন ২৪৬ বল। একটি ছক্কার সঙ্গে ছিল ১৬টি চার। লিটন-মুশফিকের এই রান বাংলাদেশের যে কোনো জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাদের উপরে আছে তামিম ও ইমরুল কায়েসের ৩১২ এবং সাকিব ও মুশফিকের ৩৫৯ রারে জুটি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন লম্বা। আটজন। লিটন আউট হওয়ার পর আট নম্বারে আসেন তিন বছর পর টেস্ট দলে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু তার ফেরাটাকে দুর্বিসহ করে তুলেন সেই রাজিথাই। একই ওভারের দুই বল পর মোসাদ্দেককে কোনো রান না করতে দিয়েই উইকেটের পেছনে ডিকাভেলার ক্যাচে পরিণত হন কোনো রান না করেই। মোসাদ্দেককে যন্ত্রণার আগুনে পুড়িয়ে রাজিথা উল্লাসে মেতে উঠেন ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়ে।
মোসাদ্দেক মুশফিককে সঙ্গ দিতে না পারলেও তাইজুল এসে বেশ ভালোই সঙ্গ দেন। তাইজুলের সঙ্গ পেয়ে মুশফিক নিজেরা রানকে দেড়শ অতিক্রম করান। একই সঙ্গে বাংলাদেশেরও তিনশ রান অতিক্রম করে। জুটিতে ৪৯ রান আসার পর তাইজুলকে ফিরিয়ে দেন প্রথম দিনের ঝড় তুলা দুই বোলারের অপরজন আশিতা ফার্নান্ডো। তার বাউন্সার থেকে বাঁচতে গিয়ে গ্লাভসে লেগে বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটের পেছনে ডিকাভেলার হাতে। তাইজুল ১৫ রানর করলেও বল খেলেন ৩৭টি। পরে ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন খালেদকে ইনিংসে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে শূন্য রানে ফিরিয়ে। পরের বলেই এবাদতও আউট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। ফলে ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সংখ্যা আর বাড়েনি। এবাদত পরে একবার রান আউটের হাত থেকেও রক্ষা পান। এরপার চলে তার প্রতিরোধ। যে প্রতিরোধে আম্পায়াররা আধ ঘন্টা সময় বাড়িয়ে দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
এমপি/এএস