শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার চাপ্টার ক্লোজড!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ করেই মোস্তাফিজের চেস্ট খেলার বিষয়টি খুবই জোড়ালোভাবে সামনে চলে আসে। নির্বাচক থেকে শুরু করে, বিসিবির পরিচালক, এমন কি সভাপতি পর্যন্তও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এভাবে বিষয়টি সামনে আসার কারণ ছিল হঠাৎ করে তাসকিন, শরিফুল, এবাদতরা ইনজুরিতে পড়লে। এদের ইনজুরিতে পরে দেখা যায় পেস আক্রমণে খেলার মতো একমাত্র খালেদ ছাড়া তেমন কোনো বোলারই নেই। বাকি যারা আছেন তাদের খেলানোর জন্য দলে রাখা যায়, কিন্তু সে রকম কোনো ফলাফল আশা করা যায় না। যে কারণে নির্বাচকরা প্রথমে নিজেদের মাঝে মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়। সেখান থেকে পরে ডাল-পালা গজিয়ে চারিদিকে বিস্তার লাভ করে।
মোস্তাফিজকে নিয়ে যখন এ সব কথা চালাচালি হচ্ছিল, তখন পুরো মৌসুম খেলবেন বলে ছাড়পত্র নিয়ে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলছেন তিনি। মাঠ মাতাচ্ছেন। বিষয়টি মোস্তাফিজের কানেও চলে যায়। কিন্তু তিনি বিসিবির দেয়া অপশনে টেস্ট না খেলার ঘরে ক্রস চিহ্ন দিয়ে বাকি দুই ফরম্যাটে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। পরে সেভাবেই তার সঙ্গে বিসিবি চুক্তি করে। যে কারণে বিষয়টি জানার পর মোস্তাফিজও নিজেও কিছুটা অবাক হয়ে যান। তিনি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে বিষয়টি নিয়ে বিসিবির সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেনও বলেও জানান।
এদিক সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজও ঘনিয়ে আসতে থাকে। মোস্তাফিজের খেলার বিষয়টিও জোড়ালো হতে থাকে। পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে চলে যায় যে ক্রিকেটে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে মোস্তাফিজের টেস্ট খেলা। এ নিয়ে একদিন মিডিয়ার সামনে মোস্তাফিজেকে ধুয়ে দেন বিসিবির পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি মোস্তাফিজের দেশ প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে বিসিবির বেতন ভূক্ত উল্লেখ করে খেলতে বাধ্য বলেও জানান। তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে মোস্তাফিজের প্রতিক্রিয়া অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু বিসিবি সভাপতি আবার পরে খালেদ মাহমুম সুজনের কথার দ্বিমত করেন। জানান মোস্তাফিজতো তাদের টেস্ট পরিকল্পনায়ই নেই। তবে দেশের প্রয়োজন হলে সে খেলবে।
মোস্তাফিজ প্রসঙ্গে আলোচনার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তাকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে খেলানোর বিষয়ে একটি পক্ষ খুবই চাচ্ছিলেন। প্রথম টেস্টে না হলেও দ্বিতীয় টেস্টে হলেও। কিন্তু তখন প্রশ্ন দেখা দেয় মোস্তাফিজের বিসিবির পক্ষ থেকে আইপিএলে দেয়া ছাড়পত্র নিয়ে। আইপিএলের চলতি মৌসুমে মোস্তাফিজেকে পুরোটা সময় পাওয়া যাবে বলে বিসিবি সেভাবেই তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। দিল্লি ক্যাপিটলসও সেভাবে মোস্তাফিজকে দলে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা সাজায়। এখন তাকে দেশের প্রয়োজনে ফিরিয়ে আনা হলে এ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে একটা ভুল বুঝাবুঝিও হতে পারে। ফলে দো টানায় পড়ে বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক পরিচালক জানান মোস্তাফিজকে ছাড়পত্র দেয়াই হয়েছে আইপিএলে পুরো মৌসুজের জন্য। এ বিষয়টিও ভাবতে হবে। এর বাইরে এ নিয়ে সেই পরিচালক আর কিছু বলতে চাননি।
একদিকে দেশের হয়ে মোস্তাফিজের হয়ে খেলা, অপরদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সুসর্ম্পক- এ রকম পরিস্থিতে বিসিবি মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার প্রতি অনাগ্রহ বিষয়টিকেই সামনে এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সিদ্ধান্তে পৌছায় মোস্তাফিজকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে না খেলানোর। এর মাঝে আবার ইনুজরিতে থাকা দুই ক্রিকেটার শরিফুল এবং এবাদতও সুস্থ হয়ে উঠলে মোস্তাফিজের বিষয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত পৌছাতে অনেকটা সহজ হয়ে যায়। আর এভাবেই শেষ হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে উত্তপ্ত হয়ে উঠা মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার বিষয়টি।
দুই টেস্টের সিরিজে নির্বাচকরা দ্বিতীয় টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দল দেবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। যেখানে তারা রাখেননি মোস্তাফিজকে।
এমপি/এএজেড