তারপরও দিনটি বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন বাংলাদেশেরই বলা যায়। পরিপূর্ণভাবে আলো ঝলমলে একটি দিন হয়নি শুধুমাত্র দ্বিতীয় সেশনের জন্য। এই এক সেশনেই বাংলাদেশ দল হারায় ২২ রানে তিন উইকেট। আবার এই শেসনের পর সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল মাসলপুল হওয়াতে শেষ শেসনে আর ব্যাটিং করতে নামেননি।
প্রথম আর শেষ সেশনে কোনো উইকেট পড়তে দেয়নি। তাই দিন শেষে এক সেঞ্চুরি আর তিন হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ তিন উইকেটে ৩১৮। শেষ শেসনে তারা সংগ্রহ করেছে ৩৫ ওভারে ৯৮। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করা ৩৯৭ রান থেকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে ৭৯ রানে রানে। হাতে উইকেট সাতটি। মুশফিকুর রহিম ৫৩ ও লিটন দাস ৫৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করতে নামবেন।
বিনা উইকেটে ১৬২ থেকে তিন উইকেটে ১৮৪। ২২ রানে নেই তিন উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে পটাপট তিন উইকেট হারিয়ে বংলাদেশ শুরুর সূচনটা ধরে রাখতে পারেনি। যেভাবে রান করে যাচ্ছিল, তাতে করে লঙ্কানদের কপালে চিন্তার ভাজ রেখা ক্রমেই কড় হচ্ছিল। পটাপট তিন উইকেট তাদের খেলায় ফিরে আনার একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। দ্রুত তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশের জন্য মনোকষ্টে কারণে হলেও আনন্দের সংবাদ হলো পরবর্তীতে আর কোনো উইকেট পড়তে দেয়নি। একবার রিভিউ নিয়ে এবং একবার জীবন পেয়ে তামিম ইকবাল এখনো অক্ষত আছেন ১৩৩ রানে করে। আশিত ফার্নান্ডোর বল স্কয়ার লেগে খেলেই তামিম হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন দশম টেস্ট সেঞ্চুরি করে। ১৬২ বলে খেলে ১২ চারে সাজানো তার সেঞ্চুরির ইনিংস। আগের দিনের ৩৫ রান নিয়ে খেলতে নেমে ৭৩ বলেই পেয়ে যান ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি। লাঞ্চের সময় তার রান ছিল ৮৯। সেঞ্চুরি করার পর ১০২ রানে রমেশ মেন্ডিসের বলে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে তামিম ইকবাল রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করান। পরে ১১৪ রানে এই রমেশ মেন্ডিসের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা তালু বন্দি করতে পারেননি ধনাঞ্জায়া ডি সিলভা। ক্যাচটা অবশ্য সহজ ছিল না। মাসলপুল হওয়াতে তামিম ইকবাল রিটায়ার্ড হার্ট করেন। চতুর্থ দিন যে কোনো সময় দেখা যাবে তাকে ব্যাট হাতে নেমে পড়তে।
এদিকে দিনের শুরুতে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয় দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন জুটিতে ১৬৩ রান এনে দিয়ে। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি মানেই ধপাস। ইনিংস শুরু হতে না হতেই সাজঘরে একজন, কখনো কখনো দুইজনই। এভাবেই কেটেছে গত পাঁচ বছরে ৬১ ইনিংস। যেখানে একটিও ছিল না শতরানের জুটি। ১৫ জুটি চেষ্টা করেও পারেননি। ২১ বারই সাজ ঘরে ফিরে যাওয়া হয়েছে দুই অংকের ঘর স্পর্শ করার আগেই। এমনই করুণ অবস্থা ছিল উদ্বোধনী জুটিতে। সেখানে এবার সেই খরা দূর হয়। জুটি ভাঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮ রানে আউট হলে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই আর কোনো রান না করেই মাহমুদুল ফিরে যান আশিতা ফার্নান্ডোর বলে স্লিপে নিরোশান ডিকাভেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে। এই জুটির চেয়ে বেশি রান আছে তিনটি। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ১৮৫, ২২৪ ও ৩১২ রানের তিনটি জুটি।
তামিমের অবসরে চলে যাওয়ার পর মুশফিকুর রহিম ও ইনফর্ম ব্যাটসম্যান লিটন দাস জুটি বেঁধে দলকে ৯৮ রান এনে দিয়েছেন। দুই জনেই হাঁকিয়েেেছন ফিফটি। ফর্মের সঙ্গে লড়াই করে মুশফিকুর রহিম পেয়েছেন ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি। লিটন দাসেরটা ছিল দ্বাদশ। লিটন দাস পরে ক্রিজে গেলেও হাফ সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিমের আগে ৯৬ বলে আট চারে। তবে তার এই হাফ সেঞ্চুরি করা নাও হতে পারত যদি ৩৩ রানে শর্ট লেগে ধনাঞ্জায়ার বলে ক্যাচ ফেলে না দিতেন ওশাদা ফার্নান্দো। ক্যাচটি নিচু হয়ে আসাতে তিনি তালুবন্দি করতে পারেননি।
মুশফিকুর রহিম ১২৫ বলে মাত্র দুই চারে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি সাকিবের পাশে। আবার পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়া থেকে তিনি ১৫ রান দূরে আছেন। চতুর্থ দিন এই ১৫ রান করতে পারলে তিনি হবেন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান। তার বর্তমান রান ৪৯৮৫। তবে এই মাইলফলক তামিম ইকবাল আগেও র্স্পশ করতে পারতেন, যদি তিনি মাসুলপুল হয়ে মাঠ না ছাড়তেন। তার রান ৪৯৮১।
এ সবই ছিল দিনের সাফল্যের গল্প। কিন্তু শুধু সাফল্য দিয়ে দিন শেষ হয়নি। মুদ্রার অপর পিঠে আছে ব্যর্থতার গল্প। সেই গল্পের দুই চরিত্র নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুই জনেই দ্ইু রান করে আউট হন। ষষ্ট বোলার হিসেবে বল হাতে তুলে নিয়েই কাসুন রাজিতা নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচে পরিণত করেন উইকেটের পেছনে ডিকাভেলার হাতে। কাসুন রাজিতা এই টেস্টেই ছিলেন না। তিনি বিশ্ব ফার্নন্ডোর কনকাশন সাব হিসেবে খেলছেন তৃতীয় দিন থেকে। প্রথম ওভারেই তিনি শুধু সাফল্য পাননি। পরে অধিনায়ক মুমিনুল হককে বোল্ড করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেয়ার পাশাপাশি মুমিনুলের ব্যর্থতার পারøা আরো ভারী করে তুলেন। মুমিনুল এই নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে এক অংকের ঘরে আউট হলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টের চার ইনিংসে তিনি ৬ ও ৫ এবং ০ ও ২ রান করেছিলেন।
এমপি/এমএমএ/