নাঈমের ৬ উইকেট যেন মরা গাঙে জোয়ার
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের অভিষেক একজন ব্যাটসম্যানের যেমন চির আরাধ্য থাকে সেঞ্চুরি করা, তেমনি একজন বোলারের স্বপ্ন থাকে পাঁচ উইকেট নেওয়া। চট্টগ্রামের ছেলে অফ স্পিনার নাঈম হাসান সেই সব ভাগ্যবানদের একজন যিনি অভিষেকেই নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তাও নিজের জন্মস্থান চট্টগ্রামেই।
২০১৮ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেকে এভাবে রাঙিয়ে ছিলেন নাঈম। পাঁচ নম্বারে বল হাতে তুলে নিয়ে মাত্র পাঁচ ওভারে ৬১ রান দিয়ে তিনি নিজেক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। যার এমন শুরু, তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু নাঈমের ক্ষেত্রে তা আর হয়নি। তার পথ চলা মসৃন হয়নি। চলে আসা-যাওয়ার খেলা।
নিউ জিল্যান্ড সফরে কম্বিনেশনের কারণে তিনি সুযোগ পাননি। পরে আবার ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ পান। উভয় ইনিংসে পান দুইটি করে উইকেট। এরপর আবার ভারত সফরে জায়গা হারান। একই পরিণত হয় আবার পাকিস্তান সফরেও। এরপর ঘরের মাঠে জিম্বাবয়ের বিপক্ষে আবার সুযোগ পেয়ে প্রথম ইনিংসে পাঁচটি ও দ্বিতীয় ইনিংসে চারটি উইকেট নিয়ে তিনি আবারও নিজের জাত চেনান। ফলে ঘরের মাঠে উইন্ডিজের বিপক্ষেও সুযোগ পান। এবার আর সেভাবে নিজেকে প্রমাণক করতে পারেননি। দুই টেস্টের সিরিজে নেন ছয় উইকেট। এরপর আসে শ্রীলঙ্কা সফর। চলে যান বাইরে। সেই যে গেলেন আর ফেরার নাম গন্ধ নেই। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হয়তো ফেরা হতো না যদি মেহেদি হাসান মিরাজ ইনজুরিতে না পড়তেন। তার ইনজুরিই নাঈমকে দলে ফিরিয়ে আনে। এরপর যা করলেন তা শুধুই ইতিহাস। ১৫ মাস পর ফিরে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে ৩৯৭ রানে প্যাকেট করতে নাঈমের ছিল অগ্রণী ভুমিকা। দশ উইকেটের অর্ধেকেরও বেশি তার পকেটে। ৩০ ওভারে ১০৫ রান দিয়ে ছয় উইকেটের মালিক তিনি। যা তার ক্যারিয়ারেরও সেরা। চট্টগ্রামের মরা উইকেটে নাঈম যা করে দেখিয়েছেন এ যেন মরা গাঙে জোয়ার আনার মতো।
নাঈম তার এমন সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক ও নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে।
তিনি বলেন, ‘উইকেট খুব ভালো। বল করার পরিকল্পনা ছিল ভালো জায়গায়। গতকালকে সাকিব ভাই, কোচ ও সৌরভ (মুমিনুল) ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছি উইকেট কি ডিমান্ড করছে। ওই অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছি। আসলে সাকিব ভাই তো আমাদের সঙ্গে কথা বলে। সৌরভ ভাইও কথা বলে। উনাদের কাছে তো পুরো টিমের দায়িত্ব। তো সাকিব ভাই ছোট ছোট বিষয়গুলো বলে দেয়, মানে এখন এরকম করতে হবে, যেটা অনেক উপকার হয়। আল্লাহর রহমতে সাফল্য এসেছে।’
প্রথম দিন প্রথম শেসনে তিনিই দলকে পথ দেখান দুই উইকেট নিয়ে। এরপর আজ দ্বিতীয় দিন যখন উইকেটের জন্য হাপিত্যেশ করছেন বোলাররা তখনই নাঈম আর্বিভাব হন সাফল্যের তিলক নিয়ে। এবারও তার ঝুলিতে দুই উইকেট। এরপর আবারও দুই উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের লেজ কেটে দেন। যেখানে কাটা পড়ে মাত্র এক রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন ম্যাথিউস। ক্যারিয়ারের তৃতীয়বার পাঁচব উইকেট পেতে গিয়ে করেছেন সেরা বোলিংও। কিন্তু এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আজকেরটিকেই সামনে রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘সব পাঁচ উইকেটই তো অন্যরকম। বিশেষত এটা খুব ভালো উইকেটে পাঁচ উইকেট পেয়েছি। এজন্য একটু এগিয়ে রাখব।’
মরা পিচে নাঈম যে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তাতে করে তাকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে আসা-যাওয়ার চিত্রনাট্য বন্ধ দাবি তুলতেই পারেন?
এমপি/এমএমএ/