বাংলাদেশের স্বস্তির দিন
বাংলাদেশের জন্য এক আতঙ্কের নাম দিনের শেষ শেসন। অতীতে এমন বহুবার দেখা গিয়েছে হয় প্রতিপক্ষ অলআউট হয়েছে, না হয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষন আগে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আর সেই সময়টুকু বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠত ভীবিষীকাময়। এক থেকে একাধিক উইকেটের পতন হতো। পাশে রান থাকতো খুবই অল্প। এইতো সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও এমনটি হয়েছে। কিন্তু এবার চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর এমনটি হয়নি।
শ্রীলঙ্কাকে ৩৯৭ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ দল ১৯ ওভার খেলে দিন পার করেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৬ রান সংগ্রহ করে। তামিম ইকবাল ৫৫ বলে চার চারে ৩৫ ও মাহমুদুল হাসান জয় ৬৬ বলে পাঁচ চারে ৩১ রানে অপরাজিত আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে মাহমুদুল হাসান জয় উভয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। এবার তিনি বেশ সাবধানী। শ্রীরঙ্কার ইনিংসের চেয়ে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে ৩২১ রানে। আর ফলোঅন এড়াতে হলে করতে হবে আরো ২৩ রান। হাতে আছে সব কটি উইকেটই। এর আগে শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের টার্গেটের (চারশ রান) মাঝে ৩৯৭ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনটি বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বস্তির।
চা বিরতির প্রায় এক ঘন্টায় এক সঙ্গে তিনটি লক্ষ্য পূরনের মাধ্যেমে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে শেষ করে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শ্রীলঙ্কা চার উইকেটে ২৫৮ রান করার পর বাংলাদেশের টার্গেট ছিল চারশ রানের মাঝে আটকে রাখা। লঙ্কানদের টার্গেট ছিল পাঁচশ রান করা। এখানে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে চারশ রান করতে দেয়নি। অলআউট করেছে ৩৯৭ রানে। দ্বিতীয়ত হলো ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে একেবারে তীরে গিয়ে তরি বেড়াতে দেয়া হয়নি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। তিনি আউটচ হয়েছেন ১৯৯ রানে। আর তাকে আউট করে ইনিংসে ষষ্ট উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেছেন ঘরের ছেলে প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসা নাঈম হাসান।
বাংলাদেশ নিজেদের টার্গেটের ভেতর লঙ্কানদের আটকে রাখতে পারলেও এত দূর আবার যাওয়ার কথা ছিল না সফরকারিদের। লাঞ্চের আগে-পরে ২১ বলে নয় রানের ব্যবধানে চার উইকেট তুলে নেয়ার পর লঙ্কানদের অলআউট হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তখন তাদের রান ছিল আট উইকেটে ৩২৮। সেখান থেকে আরও ৭৯ রান যোগ হলেও তার চেয় বড় বিষয় ছিল পিচে সুপার গ্লুর মতো দুই ব্যাটসম্যান ম্যথিউস ও বিশ্ব ফার্নান্ডো জমে যাওয়া। রান করার চেয়ে টিকে থাকার দিকেই তারা ছিলেন বেশি মনযোগি। যে কারণে এই দুই জন লাঞ্চের তিন বল পর জুটি বেঁধে পুরো সেশনই কাটিয়ে দেন। রান করেন মাত্র ৪৭। চা বিরতির আগে শরিফুলের বলে বিশ্ব ফার্নান্ডোর হেলম্যাটে বল সরাসরি লাগলে তিনি চা বিরতির পর আর ব্যাটিং করতে আসেননি।
শেষ ব্যাটসম্যান আশিতা ফার্নান্ডো এসে ম্যাথিউসকে সময় দেওয়া শুরু করেন। তিনিও বিশ্ব ফার্নান্ডোর মতো উইকেটে জমে থাকেন। রান করার দিকে আগ্রহী ছিলেন না। যে কারণে জুটিতে ৫৩ বল খেলে রান যোগ হয় ১৫। আশিতা ফার্নান্ডো ২৭ বল খেলে মাত্র এক রান করে নাঈমের পঞ্চম শিকার হয়ে বিদায় নেওয়ার পর আবার ব্যাট করতে আসেন বিশ্ব ফার্নান্ডো। তিনি আসেন মূলত ম্যাথিউসকে সঙ্গ দিতে। ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগ দিতে। ম্যাথিউসের রান তখন ১৯২। বিশ্ব ফার্নান্ডো শুধুই বল মোকাবিলা করে যান। কোনো রান করেননি। ম্যাথিউস পরিস্থিতি বুঝে নিজে স্টাইক ধরে রেখে ঝটপট ক্যারিয়ারের ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করার দিকে মনযোগী হন। যে কারণে তিনি মারমুখি হয়ে উঠেন। তাইজুলকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বাউন্ডারি মেরে ১৯২ থেকে ১৯৬ রানে পৌছে যান। এরপর এক রান নিয়ে স্টাইক ধরে রাখেন।
পরের ওভারের নাঈমের পঞ্চম বলে দুই রান নিয়ে পৌছে যান ১৯৯ রানে। পরের বলে স্লগ করে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করতে গিয়ে সাকিবের হাতে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয় ম্যাথউস আর শ্রীলঙ্কার ইনিংস। অপরপ্রান্তে বিশ্ব ফার্নান্ডো তখন ৮৪ বলে ১৭ রানে অপরাজিত। ১৯৯ আউট হওয়া ম্যাথিউস হলেন বিশ্ব ক্রিকেটে দ্বাদশ ব্যাটসম্যান। এর আগে একে একে আউট হয়েছেন পাকিস্তানের মোদাসসর নজর, ইউনিস খান ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, লুকেশ রাহুল, অস্ট্রেলিয়ার ইলিয়ট, স্টিভ ওয়াহ, স্টিভেন স্মিথ,শ্রীলঙ্কার জয়াসুরিয়া, ইংল্যান্ডের আয়ান বেল, দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগার ও ডু প্লেসি।
ম্যাথিউস ক্যারিয়ারের সেরা (আগের সেরা অপরাজিত ২০০) স্কোর করতে না পারলেও নাঈম হাসান ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন ১০৫ রানে ছয় উইকেট নিয়ে। তার আগের সেরা ছিল ৬১ রানে পাঁচ উইকেট। আট টেস্টের ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া। সাকিব ৬০ রানে নেন তিন উইকেট। তাইজুল ১০৭ রানে নেন অপর উইকেট।
এমপি/এমএমএ/