ম্যাথিউসের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন শ্রীলঙ্কার
প্রথম সেশনে দুই উইকেট। শেষে দুই উইকেট। মাঝের সেশন শূন্য। আর তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিতে পারেনি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের হার না মানা ১১৪ রানে দিনটি সফরকারীরা নিজেদের ভাবতেই পারে। চার উইকেটে তাদের সংগ্রহ ২৫৮। ম্যাথিউস ১১৪ ও দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন আবার ব্যাট করতে নামবেন। আজ প্রথম সেশনে ৭৩, দ্বিতীয় সেশনে ৮৫ ও শেষ সেশনে ১০০ রান সংগ্রহ হয়।
পিচ ব্যাটিং বান্ধব। যে কারণে টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ব্যাটিং বেছে নেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হকও টস জিতলে একই কাজ করতেন বলে জানিয়েছিলেন। পিচ ব্যাটিং বান্ধব হওয়াতে দুই দলই লম্বা ব্যাটিং লাইনের পসরা সাজিয়েছে সেরা একাদশে। উভয় দলেই ব্যাটসম্যান সাতজন করে। কিন্তু পিচ যে রকম ব্যাটিং বান্ধব, সে রকম রান কিন্তু উঠেনি স্কোরবোর্ডে। এই না উঠার কারণ বাংলাদেশর বোলাররা। উইকেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে দিনের সবচেয়ে সফল বোলার অফ স্পিনার নাঈম হাসান ও পেসার খালেদ ছাড়া সবাই ছিলেন অতিমাত্রায় মিতব্যয়ী। সবচেয়ে বেশি মিতব্যয়ী ছিলেন সাকিব। তিনি ১৯ ওভারে ১.৪২ ইকোনমিতে রান দিয়েছেন ২৭। উইকেট নিয়েছেন একটি। ৩ এর নিচে ইকোনমি ছিল পেসার শরিফুল ও তাইজুলের। শরিফুল ১৩ ওভারে ২.৯২ ইকোনমিতে ৩৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তাইজুল ৩১ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে উইকেট নেন একটি। তার ইকোনমি ছিল ২.৩৫। খালেদ ১১ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। তার ইকোনমি ছিল ৪.০৯, নাঈম হাসান ১৬ ওভারে ৪.৪৩ ইকোনমিতে ৭১ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। ব্যাটিং বান্ধব পিচে আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যানের দুই জনই এক অংকের ঘরে ফিরে গেছেন। অধিনায়ক দিমুখ করুনারত্নে ৯ ও ধনাঞ্জায়া ডি সিলভা ৬ রানে। এ ছাড়া ওসাদা ফার্নান্ডো ৩৬ ও কুশাল মেন্ডিস ৫৪ রানে আউট হন। শতরানের জুটি একটিও গড়ে উঠেনি। সর্বোচ্চ জুটি ছিল ম্যাথিউস ও কুশাল মেন্ডিসের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৪ রান। এরপর ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল পঞ্চম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছন্ন থেকে যোগ করেছেন ৭৫ রান। সংক্ষেপে এই হলো দিনের সারমর্ম।
ব্যাটিং বান্ধব পিচ হওয়াতে অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে যে আশায় ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে লঙ্কানরা আাদিপত্য বিস্তার করতে পারেননি। আসলে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে দেননি ঘরের ছেলে চট্টগ্রামের নাঈম হাসান। সেখানে কাটা বিছিয়ে দেন তিনি। ব্যাটিং স্বর্গ উইকেট বেশ বড় শিকারই তিনি করেন অধিনায়ক দিুমথ করুনারত্নকে মাত্র ৯ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। এরপর ওসাদা ফার্নান্ডো ও কুশাল মেন্ডিস লম্বা ইনিংস গড়ার চেস্টায় লিপ্ত হন। তবে এখানেও বাদ সাধেন নাঈম। এবার তিনি আঘাত হানেন আরেক ওপেনার ওসাদা ফার্নান্ডোর উপর। ৩৬ রানে তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরে ফিরিয়ে দেন লিটন দাস।
ব্যাটিং সহায়ক পিচে শুরুতেই দুই উইকেট বোলিং সাইডের জন্য অনেক বড় সাফল্যই। যে কারণে লঙ্কানরা একটু হিসেবি হয়ে যায়। ভাটা পড়ে রান সংগ্রহে। লাঞ্চের পর আবার তারা কিছুটা রান সংগ্রহে মনযোগী হন। এ সময় প্রথম সেশনের সফল বোলার নাঈম হাসানকে বেশ মেরে খেলতে থাকেন। নাঈমের বল সহজলভ্য হয়ে যাওয়াতে মুমিনুল ৩৬ নম্বর ওভারে সাকিবকে প্রথম আক্রমণে নিয়ে আসেন। সাকিবের বল তারা খেলেন আবার সাবধানে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে লঙ্কানরা ৮৫ রান যোগ করে। এ সময় তাদের অবস্থান বেশ পোক্ত হয়ে উঠে। ৬৬ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন হওয়ার পর কুশাল মেন্ডিস ও ম্যাথিউস জুটি বেঁধে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে রানের গালিচা বিছানোর কাজ করে যান। জুটিতে তারা যোগ করেছেন ৯২ রান। কুশাল মেন্ডিস ৯৩ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ম্যাথিউস ৩৮তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১১ বলে। চা বিরতির পর প্রথম বলেই কুশাল মেন্ডিসকে তাইজুল ফিরিয়ে দিয়ে দলকে আবার চাঙ্গা করে তুলেন। একটু পর সাকিবও সাফল্য পান ধনাঞ্জায়াকে প্রথম স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয় ক্যাচ নিলে। উইকেটটি পেতে বাংলদেশ দলকে রিভিউ নিতে হয়েছিল। প্রথম দুইটি রিভিউ প্রথম সেশনেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এবারেরটি বেঁচে যায়। এরপর আর বাংলাদেশ দল সাফল্যের মুখ দেখেনি। ম্যাথিউস আর চান্দিমাল দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তারা আর কোনো উইকেটের পতন হতে না দিয়ে দিন পার করে দেন।
ম্যাথিউস ১১১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পর সেঞ্চুরি করেন ১৮৩ বলে। এটি তার দ্বাদশ সেঞ্চুরি হলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল প্রথম সেঞ্চুরি। নতুন বল নেওয়ার পর শরিফুলের করা সেই ওভারের চতুর্থ বলে ফ্লিক করে মিড অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিন অংকের মালা গেঁথে নেন। একটি ছক্কার সঙ্গে বারোটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। তবে ম্যাথিউস এই সেঞ্চুরি নাও পেতে পারতেন, যদি ৬৯ রনে তাইজুলের বলে প্রথম স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয় বলটি তালুবন্দি করতে পারতেন।
এমপি/আরএ/