বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে ডোনাল্ডের প্রেমালাপ!
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ফাস্ট বোলার সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ড যেন কবি। কবি যেমন প্রিয়জনকে নিয়ে নানা উপমাম ভাষা আর ছন্দে মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকেন। কখনো কখনো ভাষা হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশের পেসারদের দেখে ডোনাল্ডের অবস্থা হয়েছে অনেকটা সে রকম। শরিফুলকে নিয়ে এক রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, তো এবাদত-খালেদকে নিয়ে আরকে রকম। মোস্তাফিজকে নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি ভাষাই খুঁজে পাননি।
অ্যালান ডোনাল্ডের বাংলাদেশের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন হয় তার নিজ দেশেই, যখন বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেই তিনি কর্ম শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ দল দেশে ফিরে আসলেও ডোনাল্ড আর সঙ্গে আসেননি। ছুটিতে চলে যান। পরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজকে সামনে রেখে তিনি আসেন বাংলাদেশে। এখানে আসার পর তার কর্ম শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকে। কারণ সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে চট্টগ্রামেই ১৫ মে থেকে। বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পও তাই নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রথমবার পেসারদের নিয়ে সেভাবে কাজ কর্রা সুযোগ পাননি। কারণ শরিফুল ছিলেন ইনজুরিতে। পরে যোগ হন তাসকিন। বাকিদের নিয়ে কাজ করেন। এবার ভালোভাবে শিষ্যদের পরখ করে নিতে পারছেন। আর এই পরখ করতে গিয়েই পেসারদের প্রেমে মজে যান যান সাদা বিদ্যুৎ। আজ চট্টগ্রামে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। যেখানে শরিফুলকে নিয়ে তার অভিব্যক্তি ছিল ‘শরিফুলের পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই খুশি। বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজ ওর পারফরম্যান্সে। তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। নজরকাড়া বোলিং ছিল তার। বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপ জেতার সময়তার বোলিং আমাকে মুগ্ধ করেছিল।’
এবাদত-খালেদেও মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ডোনাল্ডের অন্তরে। দুই জনকে নিয়ে তার জবানি, আমার কাছে বড় চমক চিল এবাদত ও খালেদ। আমি অবাক হয়েছি তাদের সামর্থ্য দেখে প্রচুর সাহস আর একাগ্রতার অপর নাম হলো ফার্স্ট বোলিং। এর আগে আমি কখনও কোনো টেস্টে দুই স্পিনার আর দুই পেসার দেখিনি। কিন্তু তারা তাদের কাজ ঠিকই করে গেছে, বিশেষ করে ডারবান টেস্টে তারা ছিল অসাধারণ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই টেস্টে অলআউট করা ছিল দারুণ নৈপুণ্য। যা দেখলাম তাতে আমি অনেক খুশি।’
এরপর এই তিনজনকে নিয়ে তিনি একত্রে শব্দ দিয়ে মালা গেঁথে বলেন, ‘আমার রোমাঞ্চিত হওয়ার একটা কারণ হল এখানকার ছেলেরা সঠিক প্র্রশ্নটা করে। তারা শিখতে চায়। এবাদত, খালেদ ও শরিফুল জানে কীভাবে ফ্ল্যাট পিচে বল করতে হয়। এটা শেখার একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।’
রেজাউর রহমান রাজার এখনো অভিষেক হয়নি। শুধুই অনুশীলনে তাকে দেখেছেন। এই দেখাতেই রাজার প্রতিও প্রেম নিবেদন করেছেন ডোনাল্ড, ‘সে (রাজা) একজন ভালো অ্যাথলেট। গতি দিয়ে বল করে। এই সপ্তাহে ভালোই বল করেছে। সোম ও মঙ্গলবার ভালো বোলিং একটু কম হয়েছে। তবে আজ সে দারুণ করেছে। তার এনার্জি আমার খুব পছন্দ। আমি ভালোবাসি বোলিংয়ের সময় তার তৈরি করা আবহ। তার মতো নতুন আরেকটি মুখ দেখতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। দেখা যাক সে কি করতে পারে?’
মোস্তাফিজে প্রেমে তিনি আগে থেকেই পড়েছেন। জানালেন, ‘আমি মোস্তাফিজের অনেক বড় ভক্ত। সাদা বলে সে অসাধারণ এক বোলার।’ এরপরই চলে আসে মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার বিষয়টি। ডোনাল্ড এখানে তার প্রিয়জনের হয়েই কথা বললেন, ‘মোস্তাফিজের টেস্ট খেলার বিষয়ে বলা কঠিন। তারা একটি বেছে নিতে পারে। ইংল্যান্ডের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট বলেছিলেন, ক্রিকেটাররা এক সময় ১২ মাস খেলার জন্য প্রস্তুত। এখন যেটা ৯ মাস। মোস্তাফিজের বিষয়টা ব্যক্তিগত পছন্দ। আমরা এটা নিয়ে বোধহয় মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলতে পারি।’
এরপর তিনি উইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যখন আমি প্রথম আন্দ্রে রাসেলকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে দেখলাম, তখন আমি মনে করেছিলাম সে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়। ১৫০ কিমি গতিতে বল করতে পারত আবার ১১০ মিটার ছক্কাও হাঁকাত। কিন্তু তার শরীর আবার টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই সে সীমিত ওভারের ক্রিকেটকেই বেছে নেয়। এটা যার যার ব্যক্তিগত পছন্দ। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’
এমপি/এমএমএ/