মোস্তাফিজের টেস্ট না খেলা নিয়ে বেজায় চটেছেন সুজন
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন জাতীয় দলে খেলার জন্য কাউকে জোর করা হবে না। কে কোন ফরম্যাটে খেলবে তা আগে থেকে জানাতে হবে। যাতে করে আগে থেকে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সে অনুযায়ী ক্রিকেটাররা নিজেদের পছন্দ জানিয়েছেন। বিসিবিও সেভাবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
শনিবার (৭ মে) বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বললেন ভিন্ন কথা। তিনি মোস্তাফিজকে উদ্দেশে করে অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই জানালেন, বিসিবি চাইলে সে টেস্ট খেলতে বাধ্য। তার বেছে বেছে খেলার সুযোগ নেই। বেছে বেছে খেলার সুযোগ শুধু সিনিয়র ক্রিকেটারদের।
তিনি বলেন, ‘পাপন ভাই বলেছিলেন খেলোয়াড়রা যে ফরম্যাট খেলতে চায় এ নিয়ে আলাপ করতে পারে। সেটা সিনিয়র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কথাটা বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে না। এখন যদি জয় বলে আমি ওয়ানডে খেলব আর টেস্ট খেলব না, এটা কি ঠিক হল নাকি? মোস্তাফিজের আসলে বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? ও তো সাকিব না, তামিম না, মাশরাফি বা মুশফিক না। যারা এত বছর ধরে বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে সার্ভিস দিয়েছে। দেশের জন্য খেলা জরুরি। আর টেস্টের মত বুনিয়াদি ক্রিকেট তো আর কিছুই হতে পারে না। আলোর ঝলকানি, টাকাপয়সা হয়ত সাদা বলের ক্রিকেটে বেশি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট তো বনেদি খেলা। ক্রিকেট শুরু হয়েছে টেস্ট দিয়ে। মোস্তাফিজ কেন খেলতে চায় না আমি জানি না। এটা বোর্ডই নির্ধারণ করবে, কাকে কোথায় খেলতে হবে। আপনি কি অফিসে বলতে পারেন- আমি এই কাজ করব না, ওই কাজ করব? আপনি এখানে কর্মী, আপনি কীভাবে বেছে নেবেন? সভাপতি বলেছিলেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যাপারে।’
সুজন বলেন, ‘আমি তো চাই মোস্তাফিজ টেস্ট খেলুক। কেন না আমাদের তো এত বোলার নেই। হাতে গুনলে এবাদত, তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, রাহী... এরপর বোলার কই? বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলারই তো মোস্তাফিজই। অভিজ্ঞতা বলুন, নৈপুণ্য বলুন, টেকনিক-টেকটিকস বলুন। এসব দিক থেকে তো মোস্তাফিজই সেরা। আজ তাসকিন ইঞ্জুরড। আমাদের মূল বোলারদের একজন খেলতে পারবে না। মোস্তাফিজ থাকলে দলের ভারসাম্য ঠিক থাকত। শরিফুলও যেকোনো সময় ইঞ্জুরিতে পড়তে পারে। তাসকিন ও শরিফুল এমন খেলোয়াড় যারা যেকোনো সময় ইঞ্জুরিতে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মোস্তাফিজ থাকলে আমরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে পারতাম। এখন এত খেলা, তিন ফরম্যাটে খেলা কঠিন। এখানে সবাইকে বিশ্রাম দিতে হবে। তাসকিনের যেমন বিরতি দরকার, শরিফুলেরও বিরতি দরকার। এবাদত-খালেদ না হয় শুধু টেস্ট খেলে অন্য ফরম্যাট খেলে না। মোস্তাফিজকে এখানে সাহায্য করার জন্য হলেও রাখা উচিত। বোলার যখন তৈরি হয়ে যাবে তখন হয়ত মোস্তাফিজকে প্রয়োজন হবে না। আমি এটা জানি সাদা বলে মোস্তাফিজ ভয়ংকর, কিন্তু এটাও জানি, লাল বলেও সে প্রতিপক্ষের কাছে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।’
খালেদ মাহমুদ সুজন সাকিব-তামিমের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সাকিব-তামিমদের বয়স ৩৪-৩৫। তাদের এখন বিরতি প্রয়োজন, তারা এটার যোগ্য। কিন্তু লিটন দাস তো বিশ্রামের যোগ্য না। লিটন যদি সাকিব-তামিম হত, বলতাম সেও বিশ্রামের যোগ্য। মোস্তাফিজের অবশ্যই টেস্ট খেলা উচিৎ। এখন তার পিক টাইম। আমরা তো বলছি না সব টেস্ট খেলো। আমি চাই বছর ৬-৮টা টেস্ট ম্যাচ বছরে তার খেলা উচিত। সেটা করলে আমরা রোটেট করতে পারব। আমাদের ১২ জনের একটা ফাস্ট বোলারদের পুল দরকার যারা তিন ফরম্যাটেই পারফর্ম করতে পারবে।র অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তানের মত এত ফাস্ট বোলার বাংলাদেশের নেই। ১৪০ গতিতে বল করার মত আমাদের চার-পাঁচটা ছেলেই আছে। টেস্ট ম্যাচে ১২৫-১৩০ গতি দিয়ে পারবেন না। টেস্ট জিততে হলে ১৪০+ বোলার দিয়েই জিততে হবে। এজন্যই আমি মনে করি মোস্তাফিজের খেলা উচিত। একসময় শুনেছিলাম বায়োবাবলের কারণে খেলতে চায় না। তবে আমার মনে হয় না এগুলো কোনো অজুহাত হতে পারে। তাসকিন, শরিফুলরা খেলতে পারলে, তারও খেলা উচিত। যেহেতু ওকে আমরা ছুটি দিয়ে দিয়েছি। আইপিএল খেলছে। এখন ওকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। আইপিএল খেলুক। আইপিএলে আমাদের একজন প্রতিনিধিত্ব করছে এটা আমাদের জন্য বড় একটা ব্যাপার। আমরা চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটা টেস্ট হলেও খেলুক।’
মোস্তাফিজের আইপিএলে খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইপিএলে কয়টা ম্যাচ খেলেন? ৬টাই ধরলাম। খালেদ, এবাদত, তাসকিন, শরিফুল দুই টেস্টের চার ইনিংসে হয়ত ৬০ ওভার করে বল করে। ওয়ার্কলোড তো একই হচ্ছে! আপনি কোথায় বেশি ওয়ার্কলোড নিচ্ছেন? আপনি তো আইপিএলই বেশি খেলেন, আর তো কিছু বেশি খেলেন না। যুক্তির কথায় যদি আসি, ওয়ার্কলোড কোথায় বেশি আসে? আপনি আইপিএল খেলতে যাবেন, যেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। আপনি বিসিবির অধীনে খেলেন, দেশের খেলায় মনোযোগ দিতে হবে। আমি মনে করি মোস্তাফিজ বুঝবে। ওকে আমাদের দরকার। এ মুহূর্তে ওকে খুবই প্রয়োজন।’
টি-টোয়েন্টি খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা এখানে ৪ ওভারে ৪০ রান দিবেন একদিন, ৪ ওভারে ২০ রান দিবেন একদিন ৩ উইকেট পাবেন। টেস্ট দিয়েই তো ক্রিকেট শুরু হয়েছে। এখানে বাকবিতণ্ডার কিছু নেই। তবে আমার মনে হয় না খেলোয়াড়রা বলবে এই ফরম্যাট খেলব, এই ফরম্যাট খেলব না। আপনি তামিম সাকিব হলে বিষয়টা শোভা পায়। মোস্তাফিজের এটা বলা শোভা পায় না। সাদা বলে হয়ত টাকার ব্যাপারটা বেশি। আইপিএল খেললে হয়ত ২-৪ কোটি টাকা পাব। ক্রিকেট কি টাকার চেয়ে বড় নয়? দেশ কি টাকার চেয়ে বড় নয়? আমরা তো টাকার জন্য খেলিনি। একজন ক্রিকেটারকে এখন মৃত্যুর সময় বিসিবির সহায়তা লাগে। ওদের তো লাগবে না। ওরা বরং অন্যদের সহায়তা করতে পারে। দেশের জন্য কেন আমি খেলব না?’
এমপি/আরএ/