আবারও তামিম-বিজয়ের দ্বিশত রানের জুটি
এনামুল হক বিজয় আফসোস করতেই পারেন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শেষ হয়ে গেলে দেখে। কারণ স্বপ্নের মতো একটি লিগ শেষ করেছেন। আগের ম্যাচেই বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক র্স্পশ করা এনামুল হক বিজয় শেষ ম্যাচেও রানের দেখা পেয়েছেন। এবং সেই রান করার মাঝে আছে আফসোসও। মাত্র ৪ রানের জন্য লিগের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পাননি।
এনামুল হক বিজয়ের মতো করে না হলেও কিছুটা আফসোস করবেন জাতীয় দলের তামিম ইকবাল। তিনি পেয়েছেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই দুই সেঞ্চুরির আগে তিনি ৯০ রানে আউট হয়ে আরেকটি সেঞ্চুরি করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনারে ব্যাট থেকে যদি এ রকম রান আসে,তাহলে বুঝে নিতে হবে দিনটি ছিল তাদের। ওপেনিংয়ে রানও এসেছে পেটমোটা আর দলের সংগ্রহও হয়েছে আকাশ ছোঁয়া। সেখানে প্রতিপক্ষ দল বানের পানির মতো ভেসে যাওয়ারই কথা।
যেমনটি হয়েছিল আগের ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে। তামিম-বিজয় জুটিই রূপগঞ্জ টাইগার্সের করা ২২৯ রান টপকে গিয়েছিলেন মাত্র ২৬.৪ ওভারে ২৩৪ রান করে। আজ তারা দুই জনে করেছেন ৩১.১ ওভারে ২১৫ রান। বিকেএসপির ৩ নম্বার মাঠে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) প্রাইম ব্যাংক টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামার কারণে তামিম-বিজেয়র এ রকম সুচনায় দাঁড়িয়ে ৭ উইকেটে ৩৫৫ রান সংগ্রহ করে।
জবাব দিতে নেমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪৭.৫ ওভারে ২৭৭ রান করে অলআউট হয়ে হার মানে ৭৮ রানে। জয় দিয়ে লিগ শেষ করে ১৫ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্লাব হয়েছে তৃতীয়। গতবার তারা রানার্সআপ হয়েছিল। গাজী গ্রুপের পয়েন্ট ১২। তারা সুপার লিগে ছয় দলের মাঝে সবার নিচে।
তামিম-বিজয় জুটি আগের ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ২৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। আজ তারা করেন ২১৫ রান। সর্বমোট ৪৩৯ রান করার পর তাদের মাঝে বিচ্ছেদ আসে। এনামুৃুল যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে তার লিগে চতুর্থ সেঞ্চুরি পাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। ঘরোয় ক্রিকেটে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরির দিকে দিয়ে তার সামনে ছিলেন শুধুই মোহামেডানের হয়ে খেলতে আসা কেনিয়ার স্টিভ টিকোলো। টিকোলো ৪ সেঞ্চুরিতে রান করেছিলেন ১২২২।
সেঞ্চুরির সংখ্যা র্স্পশ আর মোট রান অতিক্রম করার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠে। কিন্তু ৯৪ রানে হুসনা হাবিবের বলে বোল্ড হয়ে গেলে আনন্দের মাঝেও যেন বিষাদ নেমে আসে বিজয়ের আকাশে। যেমনটি নেমে এসেছিল আগের ম্যাচে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে হাজার রান করার পরও দলকে চ্যাম্পিয়ন না করাতে পেরে। বিজয়ের ৮৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা ও ৮টি চার। লিগে ১৫ ম্যাচে তার রান ১১৩৮।
এটি ছিল তার লিগে নবম হাফ সেঞ্চুরি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটিও সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরি। বিজয় আউট হওয়ার অনেক আগেই তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করে ১৩৭ রানে আউট হয়ে যান আরাফাত সানির বলে রাকিবুল আতিকের হাতে ধরা পড়ে। তিনি ১২২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরপরই আল আমিন জুনিয়রের উপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বহিয়ে দেন এক ওভারে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান নিয়ে। পরের ওভারে আরাফাত সানির উপর দিয়েও একই তান্ডব করেন পরপর ৪ বলে এক বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারিতে ১৮ রান তুলে নিয়ে। পরের বলে অবশ্য আউট হয়ে যান। তার ইনিংসে ছিল ৬ ছক্কা ও ১৩ চার। তামিম যখন আউট হন, তখন বিজয়ের রান ছিল ৭৫। দুই ওপেনারের এমন সূচনার পর পরবর্তিতে উইকেটে যে ব্যাটসম্যানই এসেছেন তিনিই মারমুখি ব্যাটিং করেছেন। মুমিনুল ১৪ বলে ২০, মোহাম্মদ মিঠুন ২৬ বরে ৩৯, নাসির হোসেন ১৭ বলে ২০, করিম জানাত ১০ বলে ২০ রান করেন। প্রাইম ব্যাংকের রান হয় ৭ উইকেটে ৩৫৫। এটি এবারের লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আগে সর্বোচ্চ রানও ছিল প্রাইম ব্যাংকের। শাইনপুকুরের বিপক্ষে তারা করেছিল ৫ উইকেটে ৩৮৮ রান। গাজী গ্রুপের নিলয় ৫৪ রানে ৩টি ও হুসনা হাবিব ৮৩ রানে ২ উইকেট নেন।
মোট ৩৫৫ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স শুরুতেই উইকেট হারায় ওপেনার আরাফাত সানিকে হারিয়ে। তিনি কোনো রানই করতে পারেননি। তবে ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকে জুটিতে আল আমিন জুনিয়র ও মেহরব হোসেন ১৪৭ রান যোগ করে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ১৫ রানের ব্যবধানে দুই জনেই আউট হলে আবার বিপদে পড়ে গাজী গ্রুপ। যে বিপদ পরে আর তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ৪৭ রানে হারায় শেষ ৫ উইকেট। আল আমিন জুনিয়র ৯১ বলে ১৪ চারে ৮৭ ও মেহরব হোসেন ৮৫ বলে ২ ছক্কা ও ৮ চারে ৭১ রান করেন। প্রাইম ব্যাংকের তাইজুল ৫০ ও রুবেল ৬৭ রানে ৩টি করে এবং রাকিবুল হাসান ৪২ ও করিম হানাত ৪৮ রানে নেন ২টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা হন তামিম ইকবাল।
এমপি/এমএমএ/