দিনটি ছিল শুধুই বাংলাদেশের বোলারদের
স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েছে হাতে। করেছে অসাধ্য সাধন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাত্তাই দেয়নি। হারিয়েছে ৯ উইকেটের শোচণীয় ব্যবধানে। সেঞ্চুরিয়ানে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ১৫৪ রান বাংলাদেশ টপকে যায় ২৬.৩ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে। ম্যাচসেরা ও সিরিজ সেরা হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের রেকর্ড খুব একটা নেই। সেই জয়গুলো আবার দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে। এবারই প্রথম শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল। অথচ এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটেই ছিল না কোনো জয়। চির আরাধ্য হয়ে থাকা একটি জয়ের জন্য বাংলাদেশ তীর্থের কাকের মতো ছিল।
সেখানে সেঞ্চুরিয়ানে প্রথম ম্যাচেই ৩৮ রানে হারিয়ে সেই খরা কাটিয়েছিল। খরা কাটানোর পর নতুন করে স্বপ্নের বীজ বুনেছিল সিরিজ জেতার। জোহানেসবার্গে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ার পর আবার সেই সেঞ্চুরিয়ানেই ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে ধরা দিল সিরিজ জয়। যেখানে মাত্র কিছুদিন আগে ভারতের মতো দল হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামেও বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেট। সেই সিঙ্গে সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এটি ছিল বাংলাদেশের ৩০তম সিরিজ জয়।
অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশ স্বাগতিকদের কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ার সুযোগ দেয়নি। ১০০ ওভারের ম্যাচে আয়ু ছিল মাত্র ৬৩.৩ ওভার। তাসকিনের ৫ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশ সেই রান অতিক্রম করে তামিম ইকবালের অপরাজিত ৮৭ রানে মাত্র ২৬.৩ ওভারে লিটনের উইকটে হারিয়ে। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানেড সুপার লিগে বাংলাদেশ ১৮ ম্যাচে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের শীর্ষ স্থান আরও মজবুত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ৪৯। পয়েনট টেবিলে তাদের অবস্থান নবম।
সেঞ্চুরিয়ানে প্রথম ম্যাচ ছিল রান উৎসবের। আজকের ম্যাচ ছিল তার বিপরীত। বোলারদের স্বর্গরাজ্য। তবে তা দুই দলের নয়। শুধুইু বাংলাদেশের বোলারদের। তাসকিন একাই নেন ৫ উইকটে। সাকিবের দখলে ২টি। ১টি করে ছিল মিরাজ ও শরিফুলের। বাংলাদেশের একমাত্র উইকেটটি ছিল কেশব মহারাজের।
জোহানেসবার্গে বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছিল ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে। একই ঘটনা ঘটেছে আজকের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে। টস জিতে তারা ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে তারা টস জিতে বাংলাদেশকে (৩১৪/৭) ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে রানের পাহাড় গড়েছিল।
কিন্তু আজ তারা নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পড়ে ৩৭ ওভারে মাত্র ১৫৪ রানে অলআউট হয়ে। তবে তারা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে কিন্তু এভাবে গুটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। জান্নেমান মালান ও ডি কক উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন ৬.৫ ওভারে ৪৬ রান এনে দিয়ে। মিরাজ জুটি ভাঙার পর তাসকিন ভয়ংকর হয়ে উঠলে রুদ্ধ হয়ে যায় তাদের রানের চাকা। ১৭ রানে হারায় ৪ উইকেট। এই ৪ উইকেটের ২টি ছিল তাসকিনের। ১টি করে ছিল সাকিব ও শরিফুলের।
এই ধাক্কা পরে আর তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।এই না পারার কারণও ছিল তাসকিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠলে। ৪ ওভারের পরের স্পেলে তিনি তুলে ৩ উইকেট। যেখানে এক ওভারেই ছিল ২টি। উইকেটগুলোও ছিল বেশ বড়। ইনিংসের মেরামাতের চেষ্টায় থাকা ডেবিড মিলার (১৬) ও পিটোরিয়াসের (২০) সঙ্গে রাবাদার (৪) উইকেট। তাসকিন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেন। আগের ৫ উইকেট ছিল অভিষেকেই ভারেতর বিপক্ষে।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫৪ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পরও মনে ভয় ছিল প্রোটিয়া পেসারদের নিয়ে। কারণ যে উইকেটে তাসকিন ছড়ি ঘুরাতে পারেন, সেই উইকেটে স্বাগতিকদের রাবাদা-এনগিডিরাও ভযংকর হয়ে উঠতে পারেন। এটাই স্বাভাবিক। জোহানেসবার্গে তারা তাই করে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচ জিতে ইতিহাস রচনা করার পর সিরিজ জিতে নতুন করে ইতিহাস রচনা করার স্বপ্নে বিভোর তামিম বাহিনী কোনো রকমের সুযোগই দেননি। শুরুতে তামিম-লিটন সাবধানী হলেও পরে চড়াও হন। এখানে নেতৃত্ব দেন তামিম । অনেকদিন পর তামিম ফেরেন চেনা রূপে আগ্রাসী হয়ে। সম্প্রতি এ রকম আগ্রাসী ব্যাটিং করে থাকেন লিটন দাস। কিন্তু আজ তিনি ছিলেন আড়ালে।
রাবাদার এক ওভারে পারেন ৪ বাউন্ডারি। তামিম ৫২ বলে যখন ৫২তম ফিফটি পূর্ণ করেন, তখন লিটনের রান ২১। এক পর্যায়ে দুই জনের জুটিতে শতরানও পার হয়ে যায়। দুইজনে যেভাবে খেলছিলেন , তাতে করে বাংলাদেশের ১০ উইকেটে জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দলীয় ১২৭ লিটন আউট হয়ে গেলে সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। লিটন ৪৮ রানে আউট হন মহারাজের বলে বাভুমার হাতে ধরা পড়ে। অপরদিকে তামিম ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু টার্গেট অতিক্রম হয়ে যাওয়াতে ৮২ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ফিরে আসতে হয় বিজয়ীর বেশে। তার ইনিংসে ছিল ১৪টি বাউন্ডারি। সিরিজ জয়ী রান আসে সাকিবের বাউন্ডারি থেকে। সাকিব ২০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
এমপি/এমএমএ/