বিশ্বকাপ ক্রিকেট
পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের বিজয় নিশান
প্রথমবারের মতো মেয়েদের বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই প্রথম জয় পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশের মেয়েদের। তৃতীয় ম্যাচেই অধরা জয় এসে ধরা দিয়েছে। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাস গড়া জয় পেতে বাংলাদেশ বেছে নিয়েছিল পাকিস্তানকে। হারিয়েছে ৯ রানে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে করে ২৩৪ রান। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান ওপেনার সিদরা আমিনের সেঞ্চুরিতে (১০৪) ছিল জয়ের পথেই। কিন্তু বাংলাশের বোলারদের অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে আসাতে পাকিস্তানের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে স্বাধীনতার মাসে সুদূর নিউ জিল্যান্ডে উড়ে বাংলাদেশের বিজয় নিশান। পাকিস্তান ৯ উইকেটে করে ২২৫ রান। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ পেল প্রথম জয়। পয়েন্ট টেবিলের সাত থেকে উঠে এসেছে ছয়ে। পাকিস্তানের ছিল টানা চতুর্থ হার। পয়েন্ট টেবিলে তারা সবার নিচে। উল্লেখ ১৯৯৯ সালে ছেলেরাও পথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ৬২ রানে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ২৩৪ রান করেও ছিল বড় হারের মুখে। সিদরা আমিনের সেঞ্চুরিতে এক পর্যায়ে পাকিস্তানের রান ছিল ২ উইকেটে ৪১ ওভার ৫ বলে ১৮২। জয়ের জন্য ৪৯ বলে ৮ উইকেটে প্রয়োজন ছিল ৫৩ রানের। কিন্তু এরপরই দারুণভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশের মেয়েরা। মাত্র ১৩ বলে ৫ রানে তুলে নেন ৫ উইকট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময় যতই গড়িয়েছে বাংলাদেশের জয়ের সূর্য ততই বড় হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিদরা আমিনের সেঞ্চুরিকে ব্যর্থতায় পর্যবেসিত করে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে ২২৫ রানে আটকে রেখে জয় তুলে নেয় ৯ রানে। বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে। ১৮ মার্চ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ চতুর্থ ম্যাচ খেলবে উইন্ডিজের বিপক্ষে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আসরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করলেও উদ্বোধনী জুটিতে কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচের তুলনায় রান কম এসেছে। প্রথম দুই ম্যাচে রান এসেছিল যথাক্রমে ৬৯ ও ৫৯। এবার আসে মাত্র ৩৭। তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আসে। প্রথম ম্যাচে উদ্বোধন করেছিলেন শারমিন আক্তার ও শামীমা সুলতানা। দ্বিতীয় ম্যাচে দুই ওপেনার ছিলেন শামীমা সুলতানা ও ফারজানা হক পিংকি। এই ম্যাচে আবার উদ্বোধন করেন শামীমা ও শারমিন। উদ্বোধনী জুটিতে কম রান আসার পরও আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। আর এখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ফারজানা হক পিংকি। ১১৫ বলে ৫ চারে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন দলনায়ক নিগার সুলতানা ৬৪ বলে ১ চারে ৪৬ ও ওপেনার শারমীন আক্তার ৫৬ বলে ৬ চারে ৪৪ রান করে। এ ছাড়া ছোট ছোট অবদান রাখেন শামীমা (১৭), রুমানা (১৬), সালমা অপরাজিত (১১), রিতু মনি ১১ রান করে।
উদ্বোধনী জুটিতে শামীমা ও শারমিন ৮ ওভারে ৫ বলে ৩৭ রান এনে দেন। শামীমা ১৭ রান করে নিদা দারের বলে ফাতিমা সানার হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শারমিন ও ফারজানা ৪২ রান যোগ করেন ১০ ওভার ২ বলে। স্ট্রাইক রেট ৮০ গড়ে শারমিন ৫৫ বলে ৪৪ রান করে ওমাইমা সোহেলির বলে বোল্ড হওয়ার পর গড়ে উঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ফারজানা ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা মিলে ২০ ওভার ৪ বলে যোগ করেন ৯৬ রান। জুটি ভাঙে নিগার আউট হলে। শারমিনের মতো নিগারও হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন ৪৬ রানে ফাতিমা সানার বলে এলিবিডব্লিউর শিকার হয়ে। এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৩৯ ওভার ৫ বলে ৩ উইকেটে ১৭৫। ৫০ ওভার শেষে রান আড়ই শ অতিক্রম করার কথা। তখনও ৫২ রান করে ফারজানা আছেন ক্রিজে। কিন্তু এ সময় আর আশানুরূপ রান সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে রান আসে ৬২। শেষ ৫ ওভারে রান আসে ৩৩। এ সময় একটিও বাউন্ডারি হয়নি। সর্বশেষ বাউন্ডারি হয়েছিল ৪৩ ওভার ৩ বলের সময় রুমানা আহমেদের ব্যাট থেকে। তিনি নিদা দারের বলে পরপর দুইটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন।
বাংলাদেশের রান আড়ই শ অতিক্রম না করার কারণ ফারজানা হক পিংকি আউট হওয়ার পর আর কেউ সেভাবে রান করতে পারেননি। ৮৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি করে ফারজানা আউট হন ৭১ রানে। বল খেলেন ১১৫টি। নাসরা সান্দুর বলে সিদরা নাওয়াজ তাকে স্ট্যাম্পিং করেন। ফারজানা আউট হওয়ার আগে রুমানা আউট হয়ে যান ১৩ বলে ২ চারে ১৬ রান করে। পাকিস্তানের হয়ে ৪১ রানে ৩ উইকেট নেন নাসরা সান্দু।
মেয়েদের ক্রিকেটে ২৩৭ রান অনেক নির্ভরযোগ্য সংগ্রহ। কিন্তু হ্যামিলটনের জন্য নয়। এখানে রান অনেক বেশি উঠে। এবারের আসরে এর আগে তিন ম্যাচে আগে ব্যাট করে রান উঠেছিল ৩১৭, ৩১০ ও ২৬০। এটাই ছিল বাংলাদেশর অনুপ্রেরণা। শেষ পর্যন্ত তারা সেই ট্রেডিশন ভাঙতে দেয়নি। জিততে দেয়নি পরে ব্যাট করা পাকিস্তানকে।
পাকিস্তানকে ভালো সূচনা এনে দেন উদ্বোধনী জুটিতে নাহিদা ও সিদরা ২৩ ওভার ৪ বলে ৯১ রান যোগ করে। নাহিদাকে ৪৩ রানে ফিরিয়ে দিয়ে রুমানা জুটি ভাঙলেও তাকে খুব বেশি ফায়দা হয়নি। বিসমা মারুফ এসে জুটি বাঁধার পর যোগ করেন ৬৪ রান। দলের রান তখন ২ উইকেটে ৩৭ ওভার ৫ বলে ১৫৫। ওমাইমা সোহেলি ২৮ রানের জুটি গড়ে দলকে আরেকটি জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ১০ রানে ফিরে যাওয়ার পর রীতিমতো ঝড় বয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনের উপর দিয়ে। ২ উইকেটে ১৮৩ রান থেকে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৮৮। মাত্র ১৩ বলে ৫ রানে নেই ৫ উইকেট। ওমাইমাকে আউট করার পর ফাহিমা খাতুন পরপর দুই বলে আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানাকে আউট করে খেলা দারুণভাবে জমিয়ে তুলেন। তার ওভারের শেষ বলে সিদরা নাওয়াজ রান আউট হলে ম্যাচে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ হারায়। এই তিন উইকেটের মাঝে রুমানা ফিরিয়ে দেন নিদা দারকে। এ সময় বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জেগে উঠে। বাংলাদেশের চাই ৩ উইকেট। পাকিস্তানের প্রয়োজন ৩০ বলে ৫০ রান। তখনও ওপেনার সিদরা আমিন থাকায় বাংলাদেশের জন্য যেমন ভয় ছিল, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের আশা। ১৩৬ বলে ৮ চারে শতরান পূর্ণ করে সিদরা ছুটেন দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে। ডায়না বেগকে নিয়ে তিনি ছুটছিলেনও। জুটিতে ২১ রান এনে পাকিস্তানের পাল্লা ভারীই করে তুলেছিলেন। ডায়না ১২ বলে ১২ রান করে সালমার শিকার হওয়ার পর সিদরা আমিনও ১০৪ রানে রানে আউট হয়ে গেলে পাকিস্তানের শেষ সম্ভাবনাও নিভে যায়। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। তারা নিতে পারেন ৬ রান। ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফাহিমা খাতুন। রুমানা আহমেদ ২৯ রানে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন জাহানারা আলম ও সালমা খাতুন।
এমপি/টিটি