পাকিস্তান বলেই বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের কথা ভাবছে বাংলাদেশের মেয়েরা
মেয়েদের বিশ্বকাপ বাংলাদেশ নবীন। আট দলের আসর, আবার লিগ পদ্ধতিতে। সবার সঙ্গেই খেলতে হবে। নিজেদের পরখ করে নেওয়ার ভালো সুযোগ। অনেক দলের বিপক্ষে আবার প্রথমবারের মতো খেলা হবে। যতটুকু সম্ভব প্রথম আসরকে স্মরনীয় করে রাখার সুযোগ অবারিত।
সেই সম্ভাবনার বীজ বপন নেহাত মন্দ হয়নি প্রথম দুই ম্যাচে। প্রথম ম্যাচেতো জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যায় ৩২ রানে। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ড। প্রথমবারের মতো হয়েছিল মুখোমুখি। এখানে হারলেও আশা জাগানিয়া ছিল নিজেদের খেলা।
প্রথমে ব্যাট করে চমৎকার শুরুর পর পরে তা আর ধরে রাখতে পারেনি। ফলে হার মানে ৯ উইকেটে। এই ম্যাচে বৃষ্টি এসে ভালোই বাগড়া দিয়েছিল খেলা নেমে এসেছিল ২৭ ওভারে। বাংলাদেশের বোলারদের বোলিং করতে হয়েছিল অনেক বৃষ্টির মাঝে।
এই দুই ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছিল ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে। এরপর বাংলাদেশ দল একটা লম্বা বিরতি পায় ৬ দিনের। এবার তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। আর প্রতিপক্ষ পাকিস্তান হওয়াতেই বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথম জয়ের স্বপ্নের সাগরে ডুব দিয়েছে। দুই চোখ বুঝে দেখছে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। খেলা শুরু হবে হ্যামিলটনে সোমবার ভোর রাত ৪টায়।
বাংলাদেশের মেয়েদের এমন স্বপ্ন কিন্তু আকাশচুম্বি নয়। হাতের নাগালে প্রয়োজন শুধু নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেয়া। যেমনটি ঢেলে দিয়ে বিশ্বকাপে আসার পথে জিম্বাবুয়েতে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের ৭ উইকেটে করা ২০১ রান বাংলাদেশের মেয়েরা পাড়ি দিয়েছিল ২ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে। এর আগের ম্যাচেও বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়েছিল তাদের মাঠেই লাহোরে ২০১৯ সালে। সেই ম্যাচ জিতেছিল ১ বল হাতে রেখে ১ উইকেটে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও লড়াই কিন্তু হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। আবার পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা দায়ক। ১১ বারের মোকাবিলাতে বাংলাদেশের জয় ৫টিতে। পাকিস্তানের জয় ৬টিতে। এই ম্যাচ জিতলে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের পাশাপাশি আসবে জয়ের সমতাও।
দুই দলই কিন্তু এখন পর্যন্ত আসরে কোনো জয় পায়নি। বাংলাদেশ দুই ও পাকিস্তান তিন ম্যাচে হেরেছে। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের অবস্থান সাকে, পাকিস্তানের আটে। যে দল জিতে উঠে যাবে ছয়ে।
আগের দুই ম্যাচের লড়াকু মনোভাবের সঙ্গে পাকিস্তানকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা আত্মবিশ্বাসীও। দেখছেন প্রথম জয়ের খুব ভালো সুযোগ।
তিনি বলেন, ‘ওদের বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি। যে কারণে ওদেরকে আমরা খুব ভালোভাবে চিনি। ওদের খেলা সর্ম্পকে খুব ভালো ধারণা যে কারণে আমার মনে হচ্ছে বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয় পাওয়ার খুব ভালো একটা সুযোগ আছে।’
বাংলাদেশ আগের দুই ম্যাচে লড়াই করেছে। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে। বোলিং ছিল দৃষ্টিনন্দন। আর ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটি ছিল আশাজাগানিয়া। প্রথম ম্যাচে শামীমা সুলাতান ও শারমিন আক্তার ১৯.৩ ওভারে ৬৯ রান এনে দিয়ে জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন। পরের ব্যাটসম্যানরা তা আর ধরে রাখতে পারেননি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনিী জুটিতে পরিবর্তন আসে।
শামীমা সুলতানার সঙ্গে ফারজানা হক ইনিংসের হোড়পত্তন করতে এসে ৯.২ ওভারে ৫৯ রান এনে দিয়ে বড় সংগ্রহের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন। এখানেও পরের ব্যাটসম্যানরা তাল মেলাতে না পারার কারণে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে গিয়েছিল ৮ উইকেটে ১৪০ রানে।
নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমরা হয়তো জিততে পারিনি। কিন্তু গত দুই ম্যাচে মেয়েরা দুর্দান্ত খেলেছে। হারলেও এই দুই ম্যাচে আমরা অনেক উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বোলারদের আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। এই ম্যাচে এই দুইটি বিভাগের সফল বাস্তবায়ন করতে পারলে দারুন একটা ম্যাচ হবে।’
হ্যামিলটনে এবারের আসরের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আগের তিন ম্যাচের দুইটিতে তিনশোর্ধ রান হয়েছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে ৩১০ রান করে ম্যাচ জিতেছিল ১২ রানে। সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রিচেল হাইনস (১৩০) ও ইংল্যান্ডের নেট স্কিভার (অফরাজিত ১০৯)।
উইন্ডিজের বিপক্ষে স্মৃতি মানধানা (১২৩) ও হারমানপ্রিত কৌরের (১০৯) জোড়া সেঞ্চুরিতে ভারত ৮ উইকেটে ৩১৭ রান করে ম্যাচ জিতেছিল ১৫৫ রানে। অপর ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ড ৯ উইকেটে ২৬০ রান করে জয়ী হয়েছিল ৬২ রানে। দেখা যাচ্ছে আগে ব্যাট করা দলই জয়ী হয়েছে। বড় স্কোরও গড়েছে।
নিগার সুলতানা বলেন, ‘উইকেট ভালো হবে বলেই মনে করি। এখানে আমাদের ভালো অনুশীলন হয়েছে । বিশ্রামও পেয়েছি খুব ভালো। আমরা প্রস্তুত পরের ম্যাচের জন্য।’
এমপি/এমএমএ/