'মা আমি যুদ্ধে যাচ্ছি, দেশ স্বাধীন হলে দেখা হবে'
'মা যুদ্ধে আমি যাচ্ছি। আমার সঙ্গে স্বাধীন দেশে দেখা হবে'-মায়ের উদ্দেশ্যে ছোট্ট এই চিরকুট ৭১ সালের ১৮ এপ্রিল লিখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা কমান্ডার আশরাফ বাবুল চৌধুরী। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর অগ্নিঝরা ভাষণে শুনে ১৯ বছরের তরুণ আশরাফ বাবুল চৌধুরীর মনেও স্পৃহা জেগে উঠে দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে। কিন্তু সেইদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে দেখেন পকেটে কানাকড়িও নেই। কিভাবে হবিগঞ্জ শহরে আসবেন এ নিয়ে পড়লেন বিপাকে।
প্রায় ১৭ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে নিজ গৃহে নিভৃতে আছেন এই গেরিলা যোদ্ধা। ঢাকা প্রকাশকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মৃক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, পরে হেঁটে আসার সিদ্ধান্ত নিই। প্রায় ৮ মাইল হেঁটে শহরে এসে বাসায় না গিয়ে গোলাম মুসাবিরর সাথে দেখা করি। পরে মুসাবির ভাইসহ কয়েকজন মিলে 'বিক্ষুদ্ধ বাংলার মুক্তিবাহিনী' গঠন করি।
এপ্রিলের ১৫/১৬ তারিখ কমান্ডার মানিক চৌধুরীর সাথে দেখা করি। উনার পরামর্শক্রমে তার ছোট ভাই ইয়াকুত চৌধুরীর সাথে ১৮ এপ্রিল মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করে এক রাতে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিই।
ভারতের আশ্রমবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ট্রেনিং নেই। এরমধ্যে একদিন দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রীমঙ্গল খাদ্য গুদাম চাল আনার জন্য। চাল নিয়ে রওনার দেবার পর পরই শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন তেলের ডিপোর ট্যাঙ্কিগুলো দুইটি জঙ্গি বিমান মূহমূহ হামলা শুরু করে। সেখান থেকে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করে প্রাণ রক্ষা পাই। পরে চালগুলো নিয়ে ভারতে প্রবেশ করি।
পরে একদিন প্যারেট গ্রাউন্ডে কর্ণেল বাসকি বলেন তোমাদেরকে অপারেশনে যেতে হবে। আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হল কয়েকটা রাইফেল, গ্রেনেড ও প্রয়োজন মাফিক বিস্ফোরক। পনের জনের গ্রুপের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেট জেলার জকিগঞ্জে জুলাই ব্রিজ উড়িয়ে দেবার জন্য। নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডার সাদি।
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় জুলাই ব্রীজের কাছে অবস্থান নিই। সেদিন রাতেই ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হই। ফলে সিলেট- জকিগঞ্জের যোগযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। পরে আমরা সবাই নিরাপদে আবারও আশ্রম বাড়িতে চলে যাই।
উল্লেখ্য, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা শৈলজুড়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী ও মোস্তফা খানম দম্পত্তির ৫ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় আশরাফ বাবুল চৌধুরী।
এএজেড