কাজে যোগ দেননি সিলেটের চা শ্রমিকরা
মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের নিয়ে মধ্যরাতের বৈঠক মানছে না সিলেটের চা শ্রমিকরা। গভীর রাতে শেষ হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত সোমবার সকালে জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন চা শ্রমিকরা। তারা বলছেন গভীর রাতে সিদ্বান্ত হয় চোর-ডাকাতের। বিভিন্ন ভ্যালি এবং পঞ্চায়েত কমিটির নেতারাও কেন্দ্রীয় নেতাদের ওই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ফলে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে অনড় রয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রবিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। সেই বৈঠক শেষ হয় রাত ৩টার দিকে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় বলেন, ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা মানে না। রাতের সিদ্ধান্ত চোর-ডাকাতের সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা খুবই ক্ষুব্ধ। সিলেট ভ্যালি, শ্রীমঙ্গল বালিশিরা ভ্যালি, কমলগঞ্জ ভ্যালিসহ সবখানে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাজে যোগ দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৩ দিন ধরে শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করছে। অথচ রাতের অন্ধকারে ১২০ টাকায় কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল! এটা তো হঠকারী সিদ্ধান্ত। আমাদের দাবি, ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন তবেই আমরা কাজে ফিরে যাব।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অজিত রায় বলেন, ‘চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কোনো ভ্যালি বা পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে কথা বলেনি। তারা এখন শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজে যোগ দেওয়াতে চাইছে।’
পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে-এমন প্রশ্নে এই চা শ্রমিক নেতা বলেন, ‘রবিবার আমরা আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেছিলাম। তখন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এসে আমাদের কাছে দুই দিন সময় চেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি আমাদের দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আশ্বাস দেন। আমরা তার আশ্বাসে সড়ক অবরোধ থেকে সরে আসি। আপাতত বাগানের মধ্যেই আমরা আন্দোলন করছি। আগামীকালের মধ্যে আমরা যদি তার কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাই তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।’
এদিকে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিদেশ মোদিও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আগের মজুরিতেই যদি কাজে ফিরতে হয় তাহলে আমরা কেন এতদিন না খেয়ে ধর্মঘট করলাম?’
প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৮ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় তাদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। সেই ধর্মঘটের যবনিকাপাত ঘটেছে গতকাল রাতে, এমনটাই ছিল সকলের ধারণা।
এসআইএইচ