গাইবান্ধার ডিসির বদলি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন এলাকাবাসীর
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুল। ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুলের বদলির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানিয়েছে জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ । রবিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডাকযোগে এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের দপ্তরিক ইমেইলে এ আবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই গাইবান্ধায় যোগদানের পর থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুল স্থানীয় সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করে আসছেন। তিনি জনগণের সেবক না হয়ে শাসক হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন।
নানা প্রশাসনিক কাজে তার কক্ষে দেখা করতে গেলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির জেলায় জেলা প্রশাসক একজন সহকারী কমিশনারকে এপিএস নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু গাইবান্ধা একটি দ্বিতীয় শ্রেণির জেলা। তারপরও জেলা প্রশাসক প্রভাব খাঁটিয়ে একজন সহকারী কমিশনারকে এপিএস নিয়োগ দিয়েছেন। তার জন্য পৃথক কক্ষ স্থাপন করেছেন। দর্শনার্থীরা তার নিয়োগকৃত এপিএস (সহকারী কমিশনার) এর কাছে স্লিপের মাধ্যমে সাক্ষাতের কারণ উল্লেখ করতে হয়। স্লিপ পাঠিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়া যায় না।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাংবাদিকরা সরকার ও প্রশাসনের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জাতির সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক যোগদানের পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীকে অবগত করেন না। ফলে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের নির্বাচনী তথ্য প্রদানে অসহযোগিতা করেন। পাশাপাশি উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনকে পরামর্শ মূলক গুরুত্বপুর্ণ তথ্য কেউ তাকে জানাতে পারছেন না।
গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের নির্বাচনী ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানার সামনে স্থানীয় সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসকের নানা অসহযোগিতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এনিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হইচই শুরু হয়। এতে ইসি রাশেদা সুলতানা এবং রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্ষুব্ধ হন। পরে তাদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এসময় জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল সবার উদ্দেশে জানান, বক্তব্য প্রদানে সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরাসরি বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অথচ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সরকারের পক্ষে কথা বলে থাকেন।
এনিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলকে বদলির দাবি জানিয়ে দেশের প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার ২১ জন সাংবাদিক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আবেদন জানান। যা প্রতিবেদন আকারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আবেদনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের এমন আচরণের কারণে তার কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণও নেতিবাচক পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ প্রতি বুধবার গণশুনানি করা বাধ্যতামূলক। তিনি যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি প্রায় ৩০টি গণশুনানি হবার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সময় তিনি গণশুনানি করেননি। অল্পসংখ্যক গণশুনানি করলেও সাত-আটটির বেশি অভিযোগ শোনেন না। অনেকে শুনানি দিতে এসে ফিরে যান। অনেক সময় অন্য কর্মকর্তাদের দিয়েও গণশুনানি করান।
আবেদনে বলা হয়, তিনি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আইন প্রয়োগে শিথিলতা এসেছে। বর্তমানে জেলায় শতাধিক অবৈধ ইটভাটা চললেও অজ্ঞাত কারণে দু-চারটি ছাড়া বেশির ভাগ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তার কার্যালয়ের ৮৪ জন কর্মচারী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা ভোররাত পর্যন্ত চালানোর কারণে দূরের নারী প্রার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেকে বারান্দায় নিরাপত্তাহীনতায় রাত্রিযাপন করে সকালে বাড়ি ফেরেন।
তিনি তার অধীনস্ত কর্মচারী ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন বলে শোনা গেছে। সম্প্রতি তিনি প্রেস ক্লাব সভাপতিকে তার সম্মেলন কক্ষ থেকে বের করে দেন। আইনজীবীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ আছে। গাইবান্ধাবাসীর কাছে জেলা প্রশাসক এখন আতঙ্কের বিষয়। কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেক কর্মকর্তা তার ভয়ে অতিষ্ঠ হয়ে অন্যত্র বলদির চেষ্টা করছেন।
আবেদনে বলা হয়, এসব কিছুর মুলে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের বাবা (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের খুনিদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন বলে দম্ভ প্রকাশ করে অন্যদের তুচ্ছ করে অপমান করেন। জেলা প্রশাসকের আচরণের কারণে সরকার ও জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাই তাকে বদলি করা গাইবান্ধার মানুষের কাছে সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবেদনকারী সাংবাদিকরা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসকের বদলি চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আবেদন দেওয়া হয়। কোনো কাজ হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানানো হয়।
এ নিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।