কুড়িগ্রামে জনসম্মুখে নেই সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা, বাড়ছে দুর্নীতি
সরকারের মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের প্রচার থাকলেও কুড়িগ্রাম জেলায় মাঠ পর্যায়ে নেই উন্নয়নের প্রচারণা। আর এই প্রচারণা বা তালিকা জনসম্মুখে না থাকায় প্রকল্পে বাড়ছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। সরকারের ভাবমূর্তি আর প্রকল্পের স্বচ্ছতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের এবং উন্নয়নের তালিকা প্রকাশের দাবি সাধারণ মানুষের।
বর্তমান সরকারের এক যুগের বেশি মেয়াদকালে মেগা প্রকল্পের প্রচার-প্রচারণা থাকলেও জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় সরকারের উন্নয়ন বাস্তবায়নের নেই কোনো প্রচারণা। জেলার অধিকাংশ সরকারি অফিস গুলোতে স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের পোষ্টার, ফেস্টুন আর বিল বোর্ডে ভরা। এ ছাড়াও ইউনিয়ন কার্যালয় গুলোতে শুধুমাত্র সচেতনামূলক সাইন বোর্ড, পোষ্টার, ফেস্টুন বা বিল বোর্ড দেখা যায়। কিন্তু প্রান্তিক সাধারণ মানুষের জীবন মান পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য টিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপি, জনস্বাস্থ্য, বিএডিসি, বরেন্দ্র, সমাজসেবা, যুব উন্নয়ন, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, নারী মহিলা বিষয়ক, শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কি কি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হয়েছে তার কোনো তালিকা নেই। এতে করে মাঠ পর্যায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র না থাকায় সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রকল্প গ্রাম পর্যায়ে বাস্তবায়িত হলেও প্রচারণার অভাবে নিজ এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে অবগত নেই সাধারণ মানুষ। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অসাদু কর্মকর্তা ও দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র না থাকায় সাধারণ মানুষের অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। উন্নয়নের নামে গোপন বরাদ্দ মাঠ পর্যায়ে এনে ভাগ-বাটোয়ারা করারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ‘হামার ইউনিয়নের সামনে বাল্যবিয়ে রোধ, মাদক রোধসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কিছু পোষ্টার এবং সাইনবোর্ড আছে। এ ছাড়াও সরকার তার এক যুগে হামার ইউনিয়নে কি কি উন্নয়ন করছে এবং আগামীতে কি কি উন্নয়ন করবে তার কোনো প্রচারণা নেই। তাই আমরা কিছু জানিও না।
নাগেশ্বরী উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা লতিফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পরিষদসহ ইউনিয়ন কার্যালয় পর্যন্ত সরকারের উন্নয়নের কোনো ধরনের তালিকা নেই। সরকারের মেয়াদকালে কি কি উন্নয়ন হচ্ছে বা আগামীতে হবে তার তালিকার সাইন বোর্ড কিংবা অনলাইনেও নেই। দৃশ্যমান প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ এবং কাজের সিডিউল সম্পর্কে কিছু লেখা থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষ কিছু বলতেও পারে না। এ ছাড়াও কিছু অসাদু কর্মকর্তা আর দলীয় নেতা-কর্মীরা গোপনে প্রকল্প নিয়ে এসে কাগজ-কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেন।’
একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শুধু সংসদ আর ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় জানা যায় উন্নয়নের কিছু কথা। কিন্তু এলাকা ভিত্তিক কি কি উন্নয়ন হয়েছে বাস্তবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা দেওয়া থাকে না।
উলিপুর উপজেলার সংবাদকর্মী রোকনুজ্জামান বলেন, উলিপুরে বেশ কয়েকটি সরকারি বিভাগে তথ্যাধিকারে আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে সকলের জন্য তথ্য জানার অধিকার রয়েছে বলা হলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায় এর প্রতিফলন নেই। এতে করে প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন ব্যাহত হবার পাশাপাশি লুটপাট অব্যাহত রয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার সংবাদকর্মী পাভেল রহমান বলেন, অনলাইন হোক আর সাইন বোর্ড আকারে সরকারি কোনো প্রকল্পের বর্ণনা দেওয়া থাকে না। এমনিতে কর্মকর্তাদের কাছে প্রকল্প সম্পর্কে জানতে গেলে বলা হয় তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করে তথ্য নেন। এ ছাড়াও জেলা বা উপজেলার দুর্নীতি বিষয়ে রিপোর্ট করলে জেলাকে ছোট ও হেয় করা হচ্ছে। এই বাক্য এখন সরকারি কর্মকর্তাদের মুখরোচক একটি কথা হয়েছে। অথচ সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো বিভাগে তথ্য ও প্রচারণা নেই।
সরকারের মাঠ পর্যায় উন্নয়নের তথ্য প্রচারে পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ। তিনি সরকারের উন্নয়ন প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার আশ্বাস দেন।