‘অন্যের জমিতে ঘর বেঁধেছি জানি না কখন চলে যেতে বলে’
‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা, ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে। পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়, সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।’ আসমানীদের দৈন্যতার কথা পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার আসমানী কবিতায় এভাবেই তুলে ধরেছেন। রসুলপুরের আসমানীর সেই বাড়িকেও হার মানিয়েছেন ফাতেমা বেগমের জরাজীর্ণ বাড়িটি।
ঘরটির টিনের ছাউনিতে মরিচা ধরেছে, ছিদ্র হয়েছে অসংখ্য। সেই ছিদ্র দিয়ে গোনা যায় রাতের আকাশের তারা। খুঁটির অভাবে একদিকে হেলে পড়েছে ছোট্ট ঘরটি। যে খুঁটি রয়েছে তাও আবার নড়বড়ে। সামান্য বাতাসেই উল্টে পড়ে যাবে ঘরটি। তার উপর হেলে পড়া ঘরের দরজা অতিক্রম করে ঘরের ভিতরে ও বাইরে যাওয়াই দায়। এমনকি ঘরটি মেরামত করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তার।এভাবেই অন্যের জমিতে বছরের পর বছর বসবাস করছেন ঠাকুরগাঁও সদরের মথুরাপুর এলাকার ভূমিহীন ফাতেমা বেগমের(৪০) পরিবার।
জানা গেছে, সারাদিন বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার ও সন্তানকে পড়াশোনা করান তিনি। স্বামী মুনসুর আলী (৪৮) শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে তেমন কাজ করতে পারে না। তাই সংসারের পুরো ভার এসে পরে তার কাঁধে। নিজের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় ওই এলাকার রুসুল আলমের জমিতে পাটখড়ি দিয়ে কোনো মতো একটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। শীত বর্ষায় এই ঘরেই রাত্রীযাপন করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি অনেক গরিব। অন্যের বাসায় কাজ করে কোনোমতে জীবনযাপন করি। কোন রকমে থাকার মত একটি ঘর ছাড়া কিছুই নেই আমাদের। তা আবার অন্যের জমিতে ঘর বেঁধে আছি। জানি না কখন চলে যেতে বলে। তখন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কথায় যাব। সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেছি। আমাকে বলেছিল ঘর দিবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ঘর পেলাম না। আমার স্বামী অসুস্থ, একদিন কাজ করলে তিন দিন কাজ করতে পারে না। বড় ছেলেটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ছোট ছেলেটা ক্লাশ সিক্স ও মেয়েটা ক্লাশ ফাইভে পড়ে। তাদের পড়াশোনার খরচ চালাব না, নিজে খাব। আমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিলে খুবই উপকৃত হবো।’
এ বিষয়ে স্থানীয়রা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, বছর কয়েক আছে অন্যের জমিতে থাকার জন্য ঘরটি তৈরি করেন ফাতেমার স্বামী মুনসুর আলী। সংসার চলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে। শত কষ্টের মাঝেও তিনি সন্তানদের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়মিত স্কুলে পাঠায়। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। কখনো কখনো ঘর ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে চলে যায় কোনো আত্নীয়ের বাড়িতে। অথচ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধামন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর জোটেনি তাদের ভাগ্যে।
প্রতিবেশী মাসুমা, আক্তারা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তারা (ফাতেমা বেগমের পরিবার) একটি ঘরেই সবাই থাকে। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘরটা ভেঙে যাবে। ঘরের জন্য ভূমি অফিসে আবেদন করলেও একটি ঘর দেওয়া হয়নি। উল্টো যাদের সম্পদ আছে, ঘর আছে, তারাই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দ উপহারের ঘর পাচ্ছে। তার কিছুই নেই তার পরেও সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ফাতেমা বেগমের ঘরটি মেরামতের উদ্যোগ নিলেও অন্যের জমি হওয়ায় তা করতে পারেননি তারা। তাই সরকারিভাবে তাদের জন্য একটি ঘরের দাবি করেন তারা।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামশুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। পরিবারটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এসআইএইচ