ফুলবাড়ীতে ৪ মন্দিরে হামলা চালিয়ে মূর্তি ভাঙচুর
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৪টি পরিবারের ৪টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ৮টি মূর্তি ভাঙচুর করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২ মে) ভোররাতে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯২৯ এর সাব পিলার ১০০ থেকে ৪০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রায়পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিধি, গোরকমন্ডল ক্যাম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও সুমন দাস।
পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ভবেশ চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে হরিদেব মন্দির, বিনয় চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে মনসা মন্দির, থীরেন চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে মহাদেব মন্দির ও বীরেন চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে হামলা করেছে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ৪টি মন্দিরের মোট ৮টি মূর্তি ভাঙচুর করে।
বীরেন চন্দ্র বর্মন জানান, তার বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে গ্রামের সকলেই পূজা করেন। গেল তিন যুগ ধরে তারা এই মন্দিরে পূজার্চনা করে আসছেন। সোমবার সন্ধ্যায় তারা সকলে মন্দিরে প্রার্থনা করেন। মঙ্গলবার সকালে মন্দিরে পূজার জন্য এসে দেখতে পান মন্দিরের ভেতরে মূর্তিগুলো ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ ভোররাতে মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। এর আগে কোনোদিনই এই গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেনি।
ভবেশ চন্দ্র বর্মন ও ধীরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, একই রাতে গ্রামে ৪টি মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তারা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ফুলবাড়ী উপজেলা ইউনিটের সভাপতি সুনিল চন্দ্র রায় বলেন, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে তারা পুনরায় এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার দু:সাহস পাবে। তাই তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সংঘবদ্ধ চক্রটি মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাঙচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা অবশ্যই সরকারবিরোধী।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষজনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, হিন্দু জনগোষ্ঠীর সাথে মতবিনিময় করে তাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাঙচুরকারী দুর্বৃত্তদের অবশ্যই চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাও হবে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জেলা প্রশাসক মহাদয়ের নিদের্শে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।
এসআইএইচ