প্রতিপক্ষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন নিজেই

পঞ্চগড়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় মামুনের সহযোগী তুষার আলম প্রধান (৪০) কে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ফুলপাড়া থেকে মামুনকে ও পঞ্চগড় পৌরসভার রামের ডাংগা এলাকা থেকে তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রায়হান (৩২) নামে মামুনের অপর এক সহযোগী পলাতক রয়েছেন। পরে রাতেই তাদের পঞ্চগড় সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক।
সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে আসামিদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
গ্রেপ্তার মামুনুর রশিদ উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ফুলপাড়া এলাকার মশিউর রহমানের ছেলে। এ ছাড়া মামলার অপর দুই আসামি তুষার আলম প্রধানের বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার রামের ডাংগা এলাকায় এবং রায়হানের বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার পুরাতন ক্যাম্প এলাকায়।
সোমবার দুপুরে ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডিবি পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ফুলপাড়া এলাকার টমেটো চাষি ও ব্যবসায়ী মাসুদ রানা (৩৮)’র সঙ্গে একই এলাকার টমেটো ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। পরে গত শনিবার (৮ এপ্রিল) মামুন তার সহযোগী রায়হানের মুঠোফোন থেকে মাসুদকে কল করে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের মেসার্স রশিদ বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী পরিচয় দিয়ে তার টমেটো খেতে সাথী ফসল হিসেবে ঢেঁড়স চাষাবাদ করতে পারমর্শ দেন। পরামর্শ মোতাবেক মামুন মাসুদকে রবিবার দুপুরে বাসযোগে বাসের হেলপার জহিরুল ইসলামের মাধ্যেমে ঢেঁড়স বীজ পাঠানোর কথা জানান। পরে হেলপার জহিরুল ইসলাম রবিবার বিকালে মাসুদকে মুঠোফোনে কল করে বীজগুলো গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। পরে ব্যাংকে ব্যক্তিগত কাজ শেষে মাসুদ তার ব্যবসায়িক অংশীদার চাঁদপুর জেলার টমেটো ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চগড় পৌরসভার ধাক্কামারা এলাকায় ঢেঁড়স বীজ আনতে যান।
পরে মামুনের সহযোগী তুষার ডিবি পুলিশকে ফোন করে জানায়, ধাক্কামারা এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবার বেচাকেনা চলছে। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ প্যাকেট ঢেঁড়স বীজ ও একটি প্যাকেটের ভেতর থেকে ৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৯ হাজার টাকা। পরে মাসুদ ও খোরশেদকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান ডিবি পুলিশের সদস্যরা। পরে তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ব্যবসায়ী মাসুদ রশিদ বীজ ভান্ডার থেকে ঢেঁড়স কেনার ঘটনাটি খুলে বলেন। পরে ডিবি পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে। পরে অল্প সময়ের মধ্যে মাসুদকে কল করা নম্বর ও তথ্য দাতাদের নম্বর ও অবস্থান ঘেঁটে পুলিশ মামুন, তুষার ও রায়হান নামে তিনজন এ ঘটনায় জড়িত থাকার সত্যতা পায়। পরে রবিবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে মামুন ও তুষারকে গ্রেপ্তার করে। তবে অভিযানের খবর টের পেয়ে মামুনের সহযোগী রায়হান পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সোমবার দুপুরে আসামিদের আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন। মামলার অপর আসামিকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হলে আমরা তদন্তে নামি। পরে আমরা তদন্তে পাই যে এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে ফাঁসানোর জন্য হেলপার জহিরুলকে ১০০ টাকা দিয়ে ৪ প্যাকেট ঢেঁড়সের বীজ ধরিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী মাসুদকে দিতে বলা হয়েছিল। পুরো ঘটনাটি মামুন নামে এক ব্যবসায়ী সাজিয়েছেন। পরে আমরা মামুন ও তুষারকে গ্রেপ্তার করি এবং ব্যবসায়ী মাসুদ, খোরশেদ ও বাস হেলপার জহিরুলকে ছেড়ে দেই। আমরা চাই যেন কোনো নিরীহ মানুষকে এভাবে ফাঁসানো না হয়। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।
এসজি
