ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরাঞ্চলে তরমুজ চাষে পাল্টে যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে তরমুজের আবাদ। গত বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজ চাষ শুরু হলেও এবার এগিয়ে এসেছে অনেক কৃষক। ফলনও হয়েছে আশানুরুপ। এই বছর আগাম বন্যা না হলে দ্বিগুণ লাভের আশা করছে কৃষকরা। তবে বাজার বিপণনে সরকার এগিয়ে আসলে এবং আর্থিক ব্যাংকগুলো সহজ কিস্তিতে ঋণ ব্যবস্থা চালু করলে চরের বালু মাটিতে ফলবে সোনা। পাল্টে যাবে চরাঞ্চলের মানুষের দু:খ দুর্দশা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ১৬টি নদ-নদীতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর। আবাদযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৩৬৮টি চরে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু করছে কৃষকরা। এসব চরাঞ্চলে ভুট্টা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, শশা ও মরিচ চাষ করা হয়েছে।
গত বছর জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর বাগুয়া গ্রামে ৫০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। আগাম বন্যায় ৪০ একর ফসল নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও দমে যাননি কৃষকরা। এই বছর চরে ৩৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। তরমুজ উত্তোলনও শুরু করেছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলনও হয়েছে আশানুরুপ। ফলে গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে এবার ভালো লাভের আশা করছে তারা। তবে চরে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো বাজার বিপণন ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়াও আর্থিক ব্যাংকগুলো সাধারণ কৃষককে ঋণ প্রদান না করায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেক কৃষক এসব ফসল চাষাবাদ করতে না পেরে জমি ফেলে রেখেছেন।
বাগুয়া চরের দছিম উদ্দিন জানান, এই চরে তিনজন উদ্যোক্তা কৃষক ৪০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ পাওয়ার ফলে তারা ব্যাপক আকারে চাষ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের চাষাবাদে দেখে এখানকার অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে উঠলেও অর্থনৈতিক কারণে তারা এগিয়ে আসতে পারছে না।
তরমুজ চাষী আব্দুর সবুর জানান, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজ চাষ করলেও আগাম বন্যায় তরমুজ ক্ষেত ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই বছর আগাম ১৪ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে আমার ৬/৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ২০ হাজার তরমুজ উঠাতে পারব। এতে আমার ৬/৭ লাখ টাকা বাড়তি আয় হবে। তবে বড় সমস্যার জায়গা হলো তরমুজ বিপণন করা।
তিনি বলেন, পাইকাররা এখানে এসে কম মূল্যে তরমুজ কিনে নিয়ে যায়। আমরা শহরে নিয়ে গিয়ে তরমুজ বিক্রি করতে পারলে আরো বেশি লাভবান হতাম। এতে আরো কৃষক তরমুজ চাষে এগিয়ে আসত।
এই কৃষক আরো জানান, পৌষ মাসের শুরুতে তরমুজের বীজ বপন করতে হবে। ৪ মাস পর চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে তরমুজ উত্তোলন করা যায়। তরমুজ চাষে কিছু শতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বালু জমিতে ১০ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চি স্কোয়ারে দেড় ফুট গর্ত করে গর্তের মধ্যে কিছু দোআঁশ মাটি, গোবর, সার ও ডিএসপি দিতে হয়। প্রতি গর্তে ৪০ গ্রাম দিলেই হবে। এভাবে এক সপ্তাহ রাখার পর একটি গর্তে ৩টি করে বীজ বপন করা হয়। এ ছাড়াও নিয়মিতভাবে পোকা-মাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পরিচর্যা ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
এ বিষয়ে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, বর্তমানে চরাঞ্চলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য চাষাবাদে আগহী হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বাকী কৃষকরা এগিয়ে আসতে পারছে না। এক্ষেত্রে আর্থিক ব্যাংক, জিও এবং এনজিওরা এগিয়ে আসলে চরের পতিত জমিতে সোনা ফলানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শষ্য) আজিজুল ইসলাম জানান, গত বছর থেকে এ জেলায় তরমুজের আবাদ শুরু হয়েছে। এ বছর ২২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। বিপণনে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য চরাঞ্চলে কালেকশন সেন্টার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।