রত্নাই নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণে সুফল পেতে যাচ্ছে দুই জেলার মানুষ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী এলাকায় নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটির উদ্ধোধনের পর থেকে আংশিক সুফল পেলেও গত পাঁচ বছরেও শতভাগ সুফল পায়নি দুই জেলার মানুষ। শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর সার্বিক ব্যবহার এবং শতভাগ সুফল নিশ্চিত করতে কুলাঘাটে রত্নাই নদীর উপর নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্দ্যোগ নেয় সরকার। তাই গত ৮ মার্চ পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাটের কুলাহাট এলাকায় রত্নাই নদীর উপর প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০.৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে রত্নাই নদীতে ব্রীজের কাজ শুরু হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার মানুষ শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর শতভাগ সুফল পেতে যাচ্ছে। তাই দুই জেলার মানুষদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।
রত্নাই ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষে মালবাহী ভারী যানবাহন ও ঢাকাগামী কোচ চলাচল শুরু হলে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামরী উপজেলাসহ লালমনিরহাট জেলার ব্যবসা-বানিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার দ্বার দ্বিগুনভাবে উন্মোচন হবে বলে প্রত্যাশা জেলার মানুষের।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনরা মনে করেন, বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত এ প্রকল্পটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ণের লক্ষ্যে রত্নাই ব্রীজটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে শতভাগ অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি উত্তর ধরলার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
তাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও মানবিক নেতৃত্বের শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর মাধ্যমে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট জেলার লাখো মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। রত্নাই ব্রীজটি ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হলে শতভাগ উন্নয়নের ছোঁয়ায় এই দুই জেলার আমূল পরিবর্তন আসবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সেদিন থেকে সাধারণ মানুষ চলাচল শুরু করেন এবং সাথে ছোট ছোট হালকা যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু পণ্য পরিবহনের জন্য ভারী যানবাহন ও ঢাকাগামী নাইট কোচসহ বড় ধরনের যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন আজও চলাচল করতে পারছে না। ফলে গত পাঁচ বছর থেকে শতভাগ সুফল পেতে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু থেকে ১ কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর উপর এই বেইলি ব্রীজটি। ছোট এই বেইলি ব্রীজটির ভগ্নদশা হওয়ায় এটির উপর দিয়ে হালকা যানবাহন ছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য বড় ধরনের যানবাহন ও ফুলবাড়ী থেকে ঢাকাগামী কোনো নাইট কোচ চলাচল করতে পারেনি।
ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট বাজারের মের্সাস তানিয়া স্টোরের মালিক আবু তালেব ও ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এমদাদুল হক মিলন জানান, পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের কুলাঘাট এলাকার রত্নাই নদীর উপর অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ বেইলি ব্রীজের কারণে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর সুফল থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত ছিলাম। প্রায় ৭০ কিলোমিটার ঘুরে আমরা ঢাকা, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করছি। এতে গাড়ি ভাড়াও অনেক বেশী দিতে হচ্ছে। যেহেতু বর্তমান সরকার রত্নাই নদীতে ব্রীজের কাজ শুরু করায় আমরা শত শত ব্যবসায়ীসহ দুই জেলার লাখো মানুষ খুশী হয়েছেন। আশা করছি ১৮ মাস পর রত্নাই ব্রীজটি চালু হলে আমাদের বহুল কাঙ্খিত স্বপ্নের শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি দিয়ে কম খরচে মালামাল আনতে পারব। সেই সাথে অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তন আসবে পুরো উপজেলায়।
ফুলবাড়ী উপজেলার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা সরকার জানান, কুলাঘাটে রত্নাই বেইলি ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আমরা ফুলবাড়ীবাসী তথা ব্যবসায়ী মহল শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পুরোপুরি সুফল পাইনি। ইতিমধ্যে কুলাহাট এলাকায় রত্নাই ব্রীজের কাজ শুরু হওয়ায় ফুলবাড়ীবাসী ও ব্যবসায়ী মহলের মাঝে আনন্দের জোঁয়ার বইছে। এই ব্রীজটি নির্মাণ হওয়া মাত্র দুই জেলার ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। সেই সাথে লাভবান হবে এ অঞ্চলের সামাজিক অর্থনীতিও।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লা সর্দার জানান, কুলাঘাটে রত্নাই নদীর উপর প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০.৮-মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করেছে কনক্রিট এন্ড স্টীল টেকনোলজি লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাঠে থেকে ব্রীজ নির্মাণের কাজ অত্যান্ত নির্বিরভাবে দেখাশুনা করবে এবং আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ব্রীজ নির্মাণের কাজ সু-সম্পূর্ণ করবে। এই ব্রীজটি নির্মাণ হলেই লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট এলাকায় রত্নাই নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটা ফুলবাড়ীবাসীর জন্য এটি বড় সুখবর। সেই সাথে এই ব্রীজটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ৩ জুন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’র শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এসআইএইচ