নোটিশেও দখলমুক্ত হচ্ছে না ঠাকুরগাঁওয়ের বৃহৎ পাইকারি বাজার
অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে জৌলুস হারাতে বসেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আওতায় পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে বড় পাইকারি রোড বাজার। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তারা বাজারের ভেতর গড়ে তুলেছেন ভবন। তাদেরকে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও জমি দখলমুক্ত করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে দুষলেন জেলা প্রশাসককে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকে বাজারটি পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫ বছর আগেও বাজারটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল। দখলের কারণে বাজারটির স্থান সংকুচিত হয়ে আসতে থাকায় গত বছর মাত্র ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
দখলের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে আরও জানা গেছে, বছরের পর বছর বাজারকে নষ্ট করে যারা বাজারের ভেতরে দ্বিতল ভবন গড়ে তুলেছেন তারা হচ্ছেন- ডা. মো. নুর আলম, মো. কামাল হোসেন, মো. গোলাম হোসাইন, ভুট্রা বাবু, শুকুর বিহারী, মো. সমসেদ আলী, মো. আব্বাস আলী, জাপান সাহেব, শাহজাহান খান, মো. মইনুদ্দীনসহ আরও অনেকেই।
এ ছাড়া যারা সরকারি জমি দখল করে আছেন তারা হলেন- মো. মোকাররম হোসেন, মো. হযরত আলী, রহমান ক্যাশিয়ার ও তার ছেলেরা, মিরাজ তালুকদার, সালাম ও মতি মাষ্টার, ভুট্টা বাবু ও পলাশ, রিয়েল, রতন, রুমু তালুকদার, হামিদ ও আশরাফুল, মো. হালিম ও কুরাইশী, ডিম বাবু, মো. গোলাম হোসেন ও রাজ। তাদের বিরুদ্ধে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কাউন্সিলর।
বাজারটিতে জেলার পাইকাররা সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও গবাদিপশু কেনাবেচা করলেও এখন জৌলুস হারিয়েছে। বাজারের ভেতরে-বাইরে ভবন গড়ে তোলায় দিন দিন জায়গা সংকটে পড়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দূর-দুরান্তের ব্যবসায়ীরা। ফলে কমেছে রাজস্ব আয়।
কয়েক মাস আগেও শত শত মানুষের আনাগোনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচায় জমজমাট থাকত শত বছরের পুরনো হাটটি। এখন তার উল্টো চিত্র। বর্তমানে একটু একটু করে জমি দখলের মহা উৎসবের হাটটি পরিণত হয়েছে আবাসিক এলাকায়। প্রভাবশালীদের গায়ের জোরে একের পর এক ভবন গড়ে তোলায় সৌন্দর্য হারিয়েছে হাটটি। বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তাগুলো। এ অবস্থায় পৌর কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রভাবশালীদের দখলে হাটের জায়গা সংকুচিত হতে হতে এখন যানবাহন প্রবেশ করার রাস্তাও নেই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমনও কমে গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় শত বছরের পুরনো হাটটিতে ভবন গড়ে তুললেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, হাটটি দখলদারদের হাতে চলে গেছে। দিনের পর দিন প্রভাবশালীরা অট্টালিকা গড়ে তুলছে। যার ফলে বাজারটি এখন ছোট হয়ে গেছে। এর দায়-দায়িত্ব পুরোটাই পৌরসভার। এখন কেউ একটা ডিম বিক্রি করতে আসলেও তাকে টাকা দিয়ে ডিম বিক্রি করতে হয়। এখন দেখে মনে হয় না যে এটা একটি বাজার। মনে হচ্ছে এটি পাড়া-মহল্লা।
বারবার উদ্যোগ নিয়েও অবৈধ স্থাপনা সরানো যাচ্ছে না জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান ঠাকুরগাঁও সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে সবচেয়ে বড় পাইকারি রোড বাজারটি দখল করে অনেকেই ভবন তোলার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও রোড প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আব্দুল করিম জানান, হাটটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হলো ইজারাদারের। কিন্তু ঠাকুরগাঁও রোড বাজারে কোনো ইজারাদার আছে বলে আমার জানা নেই। হাটের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক ময়লা পড়ে আছে। যদি ইজারাদার থাকত এই ময়লাগুলো পড়ে থাকত না। হাটের সকল উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ইজারাদার নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের।
তিনি আরো বলেন, ১০ ফুটের উপরে কোনো ঘর সরকারি হাটে থাকতে পারবে না। আমি নিজেই সদর ইউএনওকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। তিনি বলছেন-পৌরসভার মেয়রকে আমি দায়িত্ব দিছি তিনি হাট দখলের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাচ্ছে না। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আঞ্জুমানারা বেগম বন্যা জানান, রোড বাজারটিতে দুই-তিন তলা ভবন তোলা হয়েছে। এগুলো কার ইন্ধনে হচ্ছে, কে এর পেছনে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করেছি। বহুবার বলেছি যে রোড বাজারে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে উঠেছে রাতারাতি। তিনি (জেলা প্রশাসক) বলেছেন- নোটিশ দেন, আমি একাধিকবার নোটিশ দিয়েছি। সরেজমিনে গিয়েও বলেছি সরকারি জমি পৌসভার একটি আয়ের উৎস। কে শুনে কার কথা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান বলেন, হাটের নতুন ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। ডিসি অফিস থেকে ইউএনও স্যারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, হাট-বাজারের জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ ইতিপূর্বে হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
এসআইএইচ