প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল এখন দেশসেরা
নীলফামারী সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পূর্ব পঞ্চপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে কাদা আর গ্রীষ্মকালে ধুলা পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে নেই আধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা। প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়টি এখন দেশসেরা হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের মুকুট জিতেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তারা গত মঙ্গলবার আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে মাগুরার বিনোদপুর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে হারায়।
ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন জাহিম (৪ গোল) এবং সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন মনিরুল ইসলাম। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রাইজমানি, গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের মাঝে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যে জেলাজুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। হয়েছে বিজয় মিছিল। আয়োজন করা হচ্ছে সংবর্ধনারও।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টকে লক্ষ্য করে বছরের শুরু থেকেই কঠোর অনুশীলনের মধ্যে ছিল বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়াও তারা মাঝে মাঝে স্টেডিয়ামে গিয়ে অনুশীলন করত। রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হওয়ার পর নীলফামারীর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই খেলোয়াড়দের নিয়ে স্টেডিয়ামে ১০ দিনের ক্যাম্প করে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করে ক্রীড়া সংস্থা। এ সময় পর্যায়ক্রমে তাদের তদারকির দায়িত্বে থাকতেন শিক্ষকরা। এ ছাড়াও তাদের সহযোগিতা করেন স্থানীয় অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিরা।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, খেলাধুলাতে জীবনের প্রথম থেকেই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এতে এটির সুফল সারাজীবন ধরে পাওয়া যায়। তাই খেলাধুলার ব্যাপারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়। পাঠদানে তাদের আলাদাভাবে সহায়তা করা হয়। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রতিদিন অনুশীলন করানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে নীলফামারী সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক সরকার জানান, দেশসেরা হয়ে চমক দেখিয়েছে বিদ্যালয়টি। এ জন্য সত্যি আমরা গর্বিত। শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কারণে এ সাফল্য এসেছে। শিগগিরই তাদের সংবর্ধনা জানাতে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে আলী, আছিম উদ্দিন ও এনায়ত আলীর দান করা ৭৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব পঞ্চপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করা হয়। চারজন পুরুষ ও দুইজন নারী নিয়ে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা ৬। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২০৪। রয়েছে একতলা দুটি ভবন। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শ্রেণি সংকটে পড়তে হয় শিক্ষকদের। তারপরও কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের মধ্যে পিএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
এসআইএইচ