বৃদ্ধ মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না ৭ সন্তানের কেউ
শতবর্ষী বৃদ্ধা জরিনা বেগম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রিয় সন্তানদের কাছে হয়ে উঠেছেন বোঝা। গত কয়েকদিন ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জরিনা। বৃদ্ধার যেন কোথাও মাথা গোঁজার ঠাই নেই। ৩ মেয়ে এবং ৪ ছেলের কেউ দায়িত্ব নিতে চান না তার।
শতবর্ষী বৃদ্ধা জরিনা বেগমের বাড়ি পঞ্চগড় পৌর শহরের রৌশনাবাগ এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত বুধারু মোহাম্মদের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে বস্তা বিছানো মাটিতে বসে কান্না করছেন বৃদ্ধা। তাকে ঘিরে রেখেছেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে সেখানে আসেন পৌর কাউন্সিলর আরিফ হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা জরিনা বেগমের স্বামী বুধারু মোহাম্মদ মারা গেছেন ৪০ বছর আগে। তখন থেকেই তিনি সন্তানদের কাছে বোঝা হয়ে পড়েন। শারীরিক সক্ষমতা থাকাকালীন নিজেই নিজের মতো চলতেন। বয়স বেড়ে গেলে আশ্রয় হয় ছোট মেয়ে রমিছা বেগমের ঘরে। এতদিন তার সঙ্গেই ছিলেন। সম্প্রতি রমিছা বেগম তার স্বামী তবিবর রহমানের সঙ্গে ঝগড়া করে কোথাও চলে যান। পরে বৃদ্ধার দেখভাল করার কেউ না থাকায় রমিছা বেগমের স্বামী তবিবর রহমান বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে দেন।
প্রতিবেশী হাসিবুল ইসলাম বলেন, বৃদ্ধা জরিনা বেগমের সন্তানরা কেউ তার দেখভাল করে না। প্রতিবেশিরা খোঁজ খবর নিতে গেলেও সহ্য করেন না তারা। ভাই-বোনের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে তারা তাদের মাকে এভাবে অবহেলা করছে।
তবে গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরা দেখে (কিছুটা ভীত হয়ে) বৃদ্ধার ছোট ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, টানাপোরনের সংসার আমার। অল্প একটু জায়গায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকি। আমার মায়ের জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করা গেলে তার দেখভাল করতে আমার আপত্তি নেই।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফ হোসেন বলেন, এই বৃদ্ধা সন্তানদের বোঝা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কয়েকদিন আগেও এই বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে দেয় তার সন্তানরা। আমি বৃদ্ধার ঘরের ব্যবস্থা করব এই আশ্বাস দিয়ে কিছুদিনের জন্য তার ছেলেদের দেখভালের অনুরোধ করি। কিন্তু এক সপ্তাহ না পেরোতেই তারা তাদের বৃদ্ধা মাকে আবারও বের করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি বৃদ্ধার সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছি। মেয়র মহোদয় এবং ইউএনও মহোদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি। বৃদ্ধার থাকার জন্য দ্রুত ঘরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এসআইএইচ