কুড়িগ্রামে পূণ্যস্নান উৎসবে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ভক্তদের ঢল
গেল বছরগুলোর তুলনায় এই বছর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূণ্যস্নান উৎসবে ভক্তদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর থেকে পূণ্যস্নান উৎসব শুরু হয়। এই বছর উৎসবটি বুধবার হওয়ায় এটিকে বুধাষ্টমী বলা হয়। প্রতি এক যুগ পর পূণ্যস্নান উৎসব বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। বুধাষ্টমীতে পূণ্যস্নান উৎসবে অংশগ্রহণ করে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে অধিক প্রশান্তি আসে বলে জানিয়েছেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা।
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে পূণ্যস্নান উৎসবে আসা হিন্দু পুরোহিত কানাই চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, বুধাষ্টমীতে পূণ্যস্নান উৎসবে অংশগ্রহণ সকলের জীবনে কম আসে। তাই বুধাষ্টমীতে পূণ্যস্নান উৎসব হলে ভক্তদের ঢল নামে। এ বছরও পূণ্যস্নান উৎসবটি বুধবার হওয়ায় ভক্তদের উপস্থিতি অনেক বেশি। ভক্তরা ব্রহ্মপুত্র নদের জলে স্নান করে ভগবানের কাছে পাপ মোচন ও প্রশান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।
পূণ্যস্নানে অংশ নেওয়া বাসন্তী রানী (৪০) বলেন, গেল তিন যুগ থেকে প্রতি বছরই তিনি ব্রহ্মপুত্র পাড়ে পূণ্যস্নান উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন। এ বছর বুধাষ্টমীতে পূণ্যস্নান উৎসব হওয়ায় বেশি শান্তি অনুভব হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের জলে স্নান করে ভগবানের কাছে পাপমোচন ও প্রশান্তির জন্য প্রার্থনা করি। ভগবান আমাদের প্রার্থনা শুনে পাপমোচন ও প্রশান্তি লাভের পথ প্রশস্ত করে দেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা এলাকা থেকে আসা ভক্ত নরেন্দ্র নাথ দাস (৭৭) জানান, তিনি প্রায় ৪০ বছর আগে ভারতে চলে যান। ভারতে বসবাস করেও তিনি প্রতি বছর ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে পূণ্যস্নান উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। এখন আর তেমন চলতে পারছি না। সন্তানদের সাথে নিয়ে এবার পূণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করেছি। হয়তো এরপর নাও আসতে পারি।’
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে পূণ্যস্নান আয়োজক কমিটির সদস্য মনীন্দ্র দাস বলেন, গেল ৩০০ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে পূণ্যস্নান উৎসব হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা চৈত্র মাসের শেষ অথবা বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে এ উৎসব হয়। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল ও ভারতের কোচ বিহার, জলপাইগুড়ি ও আসাম থেকে বিপুল সংখ্যক ভক্ত এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পূণ্যস্নান উৎসব উপলক্ষে এখানে মেলা বসে। মেলায় সকল ধর্মের মানুষজন অংশগ্রহণ করেন। এ বছর ব্রহ্মপুত্র পাড়ে পূণ্যস্নান উৎসবে এক লাখেরও বেশি ভক্তের সমাগম ঘটেছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে পূণ্যস্নান উৎসব করতে পারেন সেজন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। তাই শান্তিপূ্ণভাবে পূণ্যস্নান উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর পূণ্যস্নান উৎসবটি বুধাষ্টমী তিথিতে পড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ভিড় ছিল অনেক বেশি।
এসআইএইচ