বাপ দাদার পেশায় থাকলেও ফেরেনি মালি সম্প্রদায়ের ভাগ্য
উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের জাংগই গ্রামে ভুইমালি সম্প্রদায়ের ২৫ পরিবারের বসবাস। এই পাড়ার মানুষ শংকর আর ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরি করে আসছে। এভাবেই ছয় দশক ধরে বাপ দাদার ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টায় ভুইমালি পরিবার, তবে নেই কোন উন্নতি। তাদের আশা সরকারী বা বেসরকারী কোন পৃষ্টপোষকতা পেলে একটু ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে।
বাঙ্গালিদের কোন পালা পর্বণ বা অতিথিয়তা বা অভ্যাসের কারণেই হোক পান ছাড়া কি চলে? সেই পান খাওয়ার একটি উপাদান হলো চুন। সেই,চুন তৈরি করেন ভুইমালি সহ পুরো পাড়ার মানুষ। গোলাকার মাটির বিশেসায়িত চুলাই ৪/৫ কেজি ঝিনুক, শংকর পোড়াবেন। আগুন জ্বালিয়ে দিলেই ঝিনুক, শংকর গলে চুন আকারে স্তুপ জমে। এভাবেই ছয় দশক ধরে বাপ দাদার ব্যবসা ধরে রেখেছেন ভুইমালিসহ এ পাড়ার ২৫ টি পরিবার।
প্রচুর পরিশ্রমের এ কাজে তাদের লাভের পরিমান খুবই কম। কোনমতে জীবন যাপন করে তারা। নেই কোন তাদের ইটের বাড়ি রয়েছে মাটির বাড়ি এবং খ্যারের তৈরি চাল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে বদলে ফেলেছে এই পেশা। প্রতি কেজি চুন তৈরি করতে তাদের খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা। আর প্রতি কেজি চুন বাজারে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা।
প্রতি কেজি চুন বিক্রি করে লাভ হয় ৩ থেকে ৫ টাকা যা দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারে টিকে থাকা তাদের এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও কস্ট করে বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা। বর্তমানে তাদের জীবন যাত্রার মান খুবই খারাপ। তাদের আশা তারা সরকারী বা বেসরকারী কোন পৃষ্টপোষকতা পেলে একটু ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারতো।
চুন তৈরি কারক কার্তিক সরকার বলেন, চুন তৈরির কাজটি আমরা আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে করে আসছি। এই চুন তৈরি করে বাজারে আমরা বিক্রি করি ২৫ থেকে ৩০ টাকা যা প্রতি কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা লাভ হয়। এতে করে আমাদের কোন আয় উন্নতি হয় না। বাপ দাদার পেশা ধরে আছি যার কারণে আমরা অন্য কোন পেশার কাজ করি না। সরকার থেকে আমরা যদি আর্থিকভাবে কোন সহযোগিতা পাই তাহলে আমরা কিছুটা আয় উন্নতি করতে পারব।
চুন তৈরি কারক ঝড়ু সরকার বলেন, আমরা শংকর আর ঝিনুক দিয়ে চুন তৈরি করে থাকি। এসব শংকর ও ঝিনুকের দাম বৃদ্ধির কারণে ও অল্প পুঁচির কারণে অল্প করে নিয়ে আসি অল্প করে বিক্রি করি। এসব সংকর ভারত থেকে বাংলাদেশের বগুড়া আসলে আমরা বগুড়া থেকে কিনে নিয়ে আসি।
প্রতি কেজি শংকর কিনি ৭০ টাকা দরে। সারাদিনে এক-দেড় হাজার টাকার চুন বিক্রি করে থাকি, যা থেকে লাভ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। এই আড়াইশো তিনশ টাকা দিয়ে বাজারে কোন কিছু কেনা সম্ভব হয় না। আবার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা খরচও আছে এতে করে আমরা অসহায়।
চুল তৈরি কারক কুটিল চন্দ্র সরকার বলেন, এই চুন তৈরি করার ব্যবসার বয়স আমার প্রায় ৬০ বছর হয়ে গেল আজ পর্যন্ত আমাদের কোন উন্নতি নেই। এ যুগে অনেকেরই ইটেরবাড়ি থাকলো আমাদের রয়েছেন মাটির বাড়ি। আমরা এখন পর্যন্ত কোন আর্থিক সহযোগিতা কিছু পাই নাই। সারাদিনে যত টাকার চুন বিক্রি করি এতে যে লাভের অংশটি থাকে তা দিয়ে বাজারে কোন বড় মাছ কিনতে পারি না। এজন্য বাধ্য হয়ে পচা মাছ কিনে নিয়ে আসি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, আমরা চুন কারিগর পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেকোনো সহযোগিতা তারা যদি প্রাপ্য হয় ও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেন সেই সুবিধা প্রাপ্য হয়। একই সঙ্গে চুন ব্যাবসা ধরে রাখার জন্য কৃষি ঋণ ও আর্থিক সহযোগিতা আশ্বাস দিলেন এই কর্মকর্তা।
এএজেড