ঠাকুরগাঁওয়ে বারুণী মেলা
নিজেকে পাপমুক্ত করতে নদীর দু’পাড়ে পুণ্যার্থীরা
ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বারুণী মেলা। সোমবার (২০ মার্চ) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বাগপুর এলাকার টাঙন নদীর দুই পাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব শুরু হয়। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পুণ্যার্থী ও সাধু-সন্ন্যাসীরা টাঙন নদীর তীরে জড়ো হন। দলবেঁধে তারা নদীর উত্তর-দক্ষিণমুখী স্রোতে স্নান শুরু করেন। বুধবার (২১ মার্চ) বিকাল পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
সনাতন ধর্মমতে, চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথির এই তিন দিনে নদীর উত্তর-দক্ষিণমুখী স্রোতে স্নান করলে পাপমোচন হয়। দেহ-মন শুদ্ধ করতে অনেকে মাথার চুল বিসর্জন দেন। সেই সঙ্গে পূজা-অর্চনা করেন। স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরীতকী, কলা ইত্যাদি অর্পণের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন তারা। নিজেকে পাপমুক্ত করতে, স্বর্গীয় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের মঙ্গল কামনায় নদীর দুই পাড়ে বসেছে মেলা। এতে অংশ নেয় জেলাসহ আশপাশের হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী। জেলার বিভিন্ন এলাকার নর সুন্দররাও (নাপিত) এখানে আসেন।
রুহিয়া ইউনিয়নের পলাশ চন্দ্র ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে তার বাবা-মারা গেছেন। স্বর্গীয় বাবার সৎ কার্য ও পুণ্যস্নানের জন্য এখানে এসেছেন। দিনাজপুর জেলা থেকে আসা গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, আমি এবার প্রথম স্নান উৎসবে এসেছি। কয়েক দিন হলো বাবা মারা গেছেন। তার স্বর্গবাসের আশায় স্নানসহ মাথার চুল বিসর্জন দিয়েছি।
হরিপুর উপজেলার জাবর হাট এলাকার প্রতিমা রানী ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, পরিবারের সবাই এসেছেন পুণ্যস্নান করতে। এখানে স্নান করলে মন পরিশুদ্ধ হয়। স্নান করে পিতা-মাতার জন্য প্রার্থনা করেছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মলিন চন্দ্র জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে পুণ্যস্নান করতে পারিনি। এবার পরিবারের সবাই এসেছি। পূজা-প্রার্থনা করেছি আত্নীয়-স্বজনের জন্য।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ১২৫ বছর ধরে টাঙন নদীর উত্তর-দক্ষিণ স্রোতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি উপলক্ষে স্নানোৎসব পালন করে আসছে সনাতন ধর্মালম্বীরা। এখানে স্নান করে দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে অনেকে মাথার চুল বিসর্জন দেন, পূজা অর্চনা করেন। তারপর তারা স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরিতকী, কাঁচা আম, ডাব, কলা ইত্যাদি অর্পণের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, যে স্থানে নদীর প্রবাহ উত্তরমুখী হবে সেই স্থানে স্নান করা পুণ্যের কাজ। তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জীবন মরনে স্নান হলো হিন্দুদের এক অখণ্ড মহামন্ত্র। স্নানের পবিত্র ধারায় দেহ ও মনকে ধন্য করা এক আত্মীক সাধনা।
এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় মন্দির কমিটি বারুণী মেলা ও স্নান উৎসব উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী চলবে এই মেলা। এতে খাবার, ছোটদের খেলনাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে শতাধিক দোকান।
এ ব্যাপারে মন্দিরের পুরোহিত দয়াল চক্রবর্তী জানান, বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে তিথি নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে নদীর পুণ্য সলিলে অবগাহন করেন এই দিনে।
মন্দির কমিটির সভাপতি প্রভাত কুমার রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আগত সাধু সাধকদের থাকা ও প্রসাদ গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কমিটির সফল ব্যবস্থাপনায় উৎসব জমে উঠেছে।
এসআইএইচ