পিয়নরা সময়মতো এলেও আসেন না কর্মকর্তারা
সকাল ৯টা বেজে ১৩মিনিট। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার অধিকাংশ অফিসে তালাবদ্ধ। একটু পরেই চারজন লোক এসে অফিস খোলেন। তিনি নিজেকে অফিস সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন একটু দেরি হয়ে গেছে। অফিসের আর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তখনও আসেননি। ৯টা বেজে ১৫ মিনিটেও সমাজ সেবা অফিসের দরজায়ও তালা দেখা যায়। বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সকাল ৯টার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হচ্ছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা প্রার্থীরা।
সময় মতো অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মাসে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়। শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া এই নির্দেশনা কতটা পালন হচ্ছে, তা জানতে গত রবি-সোম-মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার দপ্তরগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত সময় সকাল ৯টায় অফিসে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের উপস্থিত হতে বলা হলেও বাস্তবে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টা ২০ মিনিটেও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে আসেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘সকালে রেডিও সেন্টারে আমার একটি অনুষ্ঠান ছিল, তাই সেখানে ছিলাম।
সকাল পৌঁনে ১০টায় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে না পেয়ে তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি জানান, আমি আসন্ন পৌরসভার উপ-নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছি।
সকাল ৯টা বেজে ৪৮ মিনিটে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র রায়কে অফিসে পাওয়া যায়নি। অফিসে কর্মরত টিএফপি এ রাখি দাস বলেন, ‘স্যার এখনো অফিসে আসেনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে না পেয়ে সহকারী প্রকৌশলী আফাজ উদ্দিনকে কল করলে তিনি বলেন, আমি বাসায় আছি। অফিসে পাওয়া যায়নি কেউ।
এ ছাড়াও সঠিক সময়ে অফিসে পাওয়া যায়নি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে। এ বিষয়ে সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন হয়তো কিছুক্ষণে অফিসে চলে আসবেন। আর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শারমিন আকতার অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে আছেন বলে জানান তার অফিস সহকারী।
তা ছাড়াও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আয়শা আক্তারের কার্যালয়ে গেলে তাকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বেলা প্রায় পৌনে ১১টায় তার অফিসে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালিদুজ্জামন এসেও তাকে পাননি। এ প্রসঙ্গে খালিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি এসে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে পাইনি। তার খোঁজ নিতে হবে। তিনি ফিলডের কাজেও বাইরে থাকতে পারেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা ই-তথ্য সেন্টারও খোলা হয় সকাল সাড়ে ৯টার পরে। ই-তথ্য সেন্টার রেজাউল করিম বলেন, কাল অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছি। তাই আজকে সেন্টার খুলতে একটু দেরি হয়েছে। এছাড়া আমরা প্রতিদিন ৯ টার মধ্যেই সেন্টার খুলি।
অন্যদিকে বেলা ১১টার পরে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিন্নাতারা ইয়াছমিনও অফিসে আসেননি। দপ্তরের অফিস সহকারী স্বপন জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গত ১২ মার্চ থেকে ঢাকায় এক কর্মশালায় আছেন।
সদর উপজেলার আরাজী পাহারভাঙ্গা থেকে এক বৃদ্ধা সমাজসেবা অধিদপ্তরে আসেন বয়ষ্ক ভাতার কাগজ ঠিক করতে। তিনি বলেন, অফিসার নাই, তাই বসে আছি। তিনি আসলে কাগজগুলো জমা দিতাম।
ফয়সাল আহম্মেদের বাড়ি সদরের ভুল্লিতে। তিনি সকাল ৯টায় উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ে আসেন একটি আবেদন ফরম জমা দিতে। কিন্তু অফিসে কাউকে না পেয়ে অফিসের পাশেই একটি জায়গায় বসে অপেক্ষা করছেন। আল আমিন বলেন, ‘সকাল সকাল অফিস শুরু তাই সকালেই আসছি। কিন্তু এসে কাউকে পাইনি। সকাল সাড়ে ৯টার বেশি বেজে গেলেও এখনও অফিসের পিয়ন ছাড়া কেউ নেই । ভাবছিলাম সকাল সকাল কাজ সেরে আরেকটি কাজে যাব। কিন্তু সেটা আর হলো না।
এ সময় বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে আসা অনেকেই বলেন, ‘সকালেই আসছি যাতে তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করা যায়। কিন্তু সকালে এসে কাউকে পাওয়া যায় না ১০টার আগে। অনেক অফিসে সাড়ে ১০টার পর কর্মকর্তারা আসেন। আবার দুপুরের পর চলে যান।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিস করার নির্দেশ দেওয়া আছে। যদি নির্ধারিত সময়ে অফিসে কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকেন সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাসিক সমন্বয় সভায় এ ব্যাপারে আবারও তাগিদ দেওয়া হবে।
এসআইএইচ