সংকটে গরিব, দিশেহারা মধ্যবিত্ত
কয়েকদিন পরেই পবিত্র মাহে রমজান। এরইমধ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বাজার করতে শুরু করেছেন অনেকেই। তবে বাজার করতে গিয়ে এখনো স্বস্তি পাচ্ছেন না নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি পেলেও মাছ-মাংসের বাজারে গিয়েই হতাশ হতে হচ্ছে এখনো। শেষ পর্যন্ত আকাশছোঁয়া দাম কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়ে খুবই চিন্তিত সাধারণ মানুষ। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও আজ নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা।
দুই মাস ধইরে মাছ খাউনা। কিনিম যে দাম তো অনেক বেশি। আয় রোজগার কুমলেও সব জিনিসের দাম বাড়ছে। যে কারণে ছোয়ালাক ভালো খিলাবা পারু না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন শমসের আলী নামে এক রিকশাচালক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি পিষ্ট হচ্ছেন মেস বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাও।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাইরে বিভিন্ন মেসে থাকি। তেমন টিউশনিও নেই। এর উপর দ্রবমূল্যের লাগামহীন দামে একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছি। আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতিমাসে আরও এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি লাগছে। যা পরিবার থেকে দেওয়া বেশ কষ্টকর।
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আশরাফ আলী বলেন, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের উপর। আলু ছাড়া সব পণ্যের দাম বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলার কোনো জায়গাও নেই।
শহরের কালিবাড়িতে বাজারে করতে আসেন এনজিও কর্মী শারমিন আক্তার। সন্তানদের জন্য মুরগি কিনতে এসেছেন তিনি। তবে বাজারে সবকিছুর উচ্চমূল্য থাকায় হতাশ হতে হচ্ছে তাকে। বাজারের এক মুরগির দোকানের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।
শারমিন বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকার কাছাকাছি। এই দামে মুরগি কিনে খাওয়া আমাদের জন্যই কষ্টসাধ্য। স্বল্প আয়ে স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কষ্টে সংসার চলছে। নিজেরা না খেয়ে থাকতে পারলেও সন্তানদের কথা ভেবে মুরগি কিনেছেন তিনি।
পৌর শহরের হাজিপাড়া এলাকায় অন্যের বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা মাজেদা বেগম বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে এখন আর সংসার চালাতে পারি না। এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।
এক বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন শফিক মিয়া। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখন দুশ্চিন্তার একটাই কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। টিকে থাকতে পারছি না। সত্যি, আমি আর পারছি না।
সবজি ব্যবসায়ী কাউসার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা যেমন ক্ষিপ্ত, তেমনি আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সাধারণ মানুষ বাজারে এসে দাম শুনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু না কিনে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
খুচরা বিক্রেতা দুলাল বলেন, পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা সহজে কমে না। শীতের সবজি শেষের দিকে। ফলে দাম বাড়ছে। আরেক বিক্রেতা বলেন, যেসব সবজির মৌসুম শেষ সেসব সবজির দাম কিছুটা বেশি। কারণ ওইসব সবজির সরবরাহ কমে গেছে।
শহরের কালবাড়ি, সেনুয়া, গৌধুলীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়, সোনালি মুরগি ৩৪০ থেকে ৩৫০, দেশি মুরগি ৫৪০ থেকে ৫৫০, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাংসের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি মাছের বাজারও চড়া।
মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে সবজি বাজারেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। সবজির বাজারে বেগুন ৩০ থেকে ৩৫, বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২০, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০, শসা ২৫ থেকে ৩৫, মিষ্টিকুমড়া ৩০ থেকে ৩৫, টমেটো ২০ থেকে ২৫, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০, শিম ৩৫ থেকে ৪৫, গাজর ২০ থেকে ২৫, লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ থেকে ১১৫, দেশি মসুরের ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫, মানভেদে ছোলা ৯০ থেকে ১০৫, আটা ৬৫ থেকে ৬৮, খোলা আটা ৫৬ থেকে ৫৮, ময়দা ৭৫ থেকে ৭৮, ময়দা ৬২ থেকে ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১১০, আমদানি করা রসুন ১২০ থেকে ১৩০ এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজার ঘুরে অধিকাংশ দোকানে দেখা মেলেনি নির্দিষ্ট মূল্যতালিকার। এর ফলে একেক বাজারে একেক রকম দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলার সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদী বলেন, রমজানের আগে বাজারগুলোতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। রমজানে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়, সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে।
এসজি