অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্তক অবস্থানে পুলিশ-বিজিবি
পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহ। জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শুক্রবার মুসলমানদের পবিত্র জুমার দিন হওয়ায় গত শুক্রবারের মত সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শুক্রবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। নেয়া হয় বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা।
পিকআপে করে টহল দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। জুমআর নামাজের পর মিছিল কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলা শহরের প্রতিটি মসজিদে জুমআর নামাজে সাদা পোশাকে পুলিশ সহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও অবস্থান নেয়। তবে এদিন জুমআর নামাজে মুসল্লীদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম।
নামাজের পরে মিছিল বা সংঘর্ষ ঠেকাতে শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের দুইধারে পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা অবস্থান নেয়। এসময় সড়কে যান চলাচল হঠাৎ কমে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কাজের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে দেখা যায়নি সাধারণ মানুষজনকে। এদিকে মসজিদের খুতবায় কোন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য না দিতে ইমামদের অনুরোধ জানায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের দুইটি মসজিদ সহ আহমদনগর নতুনবন্দর ফুলতলা শালশিরি সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ ও বিজিবির টহল ও অবস্থান জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। পিকআপে করে টহল দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তবে জুমআর নামাজের পরে মুসল্লিরা দ্রুতই বাসায় চলে যান।
এদিকে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে জুমআর নামাজের পরে শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় আসেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক সহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
জেলা শহরের রিক্সা চালক আইবুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার (৩ মার্চ) পঞ্চগড়ে মারামারি হওয়ার কারণে শহরে আজও (শুক্রবার) পুলিশ ছিল। একারণে শহরে মানুষজন খুবই কম। যাত্রী বেশি পাইনি তাই আয়ও বেশি হয়নি। নিজেও কিছুটা ভয়ে ছিলাম। যদি মারামারি হয় আবার। তবে কোন ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক ছিল পঞ্চগড়।
জেলা শহরের মুদি দোকানদার জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, শহরে শুক্রবার (১০ মার্চ) কোন কিছুই হয়নি। তবে মানুষ ভয়ে আজ পঞ্চগড়ে আসেনি। অন্যদিকে শুক্রবার পঞ্চগড়ে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে একারণে দোকানপাট কমই খুলি আমরা। তবে আজ আমাদের বেচাকেনা কম হয়েছে।
এদিকে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে লুটপাট অগ্নি সংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় নতুন করে আরো ৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় এ মামলা তিনটি করা হয়। এ নিয়ে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ তে। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় ১৪ টি ও বোদা থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশের ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা দান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও বিস্ফোরণ ঘটানো, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ বেশ কিছু অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ১২টি ও বোদা থানায় একটি সহ ১৩ টি মামলা, র্যাবের গাড়ি পোড়ানোয় র্যাবের পক্ষ থেকে একটি ও আহমদীয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা বাড়িঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি ও বোদা থানায় একটি সহ দুইটি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭৩ জনে। মামলা গুলোতে মোট আসামী করা হয়েছে নামীয় সহ অজ্ঞাত ১১ হাজার জনকে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এমএম সিরাজুল হুদা বলেন, আমরা এ ঘটনায় আরো মামলা করবো। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের ধরা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি বা আসামী করা হবে না। সে বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখছি। বর্তমানে পঞ্চগড়ের পরিবেশ, পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, জুমআর নামাজের খুতবায় উস্কানিমুলক বক্তব্য যেন না দেয়া হয় সেজন্য ইমামদের বলা হয়েছে। জুমআর নামাজের পরে কোন মিছিল বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সুপার সহ জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আমি নিজেই মাঠে ছিলাম। আহমদিয়াদের এলাকাতেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কোথাও কোন সমস্যা নেই।
এএজেড