কাদিয়ানী সংঘর্ষের বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি পুলিশ
পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবীতে গতকাল শুক্রবার জুমআর নামাজের পর পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের সাথে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ২০ জন পুলিশ সদস্য, ৪ জন সাংবাদিক সহ অন্তত ৬০ জন। নিহতের একজন সাধারণ মুসল্লী ও একজন কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের।
পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ, পঞ্চগড় ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা এবং কাদিয়ানীদের দোকানপাটের মালামাল লুট করে আন্দোলনকারী। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। পরে ওইদিন বিকেলে পৌরসভার আহমদ নগড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের একাংশ কাদিয়ানীদের বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘর ভাংচুর করে মালামাল লুট করে এবং প্রায় অর্ধশত বাড়িতে আগুন দেয়।
অনেক পরিবার স্বর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পুরো এলাকা যেন ধ্বংস স্তুপে পরিণিত হয়েছে। চারিদিকে শুধুই বাড়িপোড়ার গন্ধ। এদিকে বিক্ষোভকারীদের হামলায় বিদ্যুতের কয়েকটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত শহরের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল।
পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। পরে শুক্রবার রাতেই জেলা প্রশাসন জেলা শহরে মাইকিং করে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের জানিয়ে দেয়। সেই সাথে সকল আন্দোলনকারীদের বাসায় যেতে অনুরোধ করে জেলা প্রশাসন। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মুসল্লী আরিফ হোসেনের নামাজে জানাযা শনিবার বিকেল ৩টায় জেলা শহরের রামের ডাঙ্গা এলাকার কেন্দ্রীয় গোরস্থান মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিহত যুবক ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসানের মরদেহ শুক্রবার রাতে সুরতহাল করে। পরে শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে জেলা শহরে যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের চলাচল কম থাকলেও বেলা ১১টা থেকে বাড়তে থাকে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা। বাড়ে পথচারী সহ সাধারণ মানুষের চলাচল। জেলা শহরের হোটেল রেস্তোরা, শপিংমল, বিপনী বিতান সহ সব ধরনের দোকান খুলেছে। তবে ক্রেতার উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি।
তবে জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট, অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। টহল দিচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর গাড়ি। তবে শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনকারীদের মাঠে দেখা যায়নি।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মামলা বা আটক সহ হামলার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে গণমাধ্যেম কর্মীদের কোন ধরনের তথ্য প্রদান করেনি পুলিশ।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মোবারক আহমেদ নামে এক ব্যাক্তি বলেন, গতকাল পরিবারের সবাই জলসায় গিয়েছিল হামলার সময় আমি একাই বাসায় ছিলাম। হামলাকারীরা আমাদের বাড়িতে হামলা করে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির ৪টি কক্ষ একবারে পুড়ে গেছে। কোন কিছু বাঁচাতে পারিনি। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি।
সালানা জলসা কমিটির গণমাধ্যেম কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমন বলেন, শুক্রবার জুমআর নামাজের পরে আমাদের ৯৮ তম সালানা জলসা শুরু হয়। পরে কিছু হামলাকারী আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে আগুন দিয়েছে। আমার বাড়ির সবকটি ঘর পুড়ে গেছে। হামলার ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করেছি। শনিবার বিকেলে আমরা এ নিয়ে গণমাধ্যেম কর্মীদের ব্রিফিং করবো।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারী মো আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা শুক্রবার নামাজের পরে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন মিছিল বা সমাবেশ ডাকিনী। জুমআর নামাজ শেষে মুসল্লীরা বিক্ষোভ করেছে। পরে আমরা এসে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাই।
হামলা, আগুন বা ভাংচুরের ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত ছিলনা। যারা ছিল তারা কারা আমরা আসলে জানিনা। তবে মামলা ও আটক এবং হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত এ বিষয়ে জানতে জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন দিলেও তারা রিসিভ না করে বারবারই কেটে দেন।
এএজেড