দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি
‘সবজি-ভাতই জোঁটে না গরু-খাসি জুঁটবে কোন ভাগ্যে’
আজিজুল হক (৬১)। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী। দিন মজুরির সামান্য আয় দিয়ে ৪ সদস্যের সংসারে দুই বেলা দু-মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে কোন রকমেই দিন পাড় করছেন আজিজুল হক। এদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও আয় বাড়েনি আজিজুল হকের। সামান্য আয়ে সবজি ভাতই জোঁটে না সেখানে গরু-খাসিসহ মুরগির মাংস জুঁটবে কোন ভাগ্যে-ফুলবাড়ী বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা দিনমজুর আজিজুল হক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এভাবেই নিজের হতাশা প্রকাশ করলেন।
জানা গেছে, এই দিনমজুরের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের রামপ্রসাদ এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। অনেক কষ্টে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ছেলেদেরও বিয়ে দিয়েছেন। তবে বিয়ের পরপরই দুই ছেলে আলাদা সংসার গড়েছে। ছেলেদের আলাদা সংসার থাকলেও দুই নাতনির পড়ালেখাসহ ভরণ-পোষনের সব খরচ বহন করতে হয় দিনমজুর আজিজুল হকের। এত দিন কষ্ট হলেও স্ত্রী ও দুই নাতনিসহ চার সংসার চললেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াসহ গত দেড় বছর ধরে স্ত্রী অসুস্থ থাকায় সংসার চালানো নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন তিনি। স্ত্রী রশিদা বেগম স্ট্রোক করায় ঠিকমতো হাটাচলা করতে পারছেন না। কোন রকমে লাঠি ভর করে হাটাচলা করেন। আজিজুলের দেড় বিঘা ফসলি জমি থাকলেও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৩ লাখ টাকা বন্ধক রেখেছেন। এখন তার সংসার চলে দিন মজুরির ৩০০ টাকায়।
দিনমজুর আজিজুল হক জানান, সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজিসহ ডাল-ভাত খাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে ফুলবাড়ী বাজারে ২৫০ গ্রাম করলা ৩০ টাকা,মরিচ ২৫০ গ্রাম ৩৫ টাকা, ১ কেজি আলু ৩০ টাকা, লবণ ১ কেজি ৪০ টাকা, বেগুন ৫০০ গ্রাম ১৫ টাকাসহ মোট ১৫০ টাকা কাচা বাজার করতে শেষ। তেল-চালতো আছে। সেখানে গরু-খাসিসহ মুরগির মাংস জুঁটবে কোন ভাগ্যে বাহে!
শুধু আজিজুল হকের মতো নিম্নবিত্তরাই নয় সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্মি হওয়ায় এ অঞ্চলের মধ্য আয়ের মানুষদের পক্ষেও সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু, পিয়াজ, ফুলকপি, সিম, টমোটোর দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকায় ক্রেতাদের মনে স্বস্তি আসলেও এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে মরিচ, করলা, রসুন ও আদা। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক-দুই সপ্তাহ আগেও ফুলবাড়ী, বালারহাট বাজারসহ উপজেলার অধিকাংশ হাট-বাজার গুলোতে কাঁচা মরিচ কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা,শুকনা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা, করলার কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, রসুনের কেজি ১২০ টাকা, পটলের কেজি ৮০ টাকা, শসার কেজি ২০ টাকা,বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা, গাজরের কেজি ২৫ টাকা,টমোটোর কেজি ২০ টাকা,সিমের কেজি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা,ফুলকপির কেজি ২০ টাকা,পিয়াজের কেজি ২৫ টাকা, আলুর কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা, বাঁধাকপির পিস ১০ থেকে ১৫ টাকা, হাঁসের ডিমের হালি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা,মুড়গির ডিমের হালি ৭০ থেকে ৮০ টাকা,পল্ট্রির ডিমের হালি ৪৫ টাকা, চাল ৫৬ থেকে ৪২ টাকা, সোলাবুট ১০০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকতে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন ক্রেতারা।
ফুলবাড়ী বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহালম মিয়া ও জাঙ্গাহীর হোসেন জানান, বাজারে কাঁচা মরিচ, করলা ও পটলের আমদানি কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে আলু, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকের দাম স্বাভাবিক আছে। আমদানি বৃদ্ধি পেলে মরিচ ও করলাসহ সব ধরনের সবজির দাম কমে যাবে বলে জানান এই দুই ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, কোনো ব্যবসায়ী যদি বাজারে কাঁচা মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়ার অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি ঈদের আগেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে।
এসআইএইচ