দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বিপাকে বাবা-মা

একই পরিবারের মানসিক, শারীরিক ও বাক-প্রতিবন্ধী সন্তান আদিয়া হোমেরা মরিয়ম (১১) ও সাবিক হাসান (৪) কে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে গরীব-অসহায় বাবা-মা। দুই সন্তানই জন্ম থেকে মানসিক, শারিরিক ও বাক-প্রতিবন্ধী হওয়ায় চরম দুর্দিন পার করছেন ওই পরিবারটি। দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের দুই হাতের কুনই ও দুই পায়ের আঁকা-বাঁকাসহ চিকন হওয়ায় পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করছে দুই শিশু। ফলে ২৪ ঘণ্টায় বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় তাদের। চোখের সামনে দুই সন্তানের এই করুণ পরিনিতি দেখে অসহায় মা প্রায় সময় বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অভাবের কারণে দুই সন্তানের মুখে ভালো কিছু খাবার তুলে দিতে না পারার কষ্টটাও নাড়া দেয় পরিবারটিকেও। ফলে গরীব বাবা-মায়ের এই দুই সন্তানকে যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিবন্ধী দুই শিশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম বালাতাড়ি গ্রামের রড-মিস্ত্রী আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী গৃহিনী শাহিদা বেগম দম্পতির সন্তান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দরিদ্র রড মিস্ত্রী আমিনুল ইসলামের নেই কোনো ফসলি জমি। বাবার দেওয়া মাত্র ৮ শতক জমিতে বসতভিটা। আমিনুল ইসলাম জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রড-মিস্ত্রীর কাজ করে ৩৫০-৪০০ টাকা আয় করেন। সেই আয় দিয়ে ঢাকায় নিজের জীবন চলার পাশাপাশি বাড়িতে স্ত্রীসহ দুই প্রতিবন্ধী শিশুটিকে নিয়ে চরম হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। ৪ বছর আগে বড় মেয়ে মরিয়মের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রতিবন্ধী ভাতা করেন। একই ভাবে ঘুরে দুই মাস আগে ছোট ছেলেরও প্রতিবন্ধী ভাতা করেছেন। সংসারে আয় বলে দুই সন্তানের ভাতার টাকা ও রড-মিস্ত্রীর সামান্য আয়ে অতি কষ্টে ৪ সদস্যের সংসার খেয়ে না খেয়ে চললেও প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের জন্য হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের। রড-মিস্ত্রী আমিনুল ইসলামের কাজ জুটলে দুই বেলা খাবার জোটে আর কাজ না জুটলে থাকতে অনাহারে। এভাবেই অতিকষ্টে দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন পরিবারটি। অসহায় এই পিতার পক্ষে দুই সন্তানের জন্য হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার স্বামর্থ্য না থাকায় সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সন্তানের জন্য হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন।
বাবা আমিনুল ইসলাম ও মা সাহিদা বেগম জানান, জন্মের পর থেকে দুই সন্তানের চিকিৎসার পেছনে আমরা অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছি। কিন্তু সুস্থ করতে পারেনি বাহে ! গরীব সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। সেখানে দুই সন্তানের ভরণপোষন ব্যয়ভার মিটিয়ে ছেলে-মেয়ের জন্য হুইল চেয়ার কেনা আমাদের কাছে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। কেউ যদি আমাদের এই অসহায় দুই সন্তানের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করত তাহলে সন্তানের কষ্টটা দূর হতো বাহে।
এ বিষয়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, পরিবারটি খুবই অসহায়। এক পরিবারে দুই সন্তান প্রতিবন্ধী থাকাটা খুবই বেদনাদায়ক। আমরা পরিষদ থেকে তাদের দুই সন্তানের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। পরিষদ থেকে হুইল চেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তারপরেও চেষ্টা করে দেখব।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মানসিক, শারিরিক ও বাক-প্রতিবন্ধী ওই দুই শিশুর জন্য হুইল চেয়ার দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এসআইএইচ
