জিনের পুতুলে প্রতারণা, অভিযোগেও মিলছে না প্রতিকার

জিনের সোনার পুতুল ও রুপার টাকা দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে একটি চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশকে জানিয়েও এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এদিকে অভিযোগের ৮ দিন পর রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ ইকবাল ও সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় নয়, তা ছাড়া এ ঘটনার কোনো সাক্ষী ও প্রমাণ নেই। এ কারণে তারা মামলাটি নিতে পারছেন না।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী নাজমা বেগম (ছুটুনিবুড়ি) একই উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মহারাজাহাট এলাকার মোজাফ্ফর রহমানের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাতে মোজাফ্ফর দম্পতি নাজমা বেগমের বাড়িতে গেলে নাজমা তাদের জানায়, তার ঘরে ‘জিনের পুতুল’সহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রয়েছে। তবে এগুলো মাটি থেকে তুলতে গেলে জিনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ মসজিদে ৪ লাখ টাকা দান করতে হবে। আর এসব টাকা মোজাফ্ফরের কাছ থেকে ধার চান নাজমা বেগম। পুতুল বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে এই মর্মে মোজাফ্ফর আড়াই লাখ টাকা নাজমাকে দেন। টাকা পেয়ে মোজাফ্ফরে দম্পতিকে বাড়িতে রেখে জিনের পুতুল আনতে গেলে তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে নাজমাসহ ৮ জনকে আসামি করে রানীশংকৈল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মোজাফ্ফর।
নাজমা বেগমের প্রতারণার জালে ধরা পড়েন একই উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের শাহানাবাদ এলাকার রশিদুল ইসলাম। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাকেও নাজমা জিনের পুতুলের কথা বলে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। একইভাবে প্রতারণার শিকার হন উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের ভম্বল বানিয়া। তার কাছে জিনের পুতুলের স্বর্ণ বিক্রি করবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে এক লাখ ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন নাজমা বেগম। পরে টাকা চাইলে ভম্বল বানিয়াকে ভয়ভীতি দেখায় নাজমা গ্যাং।
স্থানীয়রা জানান, নাজমা বেগমের (ছুটুনিবুড়ি) একটি বিশাল গ্যাং রয়েছে। তারা মাঝেমধ্যেই মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করছে। এদের বিরুদ্ধে শক্তিশালীভাবে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা দিনের পর দিন আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠছে। আর পুলিশেই বা কেন মামলা ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে টালবাহানা করছে। ঘটনার ৮ দিনেও কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। এর রহস্য কী? প্রতারকদের বিরুদ্ধে এখনই শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ভুক্তভোগী মোজাফ্ফর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নাজমা বেগমের কাছে যারা প্রতারিত হয়েছে তারা স্বর্ণের পুতুল ও রুপার টাকা নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তাকে সরল মনে টাকা ধার দিয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। এভাবে প্রতারিত হব ভাবতে পারিনি। ঘটনার পরদিন শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে যখন ঘটনাস্থলে যাই সেখানকার লোকজন বলল নাজমার একটি গ্রুপ আছে তারা দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণামূলক কাজ করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা করে কোনো লাভ নেই। এরা শক্তিশালী চক্র।
হৃদয় নামে এক যুবক অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি। নাজমার একটি প্রতারক চক্র রয়েছে। তারা জিনের কথা বলে অনেক মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা এতটাই শক্তিশালী যে ভয়ে কেউ কথা বলতে চাই না। ইতোমধ্যে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছে তারা রাণীশংকৈল থানায় অভিযোগ দেয়। পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে ভুক্তভোগীদের পীরগঞ্জ থানায় মামলা করতে বলেন। পুলিশ যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হয়রানি করায় তাহলে তো অপরাধীরা আরও সাহস পেয়ে বসবে।
ঠাকুরগাঁও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান বলেন, মোজাফ্ফর রহমানের অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো অবস্থাতেই অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
এসজি
