ঠাকুরগাঁওয়ে আমনের ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা
ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কৃষকের বাড়ির উঠোনে এখন শুধু ধান আর ধান। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের সোনালি রঙের পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাধে নিয়ে আবার কেউ ভ্যানে বা গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়িতে নিয়ে এসব ধান মাড়াই ও পরিষ্কার করার পর ধানগুলোকে সিদ্ধ করে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আরও ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে আমনের। এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। আর হেক্টর প্রতি গড় চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার থেকে আবাদ ও ফলন দুটিই বেশি।
১০ বিঘা (৫০ শতকে এক বিঘা) জমিতে আমন ধান চাষ করেন সদর উপজেলার কৃষক মুনসুর আলী। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবার সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি হলেও গত বছরের থেকে এবার ধানে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে ২-৩ বার। আর অন্যান্য বার পোকা-মাকড় বেশি হওয়ায় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছিল প্রায় ৫-৬ বার। এবার ধানে পোকা-মাকড় কম হওয়ায় স্প্রে কম করতে হয়েছে এবং ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। আমার এক বিঘা জমিতে এবার প্রায় ৩৫-৩৬ মণ ধান হয়েছে আর খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া এক বিঘার জমির ধান বিক্রি করেছি ৩৬ হাজার টাকায়। এতে এবার ধানের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকরা বেশ লাভবান।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গড়িয়ালী গ্রামের আব্দুর জব্বার বলেন, ‘আমি ৩৩ শতকে বিঘার ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান করেছি। এতে আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৮-১০ হাজারের মতো। এর মধ্যে প্রায় ৭ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রি করেছি। এক বিঘায় ফলন হয়েছে ২০ মণ করে। আর বিঘা প্রতি ২৪ হাজার টাকার ধান বিক্রি করেছি বস্তা প্রতি ২৪০০ টাকায়। তবে ধানের দাম পেয়ে খুশি হলেও সরকার যদি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমাতো তাহলে আমরা কৃষকরা আরো বেশি খুশি হতাম।
এদিকে নাজমুল হক নামের আরেক কৃষক বলেন, এবার আমন মৌসুমে রাসায়নিক সার সময় মতো টাকা দিয়েও পাইনি। কীটনাশকের দামও অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। তারপরেও আল্লাহর রহমতে এবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে দামও মোটামুটি আছে।
এ ছাড়াও পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক বাদল হোসেন বলেন, আমন রোপনের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে ধান লাগিয়ে ছিলাম। আর তখন ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। এতে মনে করেছিলাম-এবার আর ধান তেমন ভালো হবে না। প্রথমদিকে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হলেও শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আল্লাহর রহমতে ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে আগাম জাতের হাইব্রিড ধানিগোল্ড ধানের ৭৫ কেজির বস্তা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩৫০ ও সুমন স্বর্ণ জাতের ধানের বস্তা ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকা করে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে এর থেকে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান সদর উপজেলার ধান-চালের ব্যবসায়ী মো. আবুল কাশেম।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধান-চালের ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী বলেন, গতবারে ৮০ কেজির এক বস্তা ধানের দাম ছিল ২০০০ টাকা। এবার বস্তা প্রতি ধানের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে আমন আবাদ বেশি ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার থেকে উৎপাদনও বেশি অর্জিত হবে। বর্তমানে ধানের যে মূল্য এমন বাজার মূল্য থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে।
এসআইএইচ