‘হামরা জানি না গাড়ি বন্ধ আছে’

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশের দু'দিন আগে হঠাৎ ধর্মঘটের ডাক দেয় রংপুর মোটর মালিক সমিতি। ধর্মঘটের কারণে জেলার সঙ্গে সারা দেশের সব পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
বিএনপির নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর রংপুরে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করতে ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ব্যাহত করতে এ ধরনের কার্যক্রম দিয়েছেন তারা। তবে ধর্মঘটসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী উপস্থিত হবেন বলে আশাবাদী তারা।
জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে যান চলাচল এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম রুটে প্রশাসনিক হয়রানির প্রতিবাদে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার জন্য ডাকা ধর্মঘটের কারণে রংপুর জেলার সব রুটের বাস-মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে রংপুরের সঙ্গে সারা দেশের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই ভেঙে ভেঙে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকেই আবার গন্তব্যে যেতে না পেরে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।
পরিবহন শ্রমিক মোসেদ আলী বলেন, রংপুরে ধর্মঘট থাকায় আমাদের দু'দিনের আয় বন্ধ থাকবে। কারণ বাস না চললে মালিকপক্ষ আমাদের বেতন দেয় না। এতে সংসার চালাতে হবে টানাপোড়েনের মধ্যে। আমরা কখনোই চাই না বাস বন্ধ থাকুক। বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা। কিন্তু বাস বন্ধ থাকলে সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও কষ্ট হয়।
রংপুর বাস টার্মিনালে আসা রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ হাসান বলেন, আমি বগুড়া যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। কিন্তু এসে দেখছি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। রংপুর থেকে কোনো বাস চলাচল করতে পারছে না। এখন কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।
রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে মেয়েকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটে যেতে হবে জিহাদুল রহমানের। তিনি বলেন, হামরা তো জানি না গাড়ি বন্ধ আছে। টার্মিনালোত আসি শোনোচি গাড়ি নাকি কোনোটে যাবার নয়। হামরা অ্যালা অটোত করি রাজার হাট যামো।
যানবাহন ধর্মঘটের বিষয়টি চিন্তা করে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী রংপুরে এসেছেন। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীদের গণসমাবেশে আসতে বাধা দিতেই এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনো নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এজন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা কয়েকটি সংগঠন সভা করে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুরের সব রুটে পরিবহন ধর্মঘটের আহ্বান করেছি।
এসজি
